পলাতক জঙ্গী খুন করছে জেএমবি

 পুরো শক্তিমত্তা নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে জঙ্গীরা। কমান্ড টিকিয়ে রাখতে নতুন করে ঢাকায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে তারা। উদ্দেশ্য_ বড় ধরনের নাশকতা চালানো। তারই ধারাবাহিকতায় জঙ্গী সংগঠন থেকে বের হয়ে যাওয়া জঙ্গীদের আবার দলে ডাক পড়েছে।
যারা জঙ্গী সংগঠনে ফিরছে না, তাদের হত্যা করা হচ্ছে। পুরোপুরি ওয়ানওয়ে পলিসি ফলো করছে জঙ্গীরা। জঙ্গীরা রয়েছে মারাত্মক হার্ড লাইনে।
সোমবার দিনদুপুরে শত শত মানুষের সামনে জঙ্গীদের হাতে জঙ্গী খুন হওয়ার পর বেরিয়ে পড়েছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। হত্যাকারী জঙ্গীরা হত্যার আগে জঙ্গী রাশিদুল ইসলামের সঙ্গে বুকে বুক মিলিয়ে কোলাকুলি ও মুসাফা করে। এর পর রশিদুলকে জঙ্গীরা নির্মমভাবে খুন করে। নিহত জঙ্গী দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা মামলায় ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ছিল।
সোমবার সকাল ৯টায় রাজধানীর উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের রাজউক কলেজের পাশে ঈদগাহ মাঠে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রশিদুল ইসলাম জেএমবির এহসার সদস্য ছিল। তার পিতার নাম আব্দুর নূর। বাড়ি পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ থানার কালিগঞ্জ গ্রামে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা জোনের ডিসি নিশারম্নল আরিফ জানান, রশিদুল ২০০১ সালে জেএমবিতে যোগদান করে। এর পর থেকে রশিদুল জেএমবির হয়ে বহু অপারেশন করেছে। সে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় (মুন্সীগঞ্জ বাদে) একযোগে সিরিজ বোমা হামলায় অংশ নিয়েছিল। সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় জয়পুরহাট জেলায় দায়েরকৃত মামলায় রশিদুল এজাহারনামীয় আসামি। ওই মামলায় রশিদুল গ্রেফতার হয়ে ৬ মাস কারাগারে ছিল। ২০০৬ সালের প্রথম দিকে জামিনে কারামুক্ত হয়। এর পর থেকেই রশিদুল আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ঠাকুরগাঁওয়ে এক মুসলিম পরিবারের আলিফ নূর নামে এক মেয়েকে বিয়ে করে। এর পর সপরিবারে ঢাকায় চলে আসে। ঢাকার উত্তরখান থানাধীন চাঁনপাড়া এলাকার কাজীবাড়ির আব্দুর রহমানের বাড়িতে সপরিবারে ভাড়ায় বসবাস শুরম্ন করে। সে বেসরকারী দারম্নস ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরা ক্যাম্পাসে ইসলামিক শিৰা বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র ছিল। রশিদুলের সায়মা (৩) ও সুমাইয়া নামে দেড় বছরের দুটো কন্যাসনত্মান রয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি রাজধানীর দৰিণখান থানাধীন করিহাটি মসজিদের ইমামতির চাকরি নেয়। ২০০৮ সাল পর্যনত্ম জেএমবির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তার। ২০০৮ সালের পর আসত্মে আসত্মে জেএমবির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সে। ইমামতি করার সুবাদে তাকে প্রায়ই মসজিদে বয়ান করতে হতো। ওয়াক্ত নামাজ ও জুমার নামাজের আগে বা পরে নানা ধরনের বয়ান হতো। বয়ানে সে জেএমবি সম্পর্কে নানা বিষয় বর্ণনা করত। তার বয়ানে মাঝে মাঝে জেএমবি সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেত। জেএমবি সম্পর্কে মুসলিস্নদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিত। ১৫ দিন আগে মাদ্রাসায় পড়ুয়া কয়েক ছাত্র মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর