স্বামীর লাশ বারান্দায় স্ত্রী-ছেলের লাশ ঘরে-জামালপুরে তিনজনকে নৃশংসভাবে হত্যা

জামালপুর শহরের চালাপাড়ায় একই পরিবারের ৩ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ১১টার দিকে পুলিশ নিহত স্বামী-স্ত্রী ও তাদের দুই বছর বয়সী সন্তানের লাশ উদ্ধার করেছে। বাসার বারান্দায় গৃহকর্তা ফেরদৌস আলমের (৪৫) গলাকাটা লাশ, ঘরে গৃহকর্ত্রী বন্যা খাতুন ওরফে রত্নার (২০) ঝুলন্ত লাশ এবং শিশু প্রণয়ের লাশ শোবার ঘরে খাটের ওপর পাওয়া যায়।


পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নিহত ফেরদৌস আলমের প্রথম স্ত্রীর বড় ছেলে কলেজছাত্র নিপুণকে গ্রেফতার করেছে। নিহত বন্যা খাতুনের মা মাবিয়া বেগম বাদী হয়ে জামালপুর সদর
থানায় মামলা করেছেন। পুলিশের ধারণা, পারিবারিক কলহের জের ধরে হত্যাকা টি ঘটেছে।
পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চালাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফেরদৌস আলম ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে অডিটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি কর্মস্থল থেকে জামালপুরের বাসায় মাঝেমধ্যে আসা-যাওয়া করতেন। ফেরদৌস আলম ৩টি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি গ্রামের বাড়িতে থাকেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে। চার বছর আগে ফেরদৌস আলম শেরপুর শহরের বাঘরাকশা এলাকার মাসুদ মিয়ার মেয়ে বন্যা খাতুনকে বিয়ে করেন। তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গেই তিনি জামালপুরে থাকতেন। প্রথম স্ত্রীর বড় ছেলে নিপুণও সেখানে থাকতেন।
নিহত বন্যার মা সমকালকে বলেন, ঘটনার আগের দিন শনিবার রাত থেকে জামাই ও মেয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে তারা চিন্তিত হয়ে পড়েন। রোববার সকাল ১০টার দিকে তিনি শেরপুর থেকে জামালপুরে মেয়ের বাসায় আসেন। বাসার গেটে এসে অনেক ডাকাডাকি করেও ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে গেট টপকে ভেতরে যান। বারান্দার পর্দা সরাতেই তিনি মেঝেতে প্যান্ট-শার্ট-জুতা-মোজা পরিহিত ফেরদৌসের জবাই করা লাশ দেখে চিৎকার দেন। এ সময় আশপাশের লোকজন এসে ঘরের দরজা খুলে বন্যার ঝুলন্ত লাশ ও দুই বছরের শিশু প্রণয়কে বিছানায় মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
খবর পেয়ে পুলিশ ও র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থ্থলে যান। এ সময় শত শত কৌতূহলী মানুষ সেখানে ভিড় জমায়। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। সদর থানার ওসি মজিবুর রহমান মজুমদার সমকালকে বলেন, ঘটনার রাতে ফেরদৌস আলমের প্রথম পক্ষের ছেলে নিপুণ বাসায় ছিল না। রোববার দুপুর ১২টার দিকে সে ঘটনাস্থলে এলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপরাধ) এসএম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান, জেলা পুলিশ সুপার আবদুুর রাজ্জাক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দিন, র‌্যাব-১২ জামালপুরের সহকারী পরিচালক মোঃ কামাল হোসেন, পুলিশের সদর সার্কেলের এএসপি সাইফুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পুলিশ সুপার সমকালকে বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে হত্যাকা টি ঘটতে পারে। গ্রেফতার নিপুণের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। শিগগিরই ঘটনার ক্লু উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতার সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

No comments

Powered by Blogger.