বড় ধরনের অস্থিরতার মুখে ছাত্রশিবির- * জামায়াতের সেক্রেটারি আলী আহসানের হাত থেকে জামায়াতকে রৰা করার দাবি শিবিরের একটি অংশের- * জামায়াত নেতাদের বিরম্নদ্ধে দুনীতির অভিযোগ তাদের- * দুই ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছে শিবিরও- * 'সেভ শিবির' ব্যানারে ইন্টারনেটে শিবির কমর্ীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান

বড় ধরনের অস্থিরতার মুখে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়েতের ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবির। এতদিন অভ্যনত্মরীণ কোন্দলমুক্ত থাকলেও এবার সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছে মৌলবাদী ও উগ্রবাদী এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
কেবল তাই নয় সমপ্রতি পুনর্নির্বাচিত সভাপতি রেজাউল করিম, জামায়েতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং ঢাকা মহানগর আমীর রফিকুল ইসলাম খানের বিরম্নদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠছেন শিবিরের একটি বৃহৎ অংশ। অনিয়ম দুর্নীতি প্রবেশ করানোর দায়ে পদত্যাগ এবং বিচার দাবি করেছেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে নেতাকর্মীরা 'সেভ শিবির'-এর ব্যানান থেকে তাদের। এই দাবিতে বিদ্রোহী এই গ্রম্নপ থেকে ছাত্র শিবিরের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যনত্ম সকল নেতাকর্মীকে সোচ্চার হওয়ার ডাক দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করে সেক্রেটারি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলেও দাবি করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছুদিন যাবত ভেতরে ভেতরে বিদ্রোহ থাকলেও গত ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেনের পর থেকে তা প্রকাশ্যে রূপ নিযেছে। ঐ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোঃ কামারম্নজ্জামান, ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমীর রফিকুল ইসলাম খানসহ জামায়েতের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা। প্রকাশ্যে বিরোধিতা করতে না পারলেও সভাপতি পদে রেজাউল করিমকে পুনর্নির্বাচিত করা এবং শিবিরের বাইরের লোক বিশেষত মুজাহিদ এবং রফিকুল ইসলাম খানের উপস্থিতি নিয়ে বেশ কয়েকদিন থেকেই ভেতরে ভেতরে বিদ্রোহ চলছিল। বড় কয়েকটি গ্রম্নপ থেকে গণপদত্যাগ এমনকি সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানানোর মতো হুঁশিয়ারিও দেয় ই-মেইলসহ বিভিন্নভাবে। সোমবার রাতে শিবিরের বেশ কয়েকজন নেতা টেলিফোন করে তাদের প্রতিবাদের কথা জানালেন। তবে প্রত্যেকেই অনুরোধ করে বললেন, আন্দোলন চূড়ানত্ম পর্যায়ে যাওয়ার আগে কোনভাবেই নাম প্রকাশ করবেন না। শিবিরের বিদ্রোহী গ্রম্নপের এক সদস্য তার ৰোভ প্রকাশ করে বলেন, জামায়েতের ২/৩ দুর্নর্র্ীতিবাজ নেতার কারণে সুসংগঠিত শিবিরের আজ এই অবস্থা। কে কে? জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, জামায়েতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ এবং ঢাকা মহানগর আমীর রফিকুল ইসলামের কারণে সংগঠনটি ধ্বংসের মুখোমুখি। শিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক দুই নেতা (বর্তমানে কেন্দ্রীয়) জনকণ্ঠকে বলেন, আগে থেকেই জামায়েতের কয়েক নেতার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তার ওপর সদস্য সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ৩ নেতা উপস্থিত থেকে থেকে তাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। এর আগে আমীরের উপস্থিতি থাকলেও অন্য নেতাদের বা বহিরাগত কারও শিবিরের সম্মেলনে উপস্থিত থাকার ইতিহাস নেই। তারা জানান, ্আমীরসহ শীর্ষ নেতাদের জানাচ্ছেন না কেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তাঁরা বলেন, এটা এমনই একটা সংগঠন যেখানে চাইলেই অন্য ছাত্র সংগঠনের মতো রাজপথে মিছিল করা যায় না। বড় ধরনের গ্রম্নপ নিয়ে প্রতিবাদ করতে না পারলে মৃতু্যর মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে তাকে।
এদিকে শিবিরের অস্থিরতা নিয়ে এই মুহূর্তে জটিলতার মুখে জামায়াত। কারণ আন্দোলনের অন্যতম শক্তি শিবিরকে ঐক্যবদ্ধ না রাখতে পারলে কোনভাবেই দলকে শক্ত অবস্থানে রাখ যাবে না বলে মনে করে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। শিবিরের নেতাদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন জামায়াত নেতারা। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবার রাতেও চলছে জরম্নরী বৈঠক। তবে সঙ্কট সমাধানে তেমন কিছু করা সম্ভব হয়নি বলে সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে সোমবার বিকেলে বিভিন্ন সাংবাদিকের ব্যক্তিগত মেইল নম্বরে একটি মেইল পাঠানো হয় সেভ শিবিরের ঠিকানা থেকে। যেখানে বলা হয়েছে, প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা-শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল ড. মামুন ভাই পদত্যাগ করেছেন। লাস্ট পরিষদ মিটিংয়ে মামুন ভাই পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগের কারণ হলো, বর্তমান প্রেসিডেন্ট রেজাউল করিমের দুর্নীতি, জামায়াত নেতা মুজাহিদ ও রফিকুল ইসলামসহ অনেকের নগ্ন অসাংবিধানিক হসত্মৰেপ। এই দুনর্ীতিবাজ প্রেসিডেমীর আন্ডারে সেক্রেটারি হয়ে তিনি কাজ করবেন না বলেই পদত্যাগ। সেভ শিবিরের পৰে বলা হয়, আমরা ৩ তারিখ শিবিরের জন্মদিনের আগেই ইসলামের দুশমন রেজাউল করিমের পদত্যাগ চাই। আমরা আলস্নাহ্্র কাছে দোয়া করি, আলস্নাহ তুমি রেজাউল করিম, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, রফিকুল ইসলাম খানসহ যারা শিবিরের ৰতি করল দুনিয়াতেই তাদের শাসত্মি দিও।
মেইলে সাংবাদিকদের কাছে এসব সংবাদ প্রকাশের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, সারাদেশের শিবিরের হাজার হাজার সমর্থক, কর্মী, সাথী, সদস্য আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা আমাদের শিবিরকে ভালবাসী বলেই এখনও অন্য দলের মতো মারামারি পর্যায়ে যাই নাই। আমরা মনে করি সুষ্ঠুভাবেই সঙ্কটের সমাধান হবে। তবে আমাদের অধিকাংশ মানুষের মতে সমাধান হলো, একমাত্র রেজাউল করিমের পদত্যাগই শিবিরকে বাঁচাতে পারে। আমরা রেজাউল করিমের পদত্যাগ চাই। নতুন প্রেসিডেন্ট চাই। আলস্নাহ হাফেজ। সব শেষে-প্রেরক হিসেবে বলা হয়ছে-শিবির সাপোর্টার্স টিম।
পুরো বিষয় নিয়ে বিকেলে শিবিরের বর্তমান ও বিদায়ী সভাপতি, সেক্রেটারিদের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও কেউ মোবাইল রিসিভ করেননি। তবে রাত সাড়ে ৭টার দিকে সভাপতি রেজাউল করিম মোবাইল রিসিভ করলেও তিনি বলেন, আমি একটা মিটিংয়ে। এক মিনিট সময় হবে? একটা ছোট প্রশ্ন ছিল। আপনাদের সেক্রেটারি কি পদত্যাগ করেছেন? তার উত্তর ছিল_ না, পদত্যাগ করেননি।

No comments

Powered by Blogger.