সব ভাল কলেজে ভর্তি একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে- ছাত্রলীগ নেতার কারণে

নিয়ম কানুনকে অগ্রাহ্য করেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়ায় অবৈধ বাণিজ্যে নেমেছে নেতাকর্মীরা। বাণিজ্য নিশ্চিত করতে মেধা তালিকার পরিবর্তে নিজেদের পছন্দের তালিকা অনুযায়ী ভর্তির অযৌক্তিক ও অবৈধ দাবি তুলেছেন তারা।
নিজেদের কোটা অনুযায়ী ভর্তির দাবি পূরণ না হওয়ায় ইতোমধ্যেই বাধার মুখে পড়েছে বেশকিছু কলেজের ভর্তি কার্যক্রম। আর এই অভিযোগ সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের বিরম্নদ্ধে। কলেজ কর্তৃপকে মতার জোরে ম্যানেজ করে, অন্যথায় কর্তৃপকে থোরাই কেয়ার করে অবৈধ ভর্তির নামে অর্থ লোপাটের কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন কলেজের নেতাকর্মীরা। ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, ইডেন কলেজ, বদরম্নন্নেসা কলেজ, কবি নজরম্নল কলেজসহ বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা সদরে অবস্থিত দেশের স্বনামধন্য প্রায় সব কলেজেই ছড়িয়ে পড়েছে অসৎ নেতাকর্মীর তৎপরতা। কলেজ কর্তৃপৰ অবস্থা সামাল দিতে না পেরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারের সংশিস্নষ্ট কর্তৃপৰের সহায়তা কামনা করেছেন। এই অবস্থায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
জানা গেছে, গত ১৫ জানুয়ারি ভর্তির পরীৰার পর ২৫ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয় ফলাফল। এবার আগের মতো একটি পাস নম্বর ধরে বাকি সকলকে উত্তির্ন বলে মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। কলেজের আসনের চেয়ে কিছু বেশি শিৰার্থী নিয়ে মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়। ইতোপূর্বে অসৎ নেতা কর্মীদের ভর্তি বাণিজ্যের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন এবার ভর্তি প্রক্রিয়ায় এই পরিবর্তন আনে। কিন্তু জানা গেছে, ইতোমধ্যেই ভর্তি পরীৰায় অংশ নেয়া শিৰার্থীদের সঙ্গে টাকা বিনিময়ে ভর্তির সমঝোতা শেষ করেছেন নেতাকর্মীরা। এর সূত্র ধরেই তারা বিভিন্ন কলেজে কর্তৃপৰের কাছে ভর্তি পদ্ধতির পরিবর্তন এবং নিজেদের পছন্দের তালিকা বা কোট অনুযায়ী ভর্তির দাবি তুলেছেন। তারা কলেজ কর্তৃপকে বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে মেধা তালিকার বাইরে থাকা শিার্থীকে ভর্তি তালিকার নিচের শিার্থীকে উপরে নিয়ে আসাসহ বিভিন্ন কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। আবার এই সুযোগে পরীায় ফেল করা শিার্থীদেরও ভর্তি করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিশাল অঙ্কের অর্থ। এসব কাজে সংগঠনের শীর্ষ নেতারা সরাসরি সম্পৃক্ত না থাকলেও তাদের প্রশ্রয়েই উচ্ছৃঙ্খল কিছু নেতাকর্মী জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই অবস্থায় অনিয়ম বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকারের নেয়া পদৰের রীতিমতো বাধার মুুখে পরেছে। দেশের অধিকাংশ স্বানামধন্য কলেজ বিশেষত যেখানে শিৰার্থীদের আকর্ষণ বেশি সেসব কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অসৎ নেতাকর্মীরা আশ্বাস দিচ্ছেন-' যদি পাসও না করেন কিংবা মেধা তালিকায় অবস্থান যত নিচেই হোক না কেন নেতাকর্মীদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিলেই সব সমস্যর সমাধান হবে।' মেধা তালিকায় দুর্বল অবস্থানের কারণে আশানুরূপ বিষয় না পেয়ে শিার্থীরা কলেজ থেকে মনোকষ্ট নিয়ে বের হলেও কলেজ গেটেই সমাধান দিচ্ছেন নেতারা। কিছু প্রতিষ্ঠান কতর্ৃপৰ বাধা সামাল দিতে পারলেও কেবল অর্থের বিনিময়ে চলা অবৈধ এই কর্মকা-ের খপ্পরে পড়ে রাতারাতি পোপনেই পাল্টে যাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠানের মেধা তালিকা। আবার ভাল বিষয়গুলোর আসন অর্ধেক পূরন হতেই নেতা কর্মীদের কোট পূরণ করতে শিৰার্থীদের জানিয়ে দেয়া হচ্ছে 'আসন পূরণ হয়ে গেছে।' ফলে বাদ পড়ছেন মেধাবীরা আর ছাত্রনেতা নামধারী কিছু নেতাকর্মীকে ৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যনত্ম ঘুষ দিয়ে রীতিমতো অবৈধ প্রক্রিয়ায় ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন মেধা তালিকার নিচের অবস্থানের শিার্থীরা। তবে অভিযোগের এখানেই শেষ নয়, ভুক্তভোগেী শিার্থী ও অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, অনেক কলেজে ভর্তির জন্য সাাতকার দিতে গিয়ে কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীর কারণে রীতিমতো হয়রানির