মনমোহনকে খালেদার চিঠি-বাঁধ নির্মাণ হলে ৩ কোটি মানুষ হুমকিতে পড়বে

টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের আগে যৌথ জরিপের দাবি জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংকে চিঠি দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সোমবার এই চিঠি নয়াদিলি্লতে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বুধবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানিয়েছেন।


বিরোধীদলীয় নেতা চিঠিতে বলেছেন, 'আমরা মনে করি, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের আগে যৌথ জরিপ হওয়া প্রয়োজন। দুই দেশের মধ্যে আলোচনা করে এ বিষয়ে সমাধানে পেঁৗছাতে হবে। এখনো সময় আছে, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের আগে যৌথ জরিপ করুন।' চিঠিতে আরো বলা হয়, 'টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ হলে কেবল ভারত নয়, বাংলাদেশে মেঘনা অববাহিকার তিন কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।'
টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে ভারতের জবাব আসার পরদিনই চিঠি পাঠানোর কথা জানাল বিএনপি। প্রসঙ্গত, বরাক নদের ওপর টিপাইমুখে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গে মণিপুর রাজ্য সরকারের বিনিয়োগ চুক্তির খবর শুক্রবার বার্তা সংস্থা বিবিসি প্রকাশ করে। বিষয়টি জানার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর ব্যাখ্যা চেয়ে নয়াদিলি্লকে চিঠি দেয়। মঙ্গলবার এর জবাবে দিলি্লর পক্ষ থেকে বলা হয়, 'টিপাইমুখে বাঁধ হলেও পানি প্রত্যাহার হবে না। ফলে বাংলাদেশ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।' এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, 'যৌথ নদীর ওপর কোনো স্থাপনা করার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ভারতের উচিত ছিল বাংলাদেশকে জানানো।'
সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল ইসলাম আলমগীর
খালেদা জিয়ার চিঠি পাঠানোর তথ্য জানানোর পাশাপাশি টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে সরকারের 'নীরবতার' সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বাঁধ নির্মাণে চুক্তি হয়ে গেছে। তার পরও সরকার কোনো প্রতিবাদ জানায়নি। বিএনপি ইতিমধ্যে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সিলেটে বিএনপি আগামী ১ ডিসেম্বর হরতাল আহ্বান করেছে।
বাংলাদেশের ওয়াটার মডেলিংয়ের প্রতিবেদন তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, টিপাইমুখে বাঁধ হলে ওই (সিলেট) অঞ্চলের ২৫ শতাংশ হাওর-বাঁওড় সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাবে। লবণাক্ততার বিস্তার ঘটবে। শুরু হবে মরুকরণ প্রক্রিয়া। টিপাইমুখ প্রকল্প ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় হওয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে বাঁধ ভেঙে হঠাৎই সিলেট অঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
ফখরুল জানান, ঢাকায় মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন বাঁধ নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন। তখন যৌথ জরিপের কথা বলা হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন ভারত একতরফাভাবে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ করছে। একতরফাভাবে এটা করা সমীচীন হবে না বলে বিএনপি চেয়ারপারসন তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেছেন।
নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণেই টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে বিএনপি ধারাবাহিক আন্দোলন করবে। রোডমার্চ কর্মসূচিতে অন্য দাবির সঙ্গে এ বিষয়টিও যুক্ত হবে।
'দেশবিরোধী বক্তব্য দাতাদের বিচার হবে'
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, টিপাইমুখ নিয়ে যাঁরা দেশবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আগামীতে তাঁদের বিচার করা হবে। তিনি বলেন, সরকারের মন্ত্রীরা এমনভাবে কথা বলেন যে বুঝতে কষ্ট হয় তাঁরা বাংলাদেশের নাকি ভারতের মন্ত্রী। যাঁরা বলছেন টিপাইমুখ বাঁধে ক্ষতি হবে না তাঁরা বাংলাদেশের হলে দেশদ্রোহী কাজ করছেন। যাঁরা বিরোধিতা করতে পারছেন না, তাঁরা দেশের স্বার্থরক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন। একদিন তাঁদের দেশদ্রোহী হিসেবে বিচার করা হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবে গতকাল এক গোলটেবিল আলোচনায় ড. মোশাররফ এসব কথা বলেন। 'ট্রানজিট সমস্যা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতি, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, পানি সমস্যা এবং দেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সমস্যা' শীর্ষক এই গোলটেবিলের আয়োজন করে জিয়া কালচারাল ফাউন্ডেশন।
ড. মোশাররফ বলেন, সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে ভারত ট্রানজিটের নামে করিডরের আবদার পূরণ করে নিয়েছে। আল্লাহ সুযোগ দিলে এটা রিভিউ করা হবে। এই করিডর বাংলাদেশের স্বার্থে না হলে বাতিল করা হবে। তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে শেয়ারবাজার থেকেই লুট করে নেওয়া টাকা হালাল করার সুযোগ দিয়েছেন।
সংগঠনের সভাপতি শাহ নুরুল কবির শাহীনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মনি, অভিনেতা অমিত হাসান প্রমুখ।
'বিরোধী নেতার প্রস্তাব গ্রহণ করুন, নইলে...'
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ প্রতিরোধে বিরোধীদলীয় নেতার সহযোগিতার প্রস্তাব গ্রহণ করে অবিলম্বে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত। সরকার তা না করলে দেশ ও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধের দাবিতে জাসাস ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহারের বিরোধিতা করে নোমান বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সরকার সেনাবাহিনী না দেওয়ায় যে সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে সে বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন শুধু বয়কট নয়, প্রতিরোধ করা হবে।
জাহাঙ্গীর আলম সিকদারের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, জাসাস সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক মনির খান প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.