তারা বিরোধী দলের অসস্তিত্ব ধ্বংস করতে চায়- আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপির অভিযোগ

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানকে জড়িয়ে শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে উদ্দেশ্যমূলক ও বানোয়াট আখ্যা দিয়ে বিএনপি নেতারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে এ রকম দায়িত্বহীন কথা বলা খুবই অন্যায় ও অসঙ্গত।
একইসঙ্গে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার সন্দেহের তীর প্রধানমন্ত্রী, তাঁর দলের নেতা ও আত্মীয়স্বজনের দিকেই রয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা। বিডিআর বিদ্রোহের তিন দিন বিরোধীদলীয় নেতা কি করেছেন_ প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতারা বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা বিডিআর বিদ্রোহের দিন গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়েই ছিলেন এবং এখানে বসেই ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে জেনেছেন। বরং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের খুনের দিন শেখ হাসিনা কোথায় ছিলেন_ প্রশ্ন তুলে তাঁরা বলেন, সেদিন বাংলাদেশের কোন সীমানত্মে তাঁকে আটক করার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল।ু
রবিবার বিএনপির নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সন্মেলনে বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সন্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আসম হান্নান শাহ, এমকে আনোয়ার এমপি, মির্জা আব্বাস, বেগম সারোয়ারী রহমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান এবং সংসদের বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ জয়নাল আবেদিন ফারম্নক এমপি।
লিখিত বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান ৰমতাসীন সরকার দেশকে এক ভয়ঙ্কর অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা বার বার বলে আসছি, তারা এবারও ৰমতায় এসে প্রমাণ করেছে, গণতন্ত্রে তাদের আস্থা নেই। ৰমতাসীন দল এখনও একদলীয় বাকশালী স্বৈরশাসন কায়েমের দর্শন থেকে সরে আসেনি অভিযোগ করে তিনি বলেন, গণতন্ত্র অর্থই হচ্ছে বিভিন্ন মত ও পথের পারস্পরিক অবাধ প্রতিযোগিতার সুযোগ। কিন্তু বর্তমান ৰমতাসীনরা ভিন্নমতকে সহ্য করতে পারে না। বিরোধী দলকে মেনে নেয়ার বিষয়টি আওয়ামী লীগের অভিধানেই নেই উলেস্নখ করে মোশাররফ বলেন, তারা অতীতের মতো আবারও সকল ফ্রন্টে বেপরোয়া আক্রমণ করে বিরোধী দলের অসত্মিত্ব ধ্বংস করতে চায়। আর এ কাজে তারা রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
ড. মোশাররফ আরও বলেন, বিরোধী দল দমনে দেশজুড়ে সরকার ফ্যাসিস্ট আচরণ শুরম্ন করেছে। সেই সঙ্গে চলছে বিরোধী দলের বিরম্নদ্ধে সীমাহীন অপপ্রচার। আমরা জানতে পেরেছি, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরম্নদ্ধে নানান রকম ভিত্তিহীন কুৎসা রটনার জন্য সাংবাদিকদের বাধ্য করতে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ব্যবহার করছে। জরম্নরী সরকারের আমলের আচরণের মতোই সরকার এসব দুষ্কর্ম করে চলেছে। আমরা এসবের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একইসঙ্গে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক কাজে গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। এসব অপতৎপরতার অংশ হিসেবেই শনিবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের দলীয় এক সভায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা নিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আমাদের দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে উদ্দেশ্যমূলক ও বানোয়াট গল্প ফেঁদেছেন। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে এ রকম দায়িত্বহীন কথা বলা খুবই অন্যায় ও অসঙ্গত।
লিখিত বক্তব্যে ড. মোশাররফ রক্তৰয়ী বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি উলেস্নখ করে আরও বলেন, এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। সন্দেহের তীর প্রধানমন্ত্রী, তাঁর দলের নেতা ও আত্মীয়স্বজনের দিকেই রয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য কোন তদনত্মও করতে দেয়া হয়নি। শাসক দলের অভিযুক্তদের বাঁচাতে আটক অনেক বিডিআর সদস্যকে মেরে ফেলা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার যারা সুষ্ঠু তদনত্ম ও ন্যায় বিচার দাবি করেছে সেই সেনা কর্মকর্তাদের অনেককেই প্রধানমন্ত্রী এবং তার অনুগ্রহভাজন তদানীনত্মন সেনাপ্রধান মইনউদ্দিন মিলে চাকরিচু্যত করেছেন। তারপরও সবকিছু ঢাকা দেয়া যাচ্ছে না দেখে প্রধানমন্ত্রী বেপরোয়া হয়ে এখন অসত্য প্রচারণার ধূম্রজাল ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ড. মোশাররফ।
সংবাদ সন্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আসম হান্নান শাহ বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার দিন যে কোন নেতা যা করতেন, বেগম খালেদা জিয়াও তাই করেছেন। বিদ্রোহের সংবাদ পাওয়ার পরই তিনি তাঁর গুলশান কার্যালয়ে আসেন। এখানে বসেই তিনি বিভিন্নজনের কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে জেনেছেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়া হত্যার দিন শেখ হাসিনা কোথায় ছিলেন_ প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, সেদিন বাংলাদেশের কোন সীমানত্মে তাঁকে আটক করার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল ।
সংবাদ সন্মেলনের পর দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আগামী ৬ ফেব্রম্নয়ারি থেকে শুরম্ন হয়ে দুই মাসে সারাদেশের দশটি ভেনু্যতে বিএনপির তৃণমূলের ইউনিয়ন প্রতিনিধি সন্মেলনের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনার কর্মসূচী সফল করার লৰ্যে বিসত্মারিত আলোচনা করা হয়। এছাড়াও সংগঠনকে শক্তিশালী করতে করণীয় পদৰেপ নির্ধারণে আলোচনা করা হয়।
দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সেলিমা রহমান, মিজানুর রহমান মিনু, হারম্নন অর রশিদ, আব্দুল মোমিন তালুকদার খোকা এমপি, নজরম্নল ইসলাম মঞ্জু, জয়নাল আবেদিন ফারম্নক এমপি, ফজলুল হক মিলন, রম্নহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ সেমিনার সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

No comments

Powered by Blogger.