তার পথরোধ করে। মাদ্রাসা ছাত্ররা রশিদুলের কাছে জেএমবিকে জঙ্গী সংগঠন বলে প্রচার করার পেছনে যুক্তি দেখাতে বলে। রশিদুল যুবকদের সামনে উপযুক্ত প্রমাণ হাজির করবে বলে জানায়। যুবকরা রশিদুলকে জেএমবি যে একটি জঙ্গী সংগঠন তার উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে উত্তরা রাজউক কলেজের পাশে ঈদগাহ মাঠের কাছাকাছি জায়গায় অবস্থান করার কথা বলে। এর পর ফোনে যোগাযোগ করে সুবিধাজনক জায়াগায় বসে এ বিষয়ে বিসত্মারিত আলাপ হবে বলে যুবকরা রশিদুলকে জানিয়ে দেয়। সোমবার সেই প্রমাণ দেখানোর কথা ছিল। রশিদুলের স্ত্রী আলিফ নূর জানান, ভোরে তার স্বামী বাসা থেকে বের হন। সকাল ৮টার দিকে দুটো বই নিয়ে আবার বাসায় ফেরেন। বাসায় ফিরে নাসত্মা করেন। এরপর বাই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যান। এর পর তিনি খুন হন। প্রায় এক বছর ধরে জেএমবি রশিদুলকে জেএমবিতে ফিরে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। মসজিদে বা ফোনে রশিদুলকে জেএমবির শীর্ষ জঙ্গীরা জেএমবিতে পুনরায় যোগ দিতে অনুরোধ করে আসছিল। তাতেও কান না দিলে তার পরিণতি ভাল হবে না বলে আগাম জানিয়ে দেয়া হয়েছিল।
প্রত্যৰদশর্ীরা জানায়, রশিদুল সাইকেল নিয়ে মাঠের কাছাকাছি পেঁৗছলে দাড়িওয়ালা, পাঞ্জাবি, পায়জামা, টুপি পরিহিত তিন মাদ্রাসা ছাত্র সালাম দিয়ে রশিদুলের সামনে দাঁড়ায়। মাদ্রাসা ছাত্ররা রশিদুলের সঙ্গে জরম্নরী কথা আছে বলে রশিদুলকে সাইকেল থেকে নামতে বলে। রশিদুল সাইকেল থেকে নামে। মাদ্রাসার ছাত্ররা রশিদুলের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী কোলাকুলি ও মুসাফা করে। মুসাফা শেষ হওয়ামাত্র মাদ্রাসা ছাত্রদের মধ্যে একজন কোমর থেকে পিসত্মল বের করে রশিদুলের মাথায় পিসত্মলের বাঁট দিয়ে মারাত্মক আঘাত করে। আরেকজন ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে রশিদুলকে। রশিদুলের দেহে ১৭টি ধারালো ছুরির পোঁচ রয়েছে। রশিদুলের চিৎকারে আশপাশের মানুষ এগিয়ে গেলে আরেক যুবক বোমা মারতে থাকে। কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দ্রম্নত হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়। জঙ্গী রশিদুলের স্ত্রীর দাবি, রশিদুলকে জঙ্গীরা হত্যা করেছে। তাতে কোন সন্দেহ নেই। জেএমবি যে রশিদুলকে হত্যা করেছে তাতেও কোন সন্দেহ নেই।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, জঙ্গী রশিদুল জঙ্গীদের হাতে খুন হওয়ার পর একটি বিষয় স্পষ্ট_ ঢাকায় জঙ্গীদের আসত্মানা রয়েছে। জঙ্গীরা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। জঙ্গীদের বড় ধরনের কোন টার্গেটও থাকতে পারে। এ জন্য জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা জঙ্গীদের আবার দলে ডাকা হয়েছে। যেসব জঙ্গী আর জঙ্গী সংগঠনে ফিরে যেতে রাজি হচ্ছে না, জঙ্গীরা তাদের হত্যা করার টার্গেট নিয়েছে। কারণ, দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া জঙ্গীদের মাধ্যমে জঙ্গী সংগঠন সম্পর্কে অনেক তথ্য প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। সেৰেত্রে জঙ্গী সংগঠনগুলোর অসত্মিত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। এছাড়া যেসব জঙ্গী জঙ্গী সংগঠন ত্যাগ করেছে তাদের জন্য এটি উদাহরণ হতে পারে। যাতে এমন নির্মম মৃতু্যর ভয়ে দল ছেড়ে যাওয়া জঙ্গীরা আবার অনায়াসে দলে ফিরে আসে। এটি দল ছেড়ে যাওয়া জঙ্গীদের আবার দলে ভেড়ানোর একটি কৌশল হতে পারে ।

No comments

Powered by Blogger.