ফিরে দেখা ২০১২: অলিম্পিক ও অ্যাথলেটিকস -বোল্ট-ফেল্পেসর আলোয় উজ্জ্বল অলিম্পিক

২৭ জুলাই থেকে ১২ আগস্ট। বছরের এই কটা দিন বিশ্ববাসী বুঁদ হয়ে ছিল ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আসর অলিম্পিকে।
পেছন ফিরে তাকালে লন্ডন অলিম্পিকের টুকরো ছবিগুলোই তাই সবার আগে ভেসে ওঠে চোখের সামনে।
অথচ নিরাপত্তার ঝুঁকি, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা—অলিম্পিক শুরুর আগে উদ্বেগ ছিল যথেষ্টই। তবে শেষ পর্যন্ত সব শঙ্কা মিলিয়ে গেছে শূন্যে, ৯০০ কোটি পাউন্ড খরচ হওয়া এই মহাযজ্ঞ আয়োজিত হয়েছে সেরা সাফল্যে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কথাই ধরুন। চোখ ধাঁধানো আয়োজনের পেছনের মানুষটি ছিলেন অস্কারজয়ী পরিচালক ড্যানি বয়েল। কল্পনা করুন, জেমস বন্ডের সঙ্গে হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসছেন রানি এলিজাবেথ! সংগীতের মূর্ছনায় হাজার বছরের ব্রিটিশ সংস্কৃতির দারুণ একটি মঞ্চায়নও দেখেছে বিশ্ব। বিটলস, হ্যারি পটার, মিস্টার বিন বাদ যায়নি কিছুই!
অনুষ্ঠানের কথা বাদ দিয়ে খেলায় ফিরলে অর্জনের খেরো খাতায় দুজনের নাম পাওয়া যায় একই সমান্তরালে। উসাইন বোল্ট ও মাইকেল ফেল্প্স লন্ডনেই নিজেদের নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। অলিম্পিককেও দিয়েছেন অন্য রকম মর্যাদা। এই মর্ত্যধামের সেরা দৌড়বিদ কে, নিষ্পত্তি হয়ে গেছে এই প্রশ্নেরও। প্রথম অ্যাথলেট হিসেবে বোল্ট ধরে রেখেছেন ১০০ ও ২০০ মিটারের সোনা। অবিশ্বাস্য এক বিশ্ব রেকর্ড গড়ে জ্যামাইকাকে জিতিয়েছেন ১০০ মিটারের রিলেও। অপ্রাপ্তি যদি কিছু থেকে থাকে, সেটা ১০০ মিটারে নিজের করা বিশ্ব রেকর্ডটা ভাঙতে না-পারা! জ্যামাইকার ‘বজ্রবিদ্যুৎ’ যে এখন জীবন্ত কিংবদন্তি, এ জন্য তাঁর নিজের ঢাক নিজে পেটানোর দরকার ছিল না। কিন্তু ক্রীড়াবিশ্বের এই অনন্য চরিত্র নিজের মুখে সেটি বলেও দিয়েছেন, ‘এটা করতেই আমি এখানে এসেছিলাম। আমি এখন এক কিংবদন্তি, আমিই শ্রেষ্ঠ জীবিত অ্যাথলেট।’
বোল্ট যদি হন সর্বকালের সেরা দৌড়বিদ, তবে সর্বকালের সেরা সাঁতারু তো বটেই, ফেল্প্সকে সর্বকালের সেরা অলিম্পিয়ানই হয়তো বলে ফেলা যায়। বেইজিংয়ের মতো অপ্রতিরোধ্য ছিলেন না বটে, তবে লন্ডনে ৪টি সোনাসহ সবগুলো অলিম্পিক মিলে ২২টি পদক নিয়ে ফেল্প্সই এখন অলিম্পিক ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পদক জেতা অলিম্পিয়ান। সাবেক সোভিয়েত জিমন্যাস্ট লারিসা লাতিনিনার সর্বোচ্চ ১৮ অলিম্পিক পদকের রেকর্ড ৪৮ বছর পর ভেঙেছেন ফেল্প্স। কিন্তু নিজের এই ২২ পদকের রেকর্ড কি জীবদ্দশায় ভাঙতে দেখে যেতে পারবেন ফেল্প্স? এই অলিম্পিকেই সাঁতারকে বিদায় জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতার-বিস্ময়!
বেইজিংয়ে স্বাগতিক চীনের কাছে পদক লড়াইয়ে হার মানতে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রকে। লন্ডনে এসে হারানো তখ্ত ফিরে পেয়েছে মার্কিনরা। ১০৪টি পদক (৪৬টি সোনা) নিয়ে চীনের ৮৭টি (৩৮টি সোনা) পদকের চেয়ে পরিষ্কার ব্যবধানেই এগিয়ে শেষ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে শুধু সফল আয়োজনের গৌরবই নয়, স্বাগতিক ব্রিটেনকে দুই হাত ভরে পদকও দিয়েছে লন্ডন অলিম্পিক। পদক তালিকায় ব্রিটিশরা ছিল তৃতীয় স্থানে। ১৯২০ সালের পর নিজেদের সেরা অর্জনটা এসেছে এই অলিম্পিকেই।
স্বাগতিকদের হয়ে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়িয়েছেন সম্ভবত মো ফারাহই। ৫০০০ ও ১০০০০ মিটারে সোনাজয়ী সপ্তম এই অ্যাথলেট সোমালীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ। তবে যতটা না ট্র্যাকে, নিজের অদ্ভুতুড়ে মোবট নাচ দেখিয়ে তার চেয়েও বেশি সাড়া ফেলেছেন ট্র্যাকের বাইরে। আলাদাভাবে বলতে হবে ৮০০ মিটারে সোনাজয়ী কেনিয়ার ডেভিড রুডিশার কথাও। বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন বলে নয়, এই ইভেন্টটা এমনই জমজমাট ছিল যে সবার শেষে থাকা প্রতিযোগীর টাইমিংও বেইজিংয়ে সোনাজয়ীর চেয়ে ভালো ছিল! ছিলেন ‘ব্লেড রানার’ অস্কার পিস্টোরিয়াসও, প্রথমবারের মতো কৃত্রিম পা নিয়ে পিস্টোরিয়াস দৌড়েছেন অলিম্পিকে।
এই অলিম্পিকে বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে ৩২টি। তবে চীনা সাঁতারু ইউ শিউয়েন ৪০০ মিটার মিডলেতে যে টাইমিং করে রেকর্ড গড়েছেন, তা দেখে অস্ট্রেলিয়ার স্টেফানি রাইস পর্যন্ত বলেছেন, ‘এটা পাগুলে!’
অনেক কীর্তির ভিড়ে ভুলে যাওয়ার মতো ঘটনাও কম নয়। ব্যাডমিন্টনে চীন-দক্ষিণ কোরিয়ার ইচ্ছা করে ম্যাচ হেরে যাওয়ার নাটক তো ছিলই, ছিল ডোপের কালো থাবাও। ডোপ পরীক্ষায় ধরা পড়ায় সোনা কেড়ে নেওয়া হয়েছে বেলারুশের শটপুটার নাদেজদা অস্তাপচুকের। ল্যান্স আর্মস্ট্রংও ডোপ পাপের দায়ে এ বছর আজীবন নিষিদ্ধ হয়েছেন, কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাঁর জেতা ট্যুর ডি ফ্রান্সের সব শিরোপা। এএফপি, রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.