আ. লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী-যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে মাঠে নেমেছে বিএনপি

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়ার কাছে আওয়ামী লীগ সাপ, যুদ্ধাপরাধীরা ফেরেশতা। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হবেই। তারা উপযুক্ত সাজাও পাবে। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'মানুষ হত্যা করে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে পারবেন না। খামাখা মানুষ পুড়িয়ে মারবেন না। জনগণ কী চায়, সেটা জানার চেষ্টা করুন।'
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি এসব কথা বলেন। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকেলে এ সম্মেলনের উদ্বোধনও করেন শেখ হাসিনা। তবে সম্মেলনে নতুন নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করা হয়নি। নগরের নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব কাউন্সিলর, ডেলিগেটসহ সংশ্লিষ্টরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দেন।
সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে শেখ হাসিনা মহানগর আওয়ামী লীগকে সব থানা, ওয়ার্ডর্র্র্র্র্ ও ইউনিয়নে সম্মেলন করার এবং সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেন।
যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় নগর আওয়ামী লীগকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে দলীয় প্রধান বলেন, 'বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে মাঠে নেমেছে। ক্ষমতায় থেকে তারা কালো টাকা বানিয়েছে। তাদের অর্থ, অস্ত্র আছে। দুর্নীতিতে তারা চ্যাম্পিয়ন। আমাদের আছে মনোবল। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে।'
বিরোধীদলীয় নেতা আওয়ামী লীগকে সাপের সঙ্গে তুলনা করায় এর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, 'বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া সাপ নিয়ে খেলছেন এবং সাপের ঝাঁপি মাথায় নিয়ে চলছেন। আমাদের সাপ বলেন খালেদা, তাহলে যুদ্ধাপরাধীরা উনার কাছে কী? যারা একাত্তরে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে, মা-বোনদের ধর্ষণ করেছে, মানুষ খুন করেছে; তারা উনার কাছে ফেরেশতা, উন্নত প্রজাতির জীব।'
শেখ হাসিনা আরো বলেন, 'একাশি সালে জিয়া মারা যাওয়ার পর জিয়া হত্যার মামলা চট্টগ্রাম কোর্টে আছে। হত্যা মামলা তামাদি হয় না।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'উনি (খালেদা জিয়া) দুই-দুইবার ক্ষমতায় এসেছিলেন, স্বামী হত্যার বিচারটাও করেননি। আমরা ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ চলছে। আজকে আপনি এসেছেন যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য।'
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, 'গুলিস্তানের একটি সমাবেশে এরশাদ সরকারের পতনের সময় বলেছিলেন, এরশাদ আপনার স্বামীর হত্যাকারী। স্বামীর হত্যাকারীর কাছ থেকে কিভাবে বাড়ি গাড়ি টাকা নেন?'
দীর্ঘ ৯ বছর পর সম্মেলন উপলক্ষে সকাল থেকেই রাজধানীর ২৪টি থানা, ১০০টি ওয়ার্ড ও ১৭টি ইউনিয়ন থেকে মিছিল নিয়ে লোকজন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে শোভা পায় পদপ্রত্যাশী মহানগর নেতাদের ছবিসহ পোস্টার-ব্যানার। প্যান্ডেলের ভেতরও অসংখ্য পোস্টার ছিল। মহানগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলরদের পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীরাও উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন সহযোগী সংগঠনের নেতারাও।
প্রধানমন্ত্রী সম্মেলন মঞ্চে এসে পৌঁছান বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে। সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সংগীত বেজে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। আর দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করার পর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন। উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল সম্মেলনস্থলে। তবে বিশৃঙ্খলাও ছিল অল্পবিস্তর।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে আসন নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম পর্ব শেষ হয়। দ্বিতীয় পর্বে পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

No comments

Powered by Blogger.