দন্তের বাহাদুরি

লের অতলে বাস করে নানা কিসিমের বিচিত্র প্রাণী। এসবের মধ্যে যেমন আছে গোবেচারা ধরনের প্রাণী, তেমনি আছে হিংস্র প্রজাতির। একেক প্রাণীর চলাফেরা, আচার-আচরণ আবার একেক ধরনের। যা-ই হোক, জলের সবচেয়ে বড় প্রাণীটির নাম তিমি। এটির রয়েছে অনেক প্রজাতি। বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে একটির নাম নারওয়াল। এ প্রাণীটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সুমেরু অঞ্চলে।


নারওয়াল দাঁতাল তিমি নামেও পরিচিত। কারণ, প্রাণীটির মুখের সামনে আছে লম্বা শুঁড়ের মতো বিশাল দাঁত। প্রায় নয় ফুট লম্বা নারওয়ালের দাঁত যুগ যুগ ধরে মানুষকে অবাক করেছে, সৃষ্টি করেছে রহস্য। এভাবেই প্রাণীটি ক্রমে পরিণত হয়েছে কিংবদন্তিতে। বিশাল দাঁতের কারণে অনেকেই নারওয়ালকে জাদুকরী শক্তির অধিকারী বলে মনে করেন।
প্রাচীনকালের কিংবদন্তিতুল্য প্রাণী ইউকর্নের [এক শিশুর কাল্পনিক ঘোড়া] শিং ভেবে এক সময় প্রতারকচক্র নারওয়ালের দাঁত উচ্চমূল্যে বিক্রি করত। ঐশ্বরিক শক্তি আছে ভেবেই ষোড়শ শতকের দিকে রানী এলিজাবেথ সে সময়ের দশ হাজার পাউন্ডে একটি নারওয়ালের দাঁত সংগ্রহ করেছিলেন। অস্ট্রিয়ার পঞ্চম কাইজার কার্লও দুটি নারওয়ালের দাঁত কিনতে ব্যয় করেছিলেন জাতীয় রাজস্বের বড় অংশ!
সুমেরু অঞ্চলের শান্ত ও গোবেচারা ধরনের বিশাল দাঁতওয়ালা এ তিমিটি দাঁত দিয়ে আসলে কী করে, এ তথ্য জানতে বহুকাল আগে থেকেই বিজ্ঞানীরা নিরন্তর গবেষণা করে যাচ্ছেন। একেক সময় তারা একেক ধরনের তথ্যও সরবরাহ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে সবাই জানত, নারওয়ালের বিশাল দাঁত ব্যবহৃত হতো শত্রু তাড়ানো, শিকার ধরা, বিশাল বিশাল বরফের চাঁই ভাঙা, জাহাজ কিংবা নৌকার তলা ফুটো করে দেওয়া, শব্দ তৈরি ইত্যাদি কাজে। কিন্তু গবেষকরা এখন বলছেন ভিন্ন কথা।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজির একদল গবেষক ইলেকট্রনিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে প্রাণীটির দাঁত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন, প্রায় এক কোটি স্নায়ুনালী দাঁতের গোড়া থেকে শুরু করে বাইরের দিকে ছড়িয়ে আছে। অতি সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল এ স্নায়ুগুলোর সমন্বয়ে গঠিত দাঁত আসলে অনুভূতিপ্রবণ একটি অঙ্গ বা শুঁড়। এর সাহায্যে নারওয়াল আশপাশের তাপমাত্রা, চাপ, ঘ্রাণ বা রঙ শনাক্ত করে থাকে। পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, নারওয়াল তার বিশাল দাঁত মোটেও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে না। এ হিসেবে ধরেই নেওয়া যায়, নারওয়ালের দাঁত হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম একটি অনুভূতি ইন্দ্রিয় বা সেন্সরি অর্গান।
আশরাফুল আলম মিলন

No comments

Powered by Blogger.