দীপু মনি কেটে পড়লেন, তেমন কিছু বলেননি সচিবও

বিতর্কিত টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই সংবাদ সম্মেলনস্থল ছেড়ে গেলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পরে পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েসও এ বিষয়ে ভারতের আশ্বাসের ওপর আস্থা রাখার কথা ছাড়া তেমন কিছু বলতে পারেননি।টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে চুক্তির কথা নয়াদিলি্লর বাংলাদেশ হাইকমিশন সরকারকে জানিয়ে থাকলে কবে জানিয়েছে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, 'এটি দেখে বলতে হবে।'


সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার আগে চুক্তির কথা বাংলাদেশ জানত কি না, সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এ প্রশ্নের উত্তরসহ আরো তথ্য আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে আপনারা জানবেন।'
প্রথম 'বিশ্ব বিপণন ব্যবস্থাপনা সম্মেলন' আয়োজনের ঘোষণা দেওয়ার জন্য গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ থাকায় বিতর্কিত টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে জানার প্রতীক্ষায় ছিলেন সাংবাদিকরা। কিন্তু বিপণন ব্যবস্থাপনা সম্মেলন বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে পররাষ্ট্রসচিবকে সংবাদ সম্মেলন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলে যেতে চাইলে সাংবাদিকরা হতাশা প্রকাশ করেন। ওই সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'জানি, আপনাদের অনেক প্রশ্ন আছে। আমি আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ ব্যাপারে আপনাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করব।' এরপর সচিবালয়ে অন্য একটি বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা বলে সম্মেলনস্থল ছেড়ে যান মন্ত্রী।
গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু (টিপাইমুখ) পাশ কাটিয়ে বিপণন ব্যবস্থাপনা সম্মেলন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাংবাদিকরাও চলে যেতে চান। ওই সময় বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের মহাপরিচালক শামীম আহসান বলেন, সংবাদ সম্মেলনের বিষয় আগেই জানানো হয়েছে। এ নিয়ে অস্পষ্টতার কিছু নেই। পরে বিপণন সম্মেলন নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন আহ্বান করেন পররাষ্ট্রসচিব।
অন্য কোনো অপশনের কথা ভাবছি না : সাংবাদিকরা জানতে চান, সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশ যেভাবে আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতে গেছে, সেভাবে অভিন্ন নদ-নদীর পানিবণ্টনের বিষয়েও তৃতীয় পক্ষের কাছে বা আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ যাবে কি না? জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, 'বাংলাদেশ প্রবলভাবে বিশ্বাস করে, দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যার সমাধান সম্ভব এবং আমরা সমাধানের পথে আছি। অন্য কোনো অপশনের (উপায়) কথা আমরা ভাবছি না।'
ভারতের টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে মিজারুল কায়েস বলেন, 'বিনিয়োগ চুক্তি (প্রোমোটার অ্যাগ্রিমেন্ট) ও অন্যান্য অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। আমাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা হবে না বলে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতেও ওই আশ্বাস স্থান পেয়েছে।'
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, 'বাংলাদেশ বলেছে, অভিন্ন নদ-নদীতে কোনো অবকাঠামো বা স্থাপনা নির্মাণের আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে।'
ভারতের আশ্বাস সত্ত্বেও টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে চুক্তি সই এবং মনমোহনের সফরকালে তিস্তা চুক্তি না হওয়ার প্রসঙ্গ সাংবাদিকরা তুললে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, তিস্তা নিয়ে চুক্তি হয়নি সত্য। কিন্তু এর পরও ওই সফর মূল্যায়ন করলে দেখা যাবে তা অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল।
'আমরা ভারতের আশ্বাসে আস্থাশীল' : টিপাইমুখ নিয়ে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বাংলাদেশ ভারতকে যৌথ সমীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছে কি না_জানতে চাইলে মিজারুল কায়েস বলেন, '২০০৯ সালে সংসদীয় প্রতিনিধিদলের ভারত সফরকালে টিপাইমুখ প্রকল্প সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। ভারত বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু না করার আশ্বাস দিয়েছে। এর পরও আমরা স্বচ্ছতার জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়ার আগেই আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে ও স্বচ্ছতার সঙ্গে তথ্য দিতে বলেছি।'
ভারতের আশ্বাসে বাংলাদেশের আস্থা আছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, 'আমরা ভারতের আশ্বাসে আস্থাশীল। কারণ সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আশ্বাস এসেছে।' সাংবাদিকরা আবারও প্রত্যয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'অ্যাসুরেন্স (আশ্বাস)।'
যোগাযোগটা ঘনিষ্ঠই : ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে বলে পররাষ্ট্রসচিব জানালে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, এ কেমন ঘনিষ্ঠতা যে আশ্বাস দিয়েও ক্ষতিকর চুক্তির আগে জানায় না আর ভারতের কাছ থেকে তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ দুদিনেও পায় না? জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, 'যোগাযোগটা ঘনিষ্ঠই। যোগাযোগ মানে কিপ ইন টাচ। আলোচনার মধ্যে যা ঘটে, তা ফর্মুলেট করার আগ পর্যন্ত না জানানোর রেজিস্ট্যান্সটুকু তো আমাদের রাখতে হবে।'
টিপাইমুখ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার চিঠি পাঠানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, প্রশ্নটি তাঁর জন্য বিব্রতকর।

No comments

Powered by Blogger.