মানিয়ে চলা by মেরীনা চৌধুরী

বিবাহিত জীবনে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয় কিন্তু ফারিহার সমস্যাটা একেবারে আলাদা। ওর শাশুড়ির এমনিতে কোন সমস্যা নেই কিন্তু তিনি কিছুতেই সময় মেনে চলেন না। ঘুম থেকে ওঠেন সকাল দশটায়।
তারপর দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্রাম নিতে যান তখন বেজে যায় বিকেল পাঁচটা। দিবানিদ্রা সেরে যখন তিনি ওঠেন তখন প্রায় সন্ধ্যা সাতটা বেজে যায়। এরপর যথারীতি রাতের খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমোতে ঘুমোতে রাত ১টা বাজে। এর ফলে ফারিহাকে পড়তে হয় মহাবিপাকে। কাজ, লোকের আসা, ছেলের স্কুল থেকে ফেরা, বাড়িতে আত্মীয়স্বজন এলে কথা বলা, কোন দায়িত্বই তিনি নিতে পারেন না। আবার চাকরি ছেড়ে বাড়ি বসে থাকাও ফারিহার পৰে সম্ভব নয়। স্বামী বিজয়কে বললে সে বলে "মা তো এরকমই। একটু মানিয়ে নাও পিস্নজ!"
কিন্তু কী করে মানিয়ে নেবে ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়ে ফারিহা।
অজয়েরও একই সমস্যা। তবে তা বাবাকে নিয়ে। যত বয়স হচ্ছে ওর বাবা ততই নিয়ম মানা ছেড়ে দিচ্ছেন। ফলে খাওয়া, শোওয়া, টিভি দেখার কোন সময় থাকছে না। কিছুদিন আগে আপার বিয়ের কথা বলতে এসেছিল ওর শ্বশুরবাড়ির লোক। ওর বাবা তো তাদের সঙ্গে বসলই না, উল্টো শুতে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে বলে ঠিকমতো কথাও বলল না। নিহায়ত পাশের ফ্যাটের ইসলাম চাচা তাদের পরিচিত বলে কোন মতে ম্যানেজ করেছে পাত্রের বাবা-মাকে। কিন্তু সব জায়গায় তো এ রকম হওয়ার নয়। ফলে লোকে ভুল বুঝছে। ওই নিয়ে অজয়ের মায়ের সঙ্গে অশানত্মিও চরমে উঠছে। কিন্তু কিছু বলেও কোন লাভ হচ্ছে না।

রিলেশনশিপ ঠিক রাখতে
০ কেউ কারও অভ্যাস একদিনে বদলাতে পারে না, তাই ধৈর্য রাখুন।
০ স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করম্নন। কী উপায়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব পারামর্শ নিন।
০ সনত্মান থাকলে বলুন দাদির কাছে আব্দার করতে যে, উনি যেন সময়মতো জেগে থেকে ওকে সঙ্গ দেন।
০ সবাই একসঙ্গে বসে খাওয়ার, টিভি দেখার, গল্প করার নিয়ম চালু করম্নন। এতে সবার সময়ই ঠিক থাকবে।
০ ফাঁকা সময় পেলে শাশুড়িকে ঘুমাতে না দিয়ে ওর সঙ্গে গল্প করম্নন। অসময়ে ঘুমাতে না পারলে ওর সময়ে ঘুম পাবে।
০ ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে ওকে ডেকে দিন। তারপর একসঙ্গে হাঁটার বা বাগান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
০ রেগে যাবেন না। মাথা সব সময় ঠা-া রাখুন।
০ শাশুড়ির অসময়ে ঘুমাবার জন্য আপনাদের কী কী অসুবিধা হচ্ছে ওকে খোলাখুলি জানান।
০ সংসারের প্রতি ওরও একটা দায়িত্ব আছে, সেটা বুঝিয়ে দিন।
০ রাগারাগি না করে ভালবেসে আপনার বক্তব্য রাখুন। রাগারাগি করে বাড়িটাকে জেলখানা করে তুলবেন না কখনও।
০ বাড়ির সমস্যাগুলো ওর সঙ্গে শেয়ার করে কিছু হাল্কা দায়িত্ব দিন। যেটা ওর পৰে করা সম্ভব।
০ কিছুটা কম্প্রোমাইজ করার জন্য প্রস্তুত থাকুন। গোঁড়া মনোভাব নিয়ে কোন কখনও এগুনো যায় না। পারস্পরিক বোঝাপড়া সম্পর্ক রৰার জন্য খুবই জরম্নরী। কম্প্রোমাইজ মানেই কিন্তু অযৌক্তিক কিছু মেনে নেয়া নয়। যুক্তি দিয়ে বুঝুন সমাধানটা আদৌ মানার মতো কিনা।
০ সব বাড়িতেই নিজস্ব একটা নিয়ম থাকে। ছোটবেলা থেকে একভাবে বেড় উঠে বিয়ের পরপরই অন্য নিয়মে অভ্যসত্ম হওয়া অসুবিধাজনক ঠিকই। নিজেকে সময় দিন। দেখবেন ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে পারবেন।

No comments

Powered by Blogger.