আ’লীগ মানুষের জন্য কাজ করে, বিএনপি করে নির্যাতন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের জন্য কাজ করে। এদেশের দারিদ্র্যপীড়িত জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধিশালী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদেশের যত উন্নয়ন আর অর্জন, সব আওয়ামী লীগের হাত ধরেই। অপরদিকে বিএনপি দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন আর জুলুম করে। ক্ষমতায় গিয়ে দেশ ও জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নে ব্যস্ত থাকে। ওই দলটি দেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধি চায় না। রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ মিলনায়তনে তাঁতী লীগের সম্মেলনে রোববার প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি পদাধিকারবলে দলের অন্যতম এ সহযোগী সংগঠনের সাংগঠনিক নেতা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন তাঁতী লীগের আহ্বায়ক এনায়েতুর রহমান চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন যুগ্ম আহ্বায়ক সাধনা দাস গুপ্তা। প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক খগেন চন্দ্র দেবনাথ সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব শওকত আলী। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের সব শহীদ, কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, গণতন্ত্র উদ্ধারে আত্মাহুতিদানকারী তাঁতী লীগের প্রয়াত নেতাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তাঁতী লীগকে শক্তিশালী করাসহ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নের কাজ করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, নেতা হয়ে শুধু বসে থাকলে চলবে না। তাঁতীদের কল্যাণে কাজ করতে হবে। তাদের সমস্যাগুলো কী, তা দেখতে হবে। তাদের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। তাদের মধ্যে যে মেধা রয়ে গেছে, এ ঐতিহ্যটাকে যেন তারা লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধরে রাখতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের ইতিহাসে দেখা যায়, যে দলের হাত ধরে দেশ স্বাধীন হয়েছে সেই দল অনেক দিন সরকার পরিচালনা করেছে। তাদের হাত ধরেই সে দেশের উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে কী হল? স্বাধীনতার অল্প কিছুদিন পরেই স্বাধীনতার স্থপতিকে সপরিবারে মেরে ফেলা হল। তার জায়গায় ক্ষমতায় এলো পাকিস্তানের দোসররা। যারা এদেশের অগণিত মানুষকে হত্যা করেছে, মা-বোনদের নির্যাতন করেছে, তাদের এদেশীয় সহযোগীরা। কিন্তু এই শক্তি দেশের উন্নয়ন করেনি। করবেই বা কেন?
কারণ যারা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে, অবর্ণনীয় কষ্ট করেছে, দেশের জন্য দরদ, তাদেরই আছে, ওদের নেই। তাঁতশিল্পকে আরও আধুনিক ও বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ শিল্পের প্রসারে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপই সরকার নেবে। এটা অত্যন্ত উন্নতমানের শিল্প। কাজেই এটাকে আরও বেশি সহযোগিতা করার জন্য আমাদের সরকার সব সময় প্রস্তুত। তাঁত বোর্ডকে ডিজিটালাইজড করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে আমরা দেশে একটা টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁতের শাড়ি আমরা ব্যবহার করি, ফ্রেঞ্চের শিফন শাড়ি পরি না। আমার মনে হয়, আমাদের ছেলে-মেয়েরাও এ তাঁতীদের তৈরি কাপড় ব্যবহার করতে পারে। আমাদের তাঁতশিল্পের কাপড় শুধু পরিধান নয়, গৃহে নানামুখী কাজে এর ব্যবহারেরও সুযোগ রয়েছে। আমি আশা করব, সবাই সেদিকে নজর দেবেন। সরকারপ্রধান বাংলার ঐতিহ্যবাহী মসলিনকে আবার ফিরিয়ে আনায় প্রসঙ্গে বলেন, সারা দেশে আমরা একটা সমীক্ষা করছি, মসলিন কোন কোন এলাকায় তৈরি হতো, এর সুতা আবার পাওয়া যায় কিনা, এজন্য আমরা গবেষণা করছি। পাশাপাশি স্বতন্ত্র জামদানি পল্লী, বেনারসি পল্লী ও তাঁত পল্লী স্থাপনেরও কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁতীদের কল্যাণে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। বাজেটে সুতা ও রং আমদানি ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর রহিত করা হয়েছে, যাতে দাম কমে। মাদারীপুরের শিবচর এবং শরীয়তপুরের জাজিরায় ১২০ একর জমিতে তাঁত পল্লী স্থাপন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশ জামদানির পেটেন্ট রাইটস অর্জন করায় এ শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরা এবং পাশাপাশি তাঁত ও সিল্ক শিল্প যেন বিশ্বব্যাপী প্রসার লাভ করতে পারে,
তার জন্য সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান। নিজের সারা দেশ ঘুরে বেড়ানোর স্মৃতি উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা একসময় বাংলাদেশের দুরবস্থার কথা স্মরণ করে বলেন, একবেলা খাবার, মোটা কাপড় জুটত না, রোগে চিকিৎসা পেত না, রোগে ধুঁকে ধুঁকে মারা যেত, লেখা-পড়া তো ছিল অনেক পরের ব্যাপার। দু’মুঠো খাবারের জন্য মানুষ হাত পেতে বলেছে, ‘ক্ষুধার জ্বালায় মরে যাচ্ছি’। কঠোর পরিশ্রম করে আমরা এসব সমস্যা ও অভাব দূর করে দেশের উন্নতি করেছি। দেশে এখন কেউ আর না খেয়ে থাকে না। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি সংগঠন নীতি ও আদর্শ মেনে চলবে এবং এর ফলে সংগঠনের উন্নয়ন হবে। অন্যান্য সহযোগী সংগঠন যারা যেখানেই করছেন, সেখানেও সেই সম্প্রদায়ের মানুষের যাতে কল্যাণ ও উন্নতি হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন।

No comments

Powered by Blogger.