আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্প-সব কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল

রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখান মৌজায় অবস্থিত আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্পে মাটি ভরাট, প্লট বিক্রি ও যেকোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হাইকোর্টের আদেশ গতকাল সোমবার স্থগিত করেননি আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি। ফলে হাইকোর্টের আদেশটি বহাল রয়েছে।
তবে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত রাখতে আশিয়ান সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আবেদনের ওপর আগামী ২০ জানুয়ারি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
হাইকোর্ট গত ২ জানুয়ারি এক আদেশে আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্পে মাটি ভরাট, প্লট বিক্রি ও যেকোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্পকে দেওয়া রাজউকের অনুমোদন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া অবস্থানগত ছাড়পত্রও স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া পরিবেশের ক্ষতি করায় আশিয়ান সিটিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের করা ৫০ লাখ টাকার জরিমানা কমিয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া আদেশও স্থগিত করেন আদালত।
এসবের পাশাপাশি আশিয়ান সিটির অনুমোদন-সংক্রান্ত সব কাগজপত্র আদালতে জমা দিতে আশিয়ান সিটি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ পর্যন্ত তারা কতগুলো প্লট বরাদ্দ দিয়েছে তার একটি তালিকাও দিতে বলা হয়।
গত ২২ ডিসেম্বর আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড ট্রাস্ট্রেট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশ, নিজেরা করি, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ আটটি সংগঠনের করা এক রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদেশ দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের এসব আদেশ স্থগিত রাখার জন্য ৯ জানুয়ারি আবেদন করে আশিয়ান সিটি। গতকাল আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আশিয়ান সিটির পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মাহমুদুল ইসলাম ও ইকবাল কবির লিটন।
শুনানিতে রফিক-উল হক বলেন, মূল রিটের ওপর পূর্ণাঙ্গ শুনানি ছাড়াই অন্তর্বর্তী যে আদেশ দেওয়া হয়েছে তাতে বিবাদীপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন আছে। এ কারণেই হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত হওয়া দরকার। মূল রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই গ্রহণ করা হবে। এ যুক্তির বিরোধিতা করে মাহমুদুল ইসলাম বলেন, সাভারের আমিন বাজারে মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্পকে অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের পর একটি নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সে মামলায় আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ীই এ ক্ষেত্রে আদেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আশিয়ান সিটি প্রকল্প অনুমোদনের কথা পুরোপুরি সত্য নয়। তারা ৫৫ একর জমির ওপর তাদের প্রথম অবস্থানগত ছাড়পত্র পায়। কিন্তু সেটা অমান্য করে জলাভূমি ভরাট করে আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তাদের কাগজপত্রে ৪৩ দশমিক ১১ একর জমি দেখা গেলেও বাস্তবে ২৩০ দশমিক ৪৬ একর জমি ভরাট করা হচ্ছে। এ সময় আদালত মধুমতি টাউনের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের রায়ের কথা উল্লেখ করে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ধার্য করেন।
গত ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্পকে পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া অবস্থানগত ছাড়পত্র ও এর নবায়ন, মন্ত্রণালয় থেকে জরিমানা কমানোর সিদ্ধান্ত এবং রাজউকের দেওয়া অনুমোদন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এ ছাড়া আশিয়ান সিটি কর্তৃক উন্নয়ন করা এলাকাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং অননুমোদিত সব প্রকল্প ভরাট কার্যক্রম, বিজ্ঞাপন প্রদান, প্লট বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত, ভূমি, পরিবেশ, স্বরাষ্ট্র ও তথ্যসচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, ঢাকার জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (তত্ত্বাবধায়ন ও বাস্তবায়ন) এবং আশিয়ান সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
হাইকোর্টের আদেশে বেসরকারি আবাসন প্রকল্প ভূমি উন্নয়ন নীতিমালা-২০০৪ সংশোধনের পর কতগুলো আবাসন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তার একটি তালিকা আদালতে জমা দিতে রাজউক চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.