স্মরণ- 'ডা. মিলনকে যেন না ভুলি' by পলাশ আহসান

২৭ নভেম্বর ১৯৯০। ডা. মিলন পরিচিত সবাইকে বারণ করেছিলেনম_'আজ ও-পথে কেউ যেয়ো না।' অথচ নিজেই গেলেন সে পথে। মৃত্যুর পথ। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল কলম-বিরতি। সকাল থেকে থমথমে ক্যাম্পাস। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ ও সরকার সমর্থকরা। থেমে থেমে চলছে গোলাগুলি। সকাল ১০টা কী সাড়ে ১০টা হবে। বিএমএর জরুরি সভায় যোগ দিতে হবে। তাই গোলাগুলির মধ্যেও তড়িঘড়ি করে রিকশা নিয়েছেলিন। যাবেন তখনকার পিজি হাসপাতালে। রিকশা হাকিম চত্বরের কাছে আসতেই পেছন থেকে এল ঘাতক বুলেট। বিদ্ধ হলেন মিলন। ততক্ষণে রণক্ষেত্র গোটা ক্যাম্পাস। যে যার মতো ছুটছে পড়িমরি।
আহত ডা. মিলনকে হাসপাতালে নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। অনেকক্ষণ রাস্তায় পড়ে থাকার পর যখন তাঁকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হলো ততক্ষণে সব শেষ। শরীরের সব রক্ত গড়িয়ে পড়েছে পিচঢালা পথে। শেষ হয়ে গেছে সব। সেই সঙ্গে শেষ হয়েছে একটি অধ্যায়, একটি স্বপ্ন, একটি মেধাবী ভবিষ্যৎ। এর মাত্র ৯ দিন পর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় স্বৈরাচার। জয় হয় গণতন্ত্রের। ২০ বছর পূর্ণ হচ্ছে ডা. মিলন হত্যাকাণ্ডের। অথচ বিচার হয়নি। ডা. মিলনের মা সেলিনা আখতার সাংবাদিকদের কাছে মিলন হত্যার পুনঃতদন্ত দাবি করেন। তাঁর ভাষ্য, এ হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত। ১৯৫৭ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় জন্ম হয় শামসুল আলম খান মিলনের। ১৯৭৩ সালে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৫ সালে নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। আর এমবিবিএস শেষ করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত একজন নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসক ছিলেন তিনি। কর্মরত ছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন আরো আগে থেকে। দেশের সব মানুষের কাছে চিকিৎসাসেবা সহজ করার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু সেই সময় স্বাস্থ্য খাত থেকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব তুলে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করে স্বৈরাচারী সরকার। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সারা দেশের চিকিৎসক সমাজ। শুরু হয় গণমুখী স্বাস্থ্যসেবা চালুর আন্দোলন। ডা. মিলন ছিলেন সেই আন্দোলনের প্রথম সারিতে। সে সময় তিনি ছিলেন বিএমএর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁদেরও দাবি মিলন হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত। বেছে বেছে কয়েকজনকে হত্যা করে আন্দোলন বন্ধ করতে চেয়েছিল স্বৈরাচার। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছিল। আর পুলিশ ক্যাম্পের পাশেই 'আড্ডা ক্যাম্প' বসিয়েছিল স্বৈরাচারের সহযোগী সন্ত্রাসীরা। আন্দোলনবিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো ওই দুটি ক্যাম্প থেকে। শহীদ মিলনের প্রাণঘাতী বুলেটটাও ওদিক দিয়েই এসেছিল। ওদিকে আসলে কারা ছিল, তা আজও পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত হয়নি। কাজেই মিলন হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তের দাবি খুবই যৌক্তিক। কিন্তু হতাশার কথা হচ্ছে, নভেম্বর এলেই এসব দাবি জোরালো হয়। মাস শেষ হতেই ফিকে হয়ে আসে সব। একসময় ভুলে যাই। আবার নভেম্বর এলেই মনে পড়ে ডা. মিলনের কথা। এভাবেই কেটেছে ২০টি বছর। এই সুযোগে ডা. মিলনের হত্যাকারীরা হাতে অনেক ক্ষমতা পেয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা চলে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু এটাই শেষ কথা নয়। চাইলে বা সদিচ্ছা থাকলে এ হত্যাকারীদের বিচার হতেই পারে।
============================
রাজনৈতিক আলোচনা- 'যার যা কাজ' by আতাউস সামাদ  নিবন্ধ- 'অবলা বলে কেন না-বলা থাকবে' by মোস্তফা হোসেইন  ইতিহাস- সিপাহি বিদ্রোহঃ সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে  আন্তর্জাতিক- 'কোরিয়া সীমান্তে তুলকালাম' by দাউদ ইসলাম  আন্তর্জাতিক- 'চেচনিয়ার ‘যুদ্ধবাজ ইমাম’ by মিজান মল্লিক  আন্তর্জাতিক- আমি স্বাধীনতা চাই না: রমজান কাদিরভ  সাহিত্যালোচনা- 'মৃত্যুশতবার্ষিকীর তলস্তয়' by আন্দালিব রাশদী  গল্পসল্প- 'দুঃখটাকে ভাগাভাগি করি' by মুহম্মদ জাফর ইকবাল  গল্প- 'দাদার দোকানে শূন্য দশক' by সালাহউদ্দিন  শিল্পি- 'সফিউদ্দিন আহমেদের সৃষ্টিসমগ্র-অশেষ আলোর আলোর আধার' by সৈয়দ আজিজুল হক  নিবন্ধ- 'সব শিল্পই যাবে প্রকৃতির কাছে। by খান মিজান  গল্পসল্প- 'কাউন্ট লিও তলস্তয়' by আন্দালিব রাশদী  আলোচনা- 'সেই আমি এই আমি' by আতিকুল হক চৌঁধুরী  ইতিহাস- 'কাউন্ট লিও তলস্তয়ের হৃদয়সংবেদী ডায়েরি' by দেবেশ রায়  স্মরণ- 'কাউন্ট লিও তলস্তয়ের মৃত্যু-শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি' by বেলাল চৌধুরী  ইতিহাস- 'বাংলায় সিপাহি বিদ্রোহ' by রিদওয়ান আক্রাম  শিল্প-অর্থনীতি 'এখন প্রয়োজন ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের' by সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ  রাজনৈতিক আলোচনা- 'গণতন্ত্র : চাইলেই ধরা দেয় না' by এমাজউদ্দীন আহমদ  আন্তর্জাতিক- 'কোরীয় অঞ্চলে নতুন উত্তেজনা কত দূর যেতে পারে?' by জগলুল আহমেদ চৌধূরী


দৈনিক কালের কণ্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ পলাশ আহসান


এই আলোচনাট'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.