টিপাইমুখ নিয়ে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হতে দেব না : হাসিনা

টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য ভারতে বিশেষ প্রতিনিধি পাঠানো হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে কোনো দেশের একক সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হতে দেব না। বাঁধ নিয়ে সরকার ইতিমধ্যে ভারতের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি লিখেছে। টিপাইমুখ নিয়ে ভারত কোনো সার্ভে করলে তা বাংলাদেশকে নিয়েই করতে হবে।'


জাতীয় সংসদে গতকাল বুধবার প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রশ্নটি করেন একমাত্র স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. ফজলুল আজিম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিভাবে দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে হয়, তা আমরা জানি।'
শেখ হাসিনা এ ছাড়া বিগত প্রধানমন্ত্রীর দুই পুত্রের পাচারকৃত টাকার মধ্যে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৬১৩ টাকা ফেরত এনে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করার কথা জানান। তিনি ওই অর্থে দুর্নীতিবিরোধী প্রচার চালানো এবং দেশের সাতটি বিভাগে দুর্নীতিবিরোধী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তাব বিবেচনা করার আশ্বাস দেন।
টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ নিয়ে সরকারের সমালোচনায় বিএনপি যা বলছে তার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি এক কথা বলে, আর বিরোধী দলে গেলে অন্য কথা বলে। বিএনপি জোট সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রী বলেছিলেন টিপাইমুখ বাঁধে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না। আর এখন তাঁরা এর বিরোধিতা করছেন। অথচ বর্তমান অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে তখন টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী আন্দোলন হয়েছিল।'
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার চিঠি পাঠানোর প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, 'কী জানতে চেয়ে চিঠি লিখেছেন জানি না। বিএনপির মতো দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি করে না আওয়ামী লীগ।'
স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে আওয়ামী লীগের নাজমা আকতারের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তদন্তকাজ শেষ হলে দেশবাসী জানতে পারবে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোসহ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মোট কত টাকা বিদেশে পাচার করা হয়। তাদের আমলে বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে মানিলন্ডারিং আইনসহ অন্যান্য বিধি এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত বিধান সংশোধন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সন্দেহজনক লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখছে। এরইমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট ১০টি দেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের সঙ্গে সমঝোতায় স্বাক্ষর করেছে।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে ফজলুল আজিমের করা এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, 'বর্তমান সরকারের আমলেই তিস্তা চুক্তি হবে। বিষয়টি ধরেছি যখন করেই ফেলব।' তিনি পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, 'একুশ বছর তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না, সে সময় এই চুক্তি হয়নি কেন? ক্ষমতায় বসে তারা (বিএনপি) কি করেছে?' নিজের প্রশ্নের জবাব নিজেই দেন শেখ হাসিনা_'তাঁরা পদলেহন করেছেন। আমরা তো তা পারি না।'
ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি নিয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত দিন বিএনপি বলে এসেছে এই চুক্তি গোলামির চুক্তি। আর এখন সেই চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছে। 'বর্তমান সরকার বসে নেই' মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'আমরা অভিন্ন নদী নিয়ে আলোচনা করছি। তিস্তা পানি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছি। নেপালের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তি করেছি। দুই দেশের সীমানা চুক্তির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার জন্য কিছু জায়গাও করেছি।'
জাতীয় পার্টির এ কে এম মাইদুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চুক্তি নিয়ে চীনের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তা বাস্তবায়িত হবেই। তবে নদী ড্রেজিং করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্ষাকালে অনেক পানি জমে নদীতে। পানির সমস্যা নেই। এই পানি ধরে রাখতে নদীতে ড্রেজিং করতে হবে।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার কৃষকের উৎপাদিত মূল্য নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য আরো বেশি হলে ভোক্তা পর্যায়েও দামও বেড়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এজন্য কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের ফরিদুল হক খানের লিখিত প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এরইমধ্যে ৫২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। আরো ৪৭টি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এ ছাড়া ১৮টি নতুন প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায়। একই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, চলতি অর্থবছরে সার ও অন্যান্য কৃষি কার্যক্রমে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মেহের আফরোজের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আগামী বছরের মার্চ মাস নাগাদ মেট্রোরেল নির্মাণের বিষয়ে জাপান সরকারের সঙ্গে লোন নেগোসিয়েশনের কাজ শেষ হবে। 'বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যেই মেট্রোরেলের কাজ শুরু করে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ শেষ করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।'
আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদারের এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ভারতের বাজারে বাংলাদেশের ৪৬টি পোশাকজাত পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুযোগ পাওয়ায় সম্প্রতি রপ্তানির সীমা আট মিলিয়ন পিস থেকে ১০ মিলিয়ন পিসে উন্নীত হয়েছে। এ বি এম আবুল কাশেমের তথ্যপ্রযুক্তিসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) ল্যাপটপ প্ল্যানটি প্রায় ২০০ কোটি টাকার। টেশিসের তৈরি ল্যাপটপ 'দোয়েল'-এর ওপর তেমন কোনো মুনাফা ধরা হয়নি। এর দাম জনগণের স্বার্থে সংযোজন খরচের কিছুটা নীচে ধরা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রসঙ্গে মো. রহমত আলীর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রিসাইলেন্স ফান্ড-এ (বিসিসিআরএফ) এখন পর্যন্ত ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১৫০ থেকে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
আওয়ামী লীগের মো. শফিকুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১১ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অ্যান্টি হোডিং আইন হালনাগাদ করায় যেকোনো ব্যবসায় সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব মুছে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.