তদন্ত সাপেক্ষে মামলা করতে দুদককে চিঠি- মিল্ক ভিটার অবৈধ নিয়োগ বাতিল by আবুল হাসনাত

মিল্ক ভিটায় অবৈধভাবে ৭৬ জন শ্রমিক-কর্মচারীর নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। নিয়োগ বাতিল করতে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধককে চিঠিও দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
অবৈধ এই নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় আর্থিক লেনদেনের যে অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) একটি চিঠি দিয়েছে সমবায় মন্ত্রণালয়।
সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক মো. হুমায়ুন খালিদ, মিল্ক ভিটার পরিচালনাকারী বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম এবং দুদকের সচিবের কাছে গতকাল সোমবার এ চিঠি পাঠানো হয়।
মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গত বৃহস্পতিবার রাতে ৭৬ জন শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ দেন মিল্ক ভিটার পরিচালনাকারী বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান হাসিব খান। নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে ৫৪ জন বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে চাকরিচ্যুত। বাকিরা ১০ থেকে ১২ বছর ধরে দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করছেন।
আইনত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় আগে থেকে অনুমোদন না নিয়ে চেয়ারম্যান এভাবে কর্মী নিয়োগ দিতে পারেন না। এ বিষয়ে ‘মন্ত্রণালয়কে এড়িয়ে মিল্ক ভিটায় ৭৬ জন নিয়োগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন গত রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়। ওই নিয়োগের তৎপরতা নিয়ে শুক্রবার ‘মিল্ক ভিটায় কী হচ্ছে?’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সমবায় অধিদপ্তরে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন চাকরিচ্যুত ৫৪ শ্রমিক-কর্মচারীকে পুনর্বহাল করতে সরকারের অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তার ওপর নিয়োগ কমিটির সভাপতি এবং মিল্ক ভিটা ইউনিয়নের মহাব্যবস্থাপকের অগোচরে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে ৭৬ জনের নামে নিয়োগ আদেশ জারি করা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে মন্ত্রণালয় ওই ৭৬ জনের নিয়োগ বাতিল এবং বিধিবহির্ভূতভাবে চেয়ারম্যানের সই করা নিয়োগপত্রও বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে এসব কর্মচারীর বেতন-ভাতাও বন্ধ থাকবে বলে চিঠিতে জানানো হয়। নিবন্ধককে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশসংবলিত চিঠি দেওয়া হয়েছে মিল্ক ভিটার মহাব্যবস্থাপককেও।
তদন্ত করবে দুদক: দুদককে দেওয়া চিঠিতে সমবায় মন্ত্রণালয় বলেছে, মিল্ক ভিটা একটি জাতীয় সমবায় প্রতিষ্ঠান। তবে এর অধিকাংশ মালিকানা সরকারের। বিধিবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করায় পাঁচ বছর আগে ৩৮৭ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হয়। এই শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে ৫৪ জনকে পুনর্বহাল করতে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে মিল্ক ভিটার চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে সম্প্রতি ৭৬ জনের নিয়োগ আদেশ জারি করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, কর্মচারী নিয়োগে মিল্ক ভিটার যে নীতিমালা আছে, সে অনুযায়ী নিয়োগ কমিটির সভাপতি হন মহাব্যবস্থাপক। কিন্তু তাঁর অগোচরে এবং ব্যবস্থাপনা কমিটিকে কিছু না জানিয়ে গোপন যোগসাজশের মাধ্যমে অবৈধভাবে ৭৬ জন শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ দেন চেয়ারম্যান। এই কর্মচারীদের কাজে যোগদানের সুযোগ দিয়ে মিল্ক ভিটার আর্থিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নষ্ট করে প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে মিল্ক ভিটার ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান হাসিব খান, ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট পরিচালক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক মামলা করার জন্য বলেছে মন্ত্রণালয়।
এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে নিয়োগপত্রে সই করার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসিব খান বলেন, ‘আমি নিয়মটা জানতাম না।’ কিন্তু এর আগে মহাব্যবস্থাপকের স্থলে তিনি কেন নিয়োগপত্রে সই করেছেন, জানতে চাইলে হাসিব খান বলেছিলেন, তাঁর সই করার ক্ষমতা আছে।
তদন্ত সাপেক্ষে মন্ত্রণালয় মামলার করার জন্য দুদককে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসিব খান বলেন, বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন।

No comments

Powered by Blogger.