মধ্যে পরতে হচ্ছে। কলেজ কর্তৃপরে কারও সঙ্গে যোগাযোগই করা সম্ভব হচ্ছে না উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীদের কারণে। ঠিক এই অবস্থায় পুরো প্রক্রিয়ায় অবিলম্বে শিামন্ত্রীসহ সরকারের সংশিস্নষ্ট কর্তৃপরে কাছে আহ্বান জানিয়েছেন শিার্থী, অভিভাবক ও শিকরা। এমনকি অবিলম্বে সারাদেশে বিষয়টির দিকে নজর দিতে ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার কলেজগুলোর প্রতি শিার্থীদের আকর্ষণ তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় এখানেই চলছে বেশি অনিয়ম। কর্তৃপৰ অনিয়মে সমর্থন না করায় ইতোমধ্যেই দু'দফা হাঙ্গামা চলানো হয়েছে এই কলেজে। এছাড়া রাজধানীর ইডেন কলেজে মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বেশি আকর্ষনীয় প্রতিষ্ঠান। এই সুযোগে বসে নেই এখানের নেত্রীরাও। এখানে রাতারাতি পোপনেই পাল্টে যাচ্ছে অনেক মেধা তালিকা। চাহিদা বেশি থাকা বিষয়গুলোর আসন অর্ধেক পূরণ হতেই নেতাকর্মীদের কোটা পূরণ করতে শিৰার্থীদের জানিয়ে দেয়া হচ্ছে 'আসন পূরণ হয়ে গেছে।' নেত্রীরা এসব কর্মকা-ের কিছুই জানেন না বলে দাবি করলেও শিৰার্থীদের অভিযোগ, নেত্রীদের পছন্দের ব্যক্তিদের ভর্তি করতেই আসন ফাঁকা রাখা হচ্ছে এখানে। ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতরাও বললেন একই কথা। গত তিনদিন রাজধানীর তিতুমীর কলেজ, ঢাকা কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, ইডেন কলেজ, বদরম্নন্নেসা কলেজ, কবি নজরম্নল কলেজ, বাংলা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে গিয়ে দেখা গেল অসৎ নেতাদের তৎপরতা। অধিকাংশ শিার্থীই অভিযোগ করেছেন, নেতা কর্মীদের জন্য কিছু আসন খালি রেখেই আসন পূর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। আর সকল কর্তৃপৰই অভিযোগ করেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনিয়ম বন্ধে এবার যে প্রক্রিয়া নেয়া হয়েছে তা বানত্মবায়নে বাধা দিচ্ছে নেতাকর্মীরা। ফলে আসন কমে যাওয়ায় ভাল ফল করেও অনেক শিার্থী তালিকার নিচের দিকে নিমে যাচ্ছে। ভর্তি হতে পারছেন না আশানুরূপ কোন বিষয়ে। রবিবার এবং সোমবার ইডেন কলেজ এবং তিতুমীর কলেজে অর্থ দিয়ে ভর্তি হওয়ার পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশকিছু শিৰার্থী বলছিলেন, 'সাাতকার দিয়ে পছন্দের বিষয়টি পাইনি। কতর্ৃপ বলছে আসন শেষ। কিন্তু কলেজই কয়েকজন নেতাকর্মী বলল ১০ হাজার টাকা দাও আজই ভর্তি করিয়ে দেব। যে কোনো বিষয়। পরে আরও কিছু কম টাকায় তাদের রাজি করিয়েছি।' ভুক্তভোগীদের অভিযোগ প্রতিবছর একই কর্মকা- চলছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। অথচ দেখার কেউ নেই।
এদিকে শনিবার ও রবিবার রাজধানীর দুটি কলেজে নেতাকর্মীদের বাধার পর সোমবার একইভাবে বন্ধ হয়ে গেছে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের ভর্তি কার্যক্রম। এছাড়া, খুলনার আজম খান কমার্স কলেজ, বিএল কলেজ, যশোরের এমএম কলেজ, পাবনার এ্যাডওয়ার্ড কলেজ, রংপুরের কারমাইকেল কলেজ, ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ, বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ, কুমিলস্নার ভিক্টোরিয়া কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, মহমিন কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ, চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ, কক্সবাজার সরকারী কলেজসহ দেশের প্রধান প্রধান কলেজগুলোতে উচ্ছৃঙ্খল নেতাদের কর্মকা-ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে ভর্তি দুর্নীতি বন্ধে সরকারের নেয়া উদ্যোগ।
বিষয়টি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে অধ্যরা বললেন, সমস্যা সমাধানে সরকারের এদিকে বিশেষ নজর দেয়া জরম্নরী। এদিকে শিৰামন্ত্রণালয়ের সর্বৰণিক সমর্থন পেলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপৰ রীতিমতো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে। এত কর্মকর্তা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, অল্পকিছু নেতাকর্মীর কারণে সরকারেরই দুর্নাম হচ্ছে। তিনি, সঙ্কট সমাধানে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সহযোগিতা কামনা করেছেন। আর ভর্তি পরীৰার দায়িত্বে থাকা ডিন ড. ফকির রফিকুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, ভালভাবে সমস্যা সমাধানে শিৰক, শিৰার্থীসহ সর্বসত্মরের মানুষের সমযোগিতা প্রয়োজন। প্রয়োজন গণমাধ্যমের সহযোগিতা।

No comments

Powered by Blogger.