কাজ না করেও বেতন: ওএসডি কর্মকর্তাদের সম্পর্কে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে মন্ত্রণালয়ের তথ্য- ৫ বছরে ব্যয় ১০৩ কোটি টাকা by মহিউদ্দিন ফারুক

জনপ্রশাসনে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওএসডি) পেছনে পাঁচ বছরে সরকারের ব্যয় হয়েছে ১০৩ কোটি ২৫ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৭ টাকা। ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে করা ওএসডির মোট সংখ্যা এক হাজার ৯৮৯।
এর মধ্যে ১৩ জন সচিব, ১৬৬ জন অতিরিক্ত সচিব, ৪৯০ জন যুগ্ম সচিব, ৭৯০ জন উপসচিব, ৪৬০ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও ৭০ জন সহকারী সচিব।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৪ জুন হাইকোর্ট গত ১০ বছরে জনপ্রশাসনে ওএসডি করে রাখা কর্মকর্তাদের তালিকা, কত দিনের জন্য ওএসডি ছিলেন বা আছেন, তাঁদের পেছনে বেতনসহ কত টাকা ব্যয় হয়েছে, তার বিবরণ দিতে বলা হয়েছিল। ১৭ জানুয়ারি প্রতিবেদনটি আদালতে দাখিল করার দিন ধার্য রয়েছে।
জনপ্রশাসনে ওএসডি করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গতকাল সোমবার সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান প্রথম আলোকে বলেন, ওএসডির দুটি কুফল দেখা যায়। এক, যাঁদের ওএসডি করা হয়, তাঁদের মনোবল ভেঙে যায়। অন্য কর্মকর্তারাও তটস্থ থাকেন তাঁদের ক্ষেত্রেও এমন ঘটতে পারে ভেবে। দুই, ওএসডি থাকাকালে কাজ ছাড়াই কর্মকর্তাদের বেতন দেওয়া হয়। এতে অর্থের অপচয় হয়। মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাবে বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকা অপচয় হয়েছে। এই অর্থ অন্য কোনো কাজে লাগানো যেত।
গত বছরের ৩১ মে ওএসডির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে সাবেক সচিব এম আসাফউদ্দৌলা রিট আবেদনটি করেন। প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছরের ৪ জুন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারির পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অনীক আর হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আল আমিন সরকার।
যোগাযোগ করা হলে অনীক আর হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত পাঁচ বছরের ওএসডির তালিকা হাতে পেয়েছি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, অনেক কর্মকর্তাকে তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত ওএসডি করে রাখা হয়েছে। তাঁদের পেছনে বিপুল ব্যয় থেকে বোঝা যায় যে কী পরিমাণ জনশক্তি ও রাষ্ট্রীয় অর্থ এই খাতে অপচয় হচ্ছে।’
রিট আবেদনের বিষয়বস্তু থেকে জানা যায়, গত বছরের মে মাসে ওএসডি ছিলেন ৫৯১ জন। তাঁদের মধ্যে তিনজন সচিব, ৩৭ জন অতিরিক্ত সচিব, ১৪৬ জন যুগ্ম সচিব, ১৭০ জন উপসচিব, ১৯০ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও ৪৫ জন সহকারী সচিব। মূল বেতন হিসেবে প্রতি মাসে তাঁদের পেছনে এক কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।
১৯৯১ সালের ৩ অক্টোবর তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে কী কী কারণে ওএসডি রাখা যায়, সে বিষয়ে এবং এর সময়সীমা সম্পর্কে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী বর্তমানে অনির্দিষ্টকালের জন্য ওএসডি রাখা বেআইনি। এখন অনেক কর্মকর্তাকে কোনো কারণ ছাড়াই চিঠি দিয়ে ওএসডি করে রাখা হচ্ছে। সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে অনুপার্জিত আয় কোনো ব্যক্তি ভোগ করতে পারবেন না। যাঁদের ওএসডি করে রাখা হচ্ছে, তাঁরা কোনো দায়িত্ব পালন না করেই সরকারি বেতন ভোগ করছেন।
হাইকোর্টের রুলে নির্ধারিত কারণ ও সময়ের বাইরে কোনো দায়িত্ব ছাড়া জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওএসডি করে রাখা এবং জনগণের করের টাকায় বেতন দেওয়া কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওএসডি করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা কেন করা হবে না, তা-ও রুলে জানতে চাওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.