আমার মেয়েডারে আইনা দেন... কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন গৃহকমর্ী বীথির মা

আমাগোর টাকা নাই। গরিব মানুষ। পরের বারিতে থাকি। বিচার নাই। তাই বইলা কি আমি আমার মেয়েরে পামু না! এইডা কোন কতা হইল। আমার মেয়ে জীবিত না মাইরা ফালাইছে তার কোন হদিস নাই।
আমি মা হিসাবে দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই। দেশে কোন বিচার আচার নাই। স্যার আপনেরা আমার মেয়েডারে আইনা দেন। আমি আর কিছুই চাই না।" বলেই ঝর ঝর করে কাঁদতে লাগলেন গৃহকর্মী কিশোরী বীথির মা হাসুয়া বেগম। রবিবার জাতীয় প্রেস কাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন প্রায় ৪ মাস ধরে নিখোঁজ বীথির মা হাসুয়া বেগম। হাসুয়া বেগমের স্বামী আব্দুস সালাম মিয়া। বাড়ি টাংগাইল জেলার নাগরপুর থানার ঘুনিপাড়া গ্রামে। হাসুয়া বেগম বলেন, তাঁর স্বামী দিনমজুর ছিলেন। চার সনত্মান রেখে কয়েক বছর আগে স্বামী মারা যায়। আমাদের কোন ভিটেমাটি নেই। স্বামী মারা যাওয়ার পর উপায়নত্মর না দেখে পুরো পরিবার অন্যের বাড়িতে আশ্রয় পাই। অন্যের বাড়িতে কাজ করে ৪ সনত্মান নিয়ে কোনমতে জীবন বাঁচিয়ে রাখছিলাম। ২০০৯ সালের মে মাসের শেষ দিকে একই গ্রামের মেহেরম্নন নেছা বীথিকে তার ঢাকার বাসায় কাজ করতে প্রসত্মাব দেন। বিনিময়ে মাসিক ৫শ' টাকা ও তিন বেলা খাওয়া পরার কাপড়চোপড় দেবেন বলে জানান। এমন প্রসত্মাবে বীথির মা বীথিকে মেহেরম্নন নেছার ঢাকার মতিঝিল মডেল হাইস্কুল সংলগ্ন ৪১/এফ/১৩ নম্বর সরকারী কোয়ার্টারে কাজ করতে পাঠান। মেহেরম্নন নেছা খাদ্য মন্ত্রণালয়ে টাইপিস্ট কাম কার্ক পদে কর্মরত। বীথি সে মোতাবেক ভালই চলছিল। মেহেরম্নন নেছা সচিবালয়ে চাকরি করার কারণে খুব একটা যোগাযোগ হতো না বীথির মায়ের সঙ্গে।
৩ মাস পর বীথির মা মেহেরম্নন নেছার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে। হাসুয়া বেগম বীথির বেতনের টাকা চাইলে মেহেরম্নন নেছা জানায়, বীথি অনত্মঃসত্ত্বা। তার পেছনে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। কোন টাকা পয়সা দেয়া সম্ভব না। পরে হাসুয়া বেগম মেহেরম্নন নেছার বাড়িতে যায়। এ সময় মেহেরম্নন নেছা জানায় বীথিকে পাওয়া যাচ্ছে না। সে থেকে ৪ মাস ধরে বীথির কোন খোঁজ নেই। বিষয়টি নিয়ে হাসুয়া বেগম বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিতে থাকে। পরে মেহেরম্নন নেছা সলিমাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ ইমদাদুলসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এক বৈঠক করেন। বৈঠকে বীথির পরিবারকে ৰতিপূরণ হিসাবে ৬০ হাজার টাকা প্রসত্মাব দেন মেহেরম্নন নেছা। পরবর্তীতে সে টাকাও আর দেয়নি।
এ ব্যাপারে মেহেরম্নন নেছার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বীথি তাঁর বাসায় কাজ করত। তবে বীথি অনত্মঃসত্ত্বা হয়নি। বীথি দোকানে যাওয়ার কথা বলে নিখোঁজ হয়। এ ব্যাপারে ২০০৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থানায় জিডি করি। এমনকি রাজধানীতে মাইকিং করা হয়েছিল। পরবর্তীতে গ্রাম্য সালিশে বীথি নিখোঁজ হওয়ায় ৰতিপূরণ হিসাবে বীথির পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়ে ছিলেন তিনি। ১৫ জানুয়ারি ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথা ছিল। তাঁর অভিযোগ, পৈতৃক সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে প্রায় ৫ বছর ধরে সহোদর কামরম্নন নেছা নাসরিনের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব চলছে। ছোট বোন নাসরিন বীথিকে অন্য কোন বাসায় লুকিয়ে রেখে তাকে এমন হয়রানি করছে। বীথির পরিবারকে মতিঝিল থানায় জিডি করতেও তার বোন সহায়তা করেছে। তাঁর অভিযোগ, তিনি রীতিমতো পলিটিক্সের শিকার।
সংবাদ সম্মেলনে বীথির খালা রাহেলা বেগম, মামা আলমগীর হোসেন, মামাতো ভাই জহিরম্নল ইসলাম ও বীথির ছোট ভাই সাগর উপস্থিত ছিল।

No comments

Powered by Blogger.