পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল ৭ মে

পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যে কাহিনী সৃষ্টির নেপথ্যে ষড়যন্ত্রকারী কারা  এবং তা তদন্তে কমিশন গঠন হয়েছে কিনা আগামী ৭ মে'র মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আজ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের কথা ছিল।
কিন্ত রাষ্ট্রপক্ষ সময় আবেদন করায় এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন এদিন ধার্য করেন আদালত। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যে কাহিনী সৃষ্টির নেপথ্যে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে একটি কমিশন বা কমিটি গঠনের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে  রুলে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় কেন আনা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। রুলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, যোগাযোগ সচিব ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানকে দুই সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে  ‘ইনকুয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬’ অনুসারে এই কমিশন বা কমিটি গঠনে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা ৩০ দিনের মধ্যে আদালতকে অবহিত করতে মন্ত্রী পরিষদ সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ইউনুসের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান, বিচার দাবি’ শীর্ষক একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এটিসহ কয়েকটি দৈনিকের প্রতিবেদন নজরে এলে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ওইদিন শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। তিনি জানান, দৈনিক ইনকিলাবে ‘ইউনূসের বিচার দাবি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর সঙ্গে আরও কয়েকটি পত্রিকায় আসা প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদালত এই রুল জারি করেছেন। বিষয়টি আগামী ২০ মার্চ শুনানির জন্য আবার আদালতে উঠবে।
বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য চুক্তি করেও পরে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তা স্থগিত এবং পরে বাতিল করে। পরে তাদের বাদ দিয়েই নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ তদারকির পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মীরা ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে মামলা হয়েছিল কানাডার আদালতে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত গত ১০ ফেব্রুয়ারি ওই মামলার তিন আসামিকে খালাস দেন। রায়ে বিচারক বলেছেন, এই মামলায় প্রমাণ হিসেবে যেগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো ‘অনুমানভিত্তিক, গাল-গল্প ও গুজবের বেশি কিছু নয়’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই বলে আসছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ তোলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ এবং এতে বাংলাদেশীরাও জড়িত ছিলেন। সম্প্রতি সংসদে তিনি বলেন, হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন আটকেছিলেন নোবেলজয়ী বাংলাদেশী মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাতে বাংলাদেশের এক সম্পাদকেরও ভূমিকা ছিল। এছাড়া মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে ড. ইউনুসকে দায়ী করেন।

No comments

Powered by Blogger.