সুযোগটি নিতে পারেন

আলী ইদ্‌রিস: মহাজোট সরকারের অর্থমন্ত্রী হঠাৎ হঠাৎ খাঁটি সত্য ও ন্যায্য কথা বলে ফেলেন যা দলের বিরুদ্ধে হলেও দেশের জন্য মঙ্গলজনক।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিরোধী দলের ডাকা হরতাল সম্পর্কে তিনি বলেছেন, হরতাল নিষিদ্ধ করা উচিত। অর্থনীতির ক্ষতিকারক ও জনগণের ভোগান্তির কারণ হরতাল বন্ধ করার জন্য অতীতে ক্ষমতায় থাকতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বলেছিলেন, বিরোধী দলে গেলে তিনি হরতাল ডাকবেন না কিন্তু কথা রাখা হয়নি। হরতাল নিষিদ্ধ করার জন্য ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান এফবিসিসিআই অতীতে বহুবার সরকারের জন্য নিকট আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু কোন সরকার সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি। এফবিসিসিআই ছাড়াও সুশীল সমাজ, মানবাধিকার সংস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সমাজের সর্বস্তরের জনগণ মনেপ্রাণে চায় ক্ষতিকারক, হরতাল নিষিদ্ধ হোক। কিন্তু একমাত্র রাজনৈতিক দলগুলো হরতালকে অস্ত্র হিসেবে সরকারের বিরুদ্ধে প্রয়োগের জন্য জিইয়ে রাখতে চায়। কারণ, হরতাল প্রতিবাদের একমাত্র আরামদায়ক এবং কার্যকর অস্ত্র। একবার ঘোষণা করে গণমাধ্যমে ছেড়ে দিলেই হলো, বাকি কাজ জনসাধারণই সম্পন্ন করে। কিন্তু জনসাধারণ তা ভয়ে ভয়েই করে, ভাঙচুরের ভয়, বোমাবাজির ভয়, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়, প্রতিহতকারী কর্তৃক আক্রমণের ভয় ইত্যাদি। অথচ আহ্বানকারী রাজনৈতিক দলগুলো পরদিন গর্বভরে প্রচার করে, হরতাল সফর হয়েছে। কিন্তু দেশের যে বিরাট অর্থনৈতিক ও জনগণের আর্থ-সামাজিক, মানসিক ক্ষতি সাধন হয়েছে তা কেউ উল্লেখ করে না। এখানে রাজনৈতিক দলগুলো দেশের স্বার্থ দেখে না নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে হরতালকে প্রয়োগ করে। তাই সংসদে আইন তৈরি করে হরতালকে নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী কেউ নয়। শুধু হরতাল নয় নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যেমন করমুক্ত গাড়ি  পাওয়া, সংসদে ৯০ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন পর হাজিরা দেয়া বাধ্যতামূলক করা, বেতন-ভাতা পেতে হলে এক নাগাড়ে ন্যূনতম মাসে ১৫ দিন হাজির থাকা ইত্যাদি ব্যপারে কোন রাজনৈতিক দলই কার্যবিধি সংশোধন করতে চায় না। অর্থাৎ, মাননীয় সংসদ সদস্যরা কিংবা বিরোধী দল ব্যক্তি ও দলের স্বার্থকেই উচ্চাসনে স্থান দিয়ে দেশের স্বার্থকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখান।  হরতালেরে কারণে প্রতিদিন দেশের প্রায় হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। বিদেশী ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নেয়, শ্রমজীবীরা  উপোস করে, হাসপাতালে রোগী মারা যায়, মৃত আত্মীয়ের মুখ দেখা যায় না, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারে না চাকরি প্রার্থীরা চাকরি হারায়, ব্যবসায়ীদের বিরাট ক্ষতি হয়। এসব অনুধাবন করার পরও রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল নিষিদ্ধ করতে বাধা দেয়, এটা দেশের দুর্ভাগ্য। দক্ষিণ এশিয়ার দু-একটি দেশ ছাড়া পৃথিবীর বাকি অংশে হরতাল নামক কর্মসূচির নাম-গন্ধ নেই। একমাত্র বাংলাদেশেই হরতালের মহামারী। হরতাল না হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি আরও ত্বরান্বিত হতো। সময় এসেছে আইনের মাধমে হরতালকে নিষিদ্ধ করা। কোন না কোন ক্ষমতাসীন দলকে উদ্যোগ নিতে হবে এবং নিজেরাও তা মেনে চলার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। যে দলই এ উদ্যোগ নেবে জনগণ তাদের সাধুবাদ জানাবে। সরকার এ সুযোগটি নিতে পারেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য হলো সব সমস্যার সমাধান বিতর্কের মাধমে সংসদে নিষ্পন্ন করা। কিন্তু দেশের সংস্কৃতিতে বিরোধী দল অবরোধ, মিটিং মিছিল এবং সহিংসতার মাধ্যমে দেশ ও জনগণের আর্থ-সামাজিক ক্ষতি করে। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও বিরোধী দল যাতে সংসদ বর্জন করতে না পারে সেজন্য কার্যবিধি সংশোধন করে ৩০ দিন অনুপস্থিত থাকলে সংসদ পদ বাতিল এবং এক নাগাড়ে ১৫ দিন সংসদে যোগ না দিলে বেতন-ভাতা বাজেয়াপ্ত করার নিয়ম প্রবর্তন করতে হবে। সংসদই যাতে সকল বিতর্ক, তর্কযুুদ্ধ, বাগযুদ্ধ এবং জাতীয় সব সমস্যা সমাধানের কেন্দ্রবিন্দু হয় সেজন্য কার্যবিধিতে উপরোক্ত সংশোধন আনা অপরিহার্য এবং মহাজোট সরকার এ সুযোগটি গ্রহণ করে জনগণের প্রশংসা কুড়াতে এবং দেশের উন্নতি সাধন করতে পারেন।

No comments

Powered by Blogger.