বাহান্ন বাজার তপোন্ন গলি by মোরসালিন মিজান

সন্দেহ নেই, অনেক বড় একটি দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বিপুল জনগণ তাঁর সঙ্গে আছেন। সকল ভাল এবং মন্দে আছেন। অনুমান করা যায়, ভবিষ্যতেও থাকবেন। নেত্রী যা বলবেন মন দিয়ে শুনবেন তাঁরা। বিশ্বাস স্থাপন করবেন। মাথা পেতে নেবেন।
সঙ্গত কারণেই সত্য বলার দায়টা বেগম খালেদা জিয়ার বেশি।কিন্তু কী তিনি বলছেন আসলে? বলছেন, গোলাম আযম, নিজামী, মোজাহিদ, সাকা, সাঈদী, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামানরা যুদ্ধাপরাধী নয়! ‘প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী’ তত্ত্ব তুলে ধরে বিচারাধীন মামলার আসামিদের মুক্তি দাবি করছেন তিনি। বুধবারের কথাই ধরা যাক, বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঘুরে ঘুরে খালেদা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠিকমতো হচ্ছে না। আপনারা (বর্তমান সরকার) যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে পারবেন না। তবে আমরা ক্ষমতায় গেলে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব। সরকারের কাছে তাঁর প্রশ্ন ছিলÑ জামায়াত যুদ্ধাপরাধী হলে শেখ মুজিবুর রহমান কেন তাদের মাফ করে দিলেন? আর ৯৬ তে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই বা কেন তাদের বিচার করল না? এসব প্রশ্নের উত্তর এখন শিশুরাও জানে। এর পরও প্রশ্ন। এসব প্রশ্নের, এসব কথার একটিই অর্থÑ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করুন।
অথচ মুক্তিযোদ্ধারা এখনও বেঁচে আছেন। লাখো কোটি দলিল বলছেÑ কী ঘটেছিল একাত্তরে। কারা ঘটিয়েছিল। কাদের সাহায্যে। পত্রিকা খুললে এখনও পাওয়া যায় সেই ইতিহাস। কিন্তু কোনটিই খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে সমর্থন করে না। বরং তার কথা শুনে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের। শহীদ পরিবারের সদস্যরা কান্না লুকোতে পারেন না। ইতিহাসবিদরা ছিঃ ছিঃ করেন। কারণ, তাদের সারা জীবনের লেখা পড়াকে মিথ্যে করে দেন খালেদা জিয়া।
তাঁদের মতে, এই বাংলার মাটি, জল, হাওয়াও জানে গোলাম আযম, নিজামী, মোজাহিদী, সাকা, সাঈদী, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামানরা ঘাতক। ধর্ষক। লুটেরা এবং অগ্নিসংযোগকারী। একাত্তরের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা আছে বইয়ের পাতায় পাতায়। সে অনুযায়ী কাউকে দেয়া হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম, বীরপ্রতীকের খেতাব। আর কেউ কেউ পেয়েছেন রাজাকারের স্বীকৃতি। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সমাজের ঘৃণা কুড়িয়েছে একটি অংশ। সেই অংশটির বিচার হচ্ছে এখন।
এখন প্রশ্নÑ খালেদা জিয়া বললেই কী ইতিহাস বদলে যাবে? না। বরং সচেতন মানুষ মনে করেন, এমন ঢাহা মিথ্যা বলে নিজেকে ছোট করছেন তিনি। হ্যাঁ, রাজনীতির নানা প্যাঁচ। তাই বলে যুদ্ধাপরাধীরা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায় না। খালেদা জিয়া কবে বুঝবেন এই সত্য? তিনিই জানেন ভাল। তবে মানবিক মানুষ দ্রুততম সময়ের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন দেখতে চান। এ বিচারের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করা হবেÑ এমনটি আশা করছেন তাঁরা।
এবার আসা যাক শীতের আলোচনায়। হ্যাঁ, সারা দেশের মতো রাজধানী ঢাকায়ও এখন প্রচ- ঠা-া। তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বইছে। এ অবস্থায় যারপরনাই বিপদে পড়েছে ছিন্নমূল মানুষগুলো। বিশেষ করে শিশুদের কষ্ট বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এ অবস্থায় তাদের পাশে একটু দাঁড়ানো খুব জরুরী। নগরের বিত্তবানরা এগিয়ে আসতে পারেন। সামান্য ইচ্ছাটুকু থাকলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন অন্যরাও।
এবার আনন্দের খবর। এই শীতের মধ্যেও বৃহস্পতিবার খুব আনন্দে কাটিয়েছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। কারণ এদিন দুটি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে এবার দেশসেরা ফল করেছে ঢাকা জেলার মিরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মতিঝিলের ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ। তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে ঢাকার ভিকারুননেসা নূন স্কুল। অপরদিকে অষ্টম শ্রেণী সমাপনী পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল ও কলেজ। দ্বিতীয় ভিকারুননেসা নূন স্কুল, তৃতীয় ময়মনসিংহ জিলা স্কুল।
নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর হার, পাসের হার, জিপিএ-৫ পাওয়ার হার, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গড় জিপিএ- এই পাঁচটি মানদ-ের ওপর ভিত্তি করে সেরা ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে খুব ভাল রেজাল্ট করা স্কুলগুলোতে সারা দিন ছিল আনন্দের বন্যা। এ আনন্দ স্থায়ী হোকÑ সকলের তাই প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.