বাহারি পাতাবাহার by মেরিনা চৌধুরী

বাহারি পাতা পাতাবাহার। সব ঋতুতেই এই গাছ আপনার বাড়িকে সুন্দর থেকে আরও সুন্দর করে তুলবে। কী ভাবে, কেমন করে পাতাবাহার গাছ লাগবেন তা জানানো হচ্ছে।
স্বল্প পরিসরের বাড়ি আর ছোট-বড় ফ্ল্যাটের প্রকৃতিপ্রেমী বাসিন্দাদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় বাহারি পাতার গাছাগাছালি। বাহারি গাছ শুধু বাড়ি বা ফ্ল্যাটে নয়। পরিবেশ অনুযায়ী অন্যান্য অঞ্চলে রাখলেও দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে। পাতাগুলো নানা রঙের হয় বলে পাতাবাহার গাছ সহজেই সকলে পছন্দ করে। এ ছাড়া খুব বেশি যতœ বা রোদের আলোর দরকার পড়ে না বলে বাগানপ্রেমী মানুষজনের কাছে রঙবেরঙের পাতাবাহার দিনকে দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সাধারণত বর্ষাকালে পাতাবাহার গাছকে দারুণ সুন্দর দেখালেও সব ঋতুতেই অর্থাৎ সারা বছরেই বাড়ির শোভা বৃদ্ধি করবে। তবে একটা কথা, যে কোন বাহারি পাতাওয়ালা গাছ কিন্তু পাতাবাহার নয়। ইংরেজীতে এই গোত্রের গাছ আমরা ‘ক্রোটন’ বলি।
এই গোত্রের গাছগুলো মূলত টবে করলেই ভাল হয়। কারণ অল্প আলোতেই আপনার ঘরের বারান্দা, সিঁড়ির নিচে বা বাড়ির ভেতরে পচন্দসই যে কোন অঞ্চলে রাখতে পারবেন। বাড়ির সামনে যে এক চিলতে জমি আছে সেখানে পাতাবাহারের গাছ লাগিয়ে বাড়ির সৌন্দর্য বাড়াতে চাইলে এমন জায়গায় গাছ লাগাবেন যেখানে সব সময় ছায়া থাকে। কারণ রোদে গাছের পাতা জ্বলে গিয়ে পাতার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। রঙবেরঙের নানা প্রজাতির পাতাবাহার গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তাই আপনি আপনার পছন্দমতো গাছ নির্বাচন করে টব বা বাগানে লাগাতে পারেন। পাতাবাহার গাছের ঝাড় খুব বেশি হলে দেখতে খুব ভাললাগে। যে ধরনের গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত থেস্ট পরিমাণ পাতা থাকে আর ডালপালাগুলো খুব নিটোল থাকে, সেই গাছের চাহিদা খুব বেশি হয়। আবার বিশেষ করে পাতাগুলো যদি নানা ডিজাইনের হয়, তা হলে তো কথাই নেই। পাতাবাহার গাছের চাষ করা সহজ হলেও পরিচর্যা করা জরুরী।
সার, মাটি ও পানি
পাতাবাহার গাছের জন্য দোআঁশ মাটি ব্যবহার করতে হয়। মাটি এবং সার মেশানো মাটি যত হালকা হবে গাছের বেড়ে ওঠাও ভাল হবে। সার-মাটি দুই উপায়ে তৈরি করা যেতে পারে। ১) গত বছরের ব্যবহৃত চন্দ্রমল্লিকার সার, মাটি ও কম্পোস্ট সার। ২) তিন ভাগ দোআঁশ মাটি, দু’ভাগ ২-৩ বছরের পুরনো গোবর সার, দু’ভাগ পাতা পচা সার ও এক ভাগ বালি। এই দুই উপায়ে তৈরি করা ৯ ইঞ্চি টব পরিমাণ মাটিতে মেশাতে হবে ৪ ইঞ্চি টবের ১ টব বাড়ি ভাঙ্গা রাবিস ও ১ টব হাড়গুঁড়ো, চুন ৫০ গ্রাম ও ব্লাইটক্স ৫০ গ্রাম। যেহেতু পাতাপচা সার দিতে হয়, সেই জন্য পাতায় ও ডালে ছত্রাক ধরে। ফলে গাছের শ্রী কমে যায়। এর প্রতিকার হিসেবে চুন ও ব্লাইটক্স দিতে হয়।
বর্ষার প্রথম দিকে গাছের গোড়ার মাটি ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি গভীর করে সাবধানে তুলে নিতে হবে। সেই জায়গায় তৈরি করা সার-মাটি দিয়ে ভর্তি করে দিতে হবে। পানি দেয়ার ফলে মাটি যদি ধুয়ে যায় তাহলে বছরের যে কোন সময় সার-মাটি দেয়া যায়। প্রথম দিকে এবং মাস দুয়েক পর গাছের গোড়া খুঁচিয়ে নিয়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। ১০-১৫ দিন অন্তর ব্যাডিস্টিন, ডায়াথিন-এম ৪৫, ব্রাইটক্স, ক্যাপটাফ প্রভৃতি পাউডার সাথে ওষুধ ১ লিটার পানিতে ৩ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এই ওষুধ দেয়ার ফলে গাছে ছত্রাক জাতীয় কোন রোগ ধরে না। গাছ ও পাতার সৌন্দর্য বাড়াতে গাছ লাগাবার এক থেকে দেড় মাস পরে কাঁচা গোবর ৭-১০ দিন পচিয়ে তরল সার হিসেবে সপ্তাহে একবার করে দিতে পারেন। পাতাবাহার গাছের ক্ষেত্রে কোন রাসায়নিক সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না।

No comments

Powered by Blogger.