তলে তলে আলোচনা নয় ষড়যন্ত্র হচ্ছে- খালেদা জিয়া

বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, তলে তলে আলোচনার কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে সরকার। তলে তলে আলোচনা নয়, ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আলোচনা হলে আমি জানতাম। তিনি বলেন, তলে তলে আলোচনা হয় না। যা কিছু প্রকাশ্যেই করতে হবে।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে আয়োজিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে বিরোধী নেতা বলেন, এ সরকারের সঙ্গে তলে তলে কোন আলোচনা হওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের জানতে হবে, আসলে কার সঙ্গে, কোথায়, কিসের আলোচনা হচ্ছে। অতীতে আমরা প্রকাশ্যেই আলোচনা করেছি। জাতিসংঘের দূত হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান গভর্নর স্যার নিনিয়ান সে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের কারণেই সে আলোচনা ব্যর্থ হয়েছিল। উল্লেখ্য, সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সৈয়দ আশরাফ দাবি করেছিলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও ভেতরে ভেতরে সরকারের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা চলছে। খালেদা জিয়া বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে হবে। সেজন্য ফর্মুলা একটাই, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সে সরকারের প্রধানসহ ১০জন উপদেষ্টা হবেন নিরপেক্ষ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ বাড়বে না, তারা নির্বাচন ছাড়া অন্য কোন নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তও নিতে পারবেন না। খালেদা জিয়া দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন দেশরক্ষা ও দেশগড়ার কাজে সকল জাতীয়তাবাদী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হই। সে ঐক্যে দেশ গড়তে আওয়ামী লীগ এলে তাদেরও আমরা সঙ্গে নেবো। দেশ গড়তে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশে বলেন, আমাদের দলের নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে আজ ৯ মাস। তাকে অবিলম্বে ফিরিয়ে দিন। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও নাসিরউদ্দিন পিন্টুসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি দিয়ে পরিবেশ সৃষ্টি করুন। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, মঈন-ফখরুদ্দিনের সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলা যাবে না। তারা এসেছিল ভিন্ন পথে, পার করেছিল নির্ধারিত মেয়াদ। আওয়ামী লীগই সেদিন তাদের ‘আন্দোলনের ফসল’ আখ্যায়িত করে সকল কাজের বৈধতা দেয়ার আগাম ঘোষণা দিয়েছিল। আসলে আওয়ামী লীগ পেছনের দরজার অপেক্ষায় থাকে। তারা নিজেরাও পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসে, অন্যদেরও সহায়তা করে। দেশের মানুষ বুঝেছে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বারবার। তারা উপরে উপরে স্বৈরাচারবিরোধী কথা বললেও ভেতরে ভেতরে তাদের সঙ্গে আঁতাত করে নিরাপদ থেকেছে। তিনি বলেন, আমাদের কিছু নেতা ছিলেন। যারা এখন আর বেঁচে নেই। তারা বড্ড নির্বাচন-পাগল ছিলেন। এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য তারা বলেছিলেন, অন্যথায় বিএনপি মুসলিম লীগে পরিণত হবে। কিন্তু সেদিন নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি তাই তারা মুক্তিযুদ্ধের দল নয়। তারা নিজেদের বড়জোর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দাবি করতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদের রক্তকে ভুলে গেছে। তারা আধিপত্যবাদীদের তাঁবেদারি করে হলেও ক্ষমতায় থাকতে চায়। আওয়ামী লীগের হাতে দেশ ও দেশের মানুষ নিরাপদ নয়। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা স্লোগান ও মারামারির রাজনীতি চাই না। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রয়েছে ছাত্রদের উজ্জ্বল ভূমিকা। জিয়ার ঘোষণায় ছাত্ররাই প্রথমে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, জিয়াউর রহমানের দর্শনকে সারা দেশে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। বিশ্ববাসী যেন জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশকে চেনে। এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে ছাত্রদলকে। প্রকৃত ছাত্রদের মাধ্যমেই ছাত্রদলকে প্রতিটি ইউনিট গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, ছাত্রদের প্রধান কাজ পড়াশোনা। ছাত্রদের হাতে থাকবে বইখাতা। ছাত্রদের সমস্যা নিয়েই তারা রাজনীতি করবে। কিন্তু দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অরাজকতা তৈরি করেছে ছাত্রলীগ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অস্ত্রাগারে পরিণত করছে। অন্য ছাত্রসংগঠনের উপস্থিতি যেমন সহ্য করছে না তেমনি শিক্ষকরাও তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। যারা শিক্ষাঙ্গনে মারামারি করে, পুড়িয়ে দেয়, হত্যা করে তাদের ছাত্র বলা যায় না, তারা সন্ত্রাসী। ছাত্রদলকে সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে তাদের প্রতিবাদ করতে হবে। তিনি আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের সন্তানদের ভাল শিক্ষা দিন, অস্ত্র তুলে দেবেন না। স্বার্থের দ্বন্দ্বে তারা একদিন আপনাদেরও ছেড়ে কথা বলবে না। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নব্বইয়ের গণআন্দোলনের মতো এবারও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে জুলুম ও দুর্নীতিবাজ সরকারকে হঠাতে হবে। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য তরিকুল ইসলাম ছাত্রনেতাদের উদ্দেশে বলেন, ছাত্রদলকে ছাত্ররাজনীতির অতীত ঐতিহ্য থেকে শিক্ষা নিয়ে কলুষমুক্ত হতে হবে। জিয়ার সৈনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শপথ নিতে হবে- যতদিন এ স্বৈরাচার সরকারের পতন না হবে বিবেকের তাড়নায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ততদিন আন্দোলন চলবে। সভাপতির বক্তব্যে ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল বলেন, বিএনপির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি তারেক রহমানের ওপর নির্যাতনকারী ওয়ান-ইলেভেনের দোসরদের শায়েস্তা করতে ছাত্রদল প্রস্তুত রয়েছে। চলমান আন্দোলনে যে কোন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ছাত্রদলের নেতৃত্বে ছাত্রসমাজ অগ্রভাগে থাকবে। তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ছাত্রদলের আগামী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগেই জনগণের মাধ্যমে জনগণের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।

আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের সভাপতিত্বে ও হাবিবুর রশীদ হাবিবের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আমানউল্লাহ আমান, ফজলুল হক মিলন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বক্তব্য দেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ১৮দলীয় জোটের শরিক দল এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, এনপিপি সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নীলু, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গণি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, এমকে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মো. নাসিরউদ্দিন, শামসুজ্জামান দুদু, ব্যারিস্টার শাহজাহান উমর, ডা. জাহিদ হোসেন, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আবদুল মান্নান, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিবউন নবী খান সোহেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সদরুল আমিন, ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ড. আক্তার হোসেন খান, ড. জাহিদুল ইসলাম, ড. তাহমিনা টপিসহ বিরোধী জোটের শরিক, বিএনপি ও অঙ্গদলের সিনিয়র নেতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.