বগুড়ায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে আন্ডারপাসের দাবি: ঝুঁকি নিয়ে প্রতি মিনিটে অর্ধশতাধিক মানুষের পারাপার by প্রতীক ওমর
হঠাৎ সড়কের সেই নকশা থেকে আন্ডারপাস উধাও হয়ে গেছে। জরুরি বিভাগের সামনে রাখা আন্ডারপাস করা হচ্ছে মেডিকেল কলেজ গেটের সামনে। বিষয়টি জানাজানি হলে বাঁধ সাধে এলাকাবাসী। তাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে ইতিমধ্যে আন্দোলনে নেমেছে। তারা কলেজ এবং জরুরি বিভাগের দুই গেটেই আন্ডারপাস দাবি করছেন। একই দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও। তবে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (সাসেক প্রকল্প-০২ ব্যবস্থাপক) আহসান হাবীব। বগুড়া তথা উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক। এই মহাসড়কের সঙ্গেই হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের গেট। এখানে প্রতি মিনিটে গড়ে প্রায় অর্ধশতাধিক অসুস্থ, সুস্থ, শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ পারাপার হয়। এ ছাড়া রোগীদের সুবিধার্থে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মোহাম্মাদ আলী হাসপাতাল থেকে অত্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেট পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে রাস্তা। গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটির সংযোগস্থল শেষ হয়েছে মেডিকেল কলেজের গেটে। কিন্তু জরুরি বিভাগের গেটে আন্ডারপাস না রাখার কারণে এসব নানাবিধ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে মেডিকেলমুখী মানুষেরা।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, প্রথমের দিকে সাসেক প্রকল্প-২ এর জরিপে ঢাকা-রংপুর এক্সপ্রেসওয়ের নকশাটিতে অত্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে আন্ডারপাসের নকশা ছিল। তা পরবর্তীতে আন্ডারপাসটি করা হচ্ছে কলেজ গেটের সামনে। কিন্তু অপরিকল্পিতিভাবে জরুরি বিভাগকে বাদ দিয়ে অন্য জায়গায় আন্ডারপাসটি মেনে নিচ্ছে না স্থানীয়রাসহ বিভিন্ন মহল। এই বিষয়ে তারা বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি অব্যহত রেখেছেন। বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন।
স্থানীয়দের দাবি, একটি স্বার্থান্বেষী মহলের চক্রান্তে মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনের আন্ডারপাসটি কলেজ গেটের সামনে নেয়া হয়েছে। তারা আরও বলেন কলেজের গেটটি সন্ধ্যার আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে করে মহাসড়কের উপর দিয়ে হাজার হাজার মানুষ ও রোগীরা বাধ্য হয়ে যাতায়াত করবে। এ ছাড়া জরুরি বিভাগের গেটের সামনে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, অসুধের দোকান ও হোটেলসহ প্রায় ৩ শতাধিক দোকান রয়েছে। অর্থাৎ আন্ডারপাসটি কলেজ গেটে হওয়ায় কোনো সুবিধাই পাওয়া যাবে না। তাই আমাদের দাবি জরুরি বিভাগের সামনে আরও একটি আন্ডারপাস করতে হবে।
উল্লেখ্য, বিগত দিনে এখানে রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে নানা ধরনের দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে রোগী-স্বজন ও হাসপাতালে কর্মরতরা। ব্যস্ততম মহাসড়কটি হাসপাতালের সামনে হলেও যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ বা সড়ক নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
শজিমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে প্রতিদিন রোগী থাকেন দেড় হাজারের ওপরে। এ ছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। তাঁদের সঙ্গে থাকেন স্বজনরা।
এদিকে মহাসড়কের পাশে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাজার থাকলে সেখানে সড়ক নির্দেশিকাসহ সাইন সিগন্যাল থাকার কথা। কিন্তু বগুড়ার এই বৃহৎ হাসপাতালের সামনে তার কোনো চিহ্ন নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একাধিকবার সড়কে গতিরোধক নির্মাণের তাগাদা দিলেও তা করা হয়নি।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ মানবজমিনকে জানান, আমরা লিখিতভাবে, মৌখিকভাবে সড়ক কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি যে এখানে কলেজ গেট এবং মেডিকেলের জরুরি গেটে আন্ডারপাস রাখতে। এখানে দুই গেটেই মানুষ পারাপারের জন্য নিরাপদ রাস্তা প্রয়োজন। আশাকরি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সুরাহা করবেন।
মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণে চলমান সাসেক-২ প্রকল্পের বনানী থেকে মোকামতলা অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আহসান হাবিব জানান, তাদের প্রকল্পে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এমভিটি আন্ডারপাস রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দুর্ঘটনা কমবে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন জরুরি বিভাগের সামনে একটি এমভিটি আন্ডারপাস করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। নকশার কাজ চলছে। আশাকরি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যেই এটির অনুমোদন হয়ে যাবে।
No comments