জাতীয় নাট্যশালায় কলিম শরাফী ॥ স্মরণে উৎসব সংস্কৃতি সংবাদ

আজীবন সুরের সাধনায় মগ্ন ছিলেন কিংবদন্তি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কলিম শরাফী। তবে শুধু গান নয়, সংস্কৃতির নানা শাখায় ছিল তাঁর বিচরণ। সংস্কৃতির মাধ্যমে দিন বদলের স্বপ্ন দেখা মানুষটি থিয়েটারের প্রতিও ছিলেন দারুণ অনুরাগী।
দেশভাগের সম্পৃক্ত হয়েছিলেন ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সঙ্গে। ১৯৪৪ সালে অভিনয় করেছিলেন শম্ভু মিত্র নির্দেশিত নবান্ন নাটকে। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে ১৯৯৭ সালে তখনকার নাগরিক নাট্যাঙ্গন এবং এখনকার নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনাম্বলের সভাপতিত্ব গ্রহণ করেন। এরপর আমৃত্যু এই দায়িত্ব পালন করেছেন। আর নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনাম্বলের আয়োজনে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো কলিম শরাফী স্মরণে ছয় দিনের নাট্যোৎসব। ভরা থাক স্মৃতি সুধায়Ñ রবীন্দ্রনাথের এই বাণীকে ধারণ করে আয়োজন করা হয়েছে উৎসব। উৎসবে দেশের তিনটি নাট্যদলের সঙ্গে অংশ নিচ্ছে কলকাতার নাটকের দল বহুরূপী। এ নাট্যায়োজনে কলিম শরাফীর সঙ্গে আয়োজকরা স্মরণে এনেছে দুই গুণী শিল্পী কুমার রায় ও তারাপদ মুখোপাধ্যায়কে। এ ছাড়া নাট্যশালার লবিতে এম এ তাহেরের ক্যামেরায় সাজানো হয়েছে কলিম শরাফীর জীবনচিত্র। যাতে ফ্রেমবন্দী হয়েছে শিল্পীর জীবনের স্মরণীয় অনেক মুহূর্ত।
বৃহস্পতিবার পৌষের সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালায় উৎসবের উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাসেম খান, নাট্যজন আতাউর রহমান, শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল ঝুনা চৌধুরী ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। বক্তব্য রাখেন প্রধান উৎসব সমন্বয়কারী জামালউদ্দিন হোসেন ও উৎসব আহ্বায়ক রওশন আরা হোসেন। সুরসাধককে নিয়ে নাট্যেৎসবের শুরুটাও ছিল সুরাশ্রিত। উদ্বোধনী আয়োজনের শুরুতেই কলিম শরাফীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী পীযূষ বড়য়া। তাঁর কণ্ঠে গীত হয় ‘ভরা থাক স্মৃতি সুধায়।’ সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে আবারও ধ্বনিত হয় সঙ্গীতের সুরসুধা। এতে কলিম শরাফীর স্মৃতিবিজরিত প্রতিষ্ঠান সঙ্গীত ভবনের শিল্পীরা অংশ নেয়। এ সময় শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করে ‘গানে গানে তব বন্ধন যাক টুটে’, ‘আকাশ জুরে শুনিনু’ এই গান।
উদ্বোধনী সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বলের প্রযোজনায় যুগলবন্দি। আজ শুক্রবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন বেলা সোয়া তিনটা ও সন্ধ্যায় কলকাতার বহুরূপী নাট্যদল মঞ্চস্থ করবে তীর্থঙ্কর রচিত ও কুমার রায় নির্দেশিত নাটক দীপদ-। উৎসবের অন্য নাটকগুলো হলো কলকাতার বহুরূপী নাট্যদলের ছাঁচ ভাঙ্গা মূর্তি, থিয়েটারের মেরাজ ফকিরের মা, নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের রক্তকরবী ও নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বলের বিবিসাব।
আগামী ২ জানুয়ারি শেষ হবে ৬ দিনব্যাপী এই নাট্য উৎসব। মাঝে ১ জানুয়ারি বিরতি থাকবে। উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
কলকাতার বহুরূপী নাট্যদলসহ ৬ দিনব্যাপী এই নাট্য উৎসবে অংশগ্রহণকারী দলগুলো হলোÑ বাংলাদেশের নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়, থিয়েটার ও আয়োজক নাট্যদল নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল। ছয় দিনব্যাপী এই নাট্য উৎসবে মোট ৬টি নাটক মঞ্চস্থ করবে অংশগ্রহণকারী নাট্যদলগুলো।
ছায়ানটের আয়োজনে পাশ্চাত্যের মার্গসঙ্গীত পরিবেশনা

ছায়ানটের আয়োজনে জাপানের স্বনামধন্য বেহালাবাদক মিডোরি গোটো এবং তাঁর সহশিল্পীবৃন্দ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় ছায়ানট মিলনায়তনে পরিবেশন করেন পাশ্চাত্যের মার্গসঙ্গীত। সঙ্গে ছিল জাপানের ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতের পরিবেশনা। মিউজিক শেয়ারিংয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন শিল্পীবৃন্দ। মিডোরি গোটো জাতিসংঘের শান্তিদূত হিসেবে নিয়োজিত আছেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্রের কে এম নুরুল আলম। এ আয়োজনে ছায়ানট সঙ্গীত বিদ্যায়তনের শিক্ষাগুরু সঙ্গীতজ্ঞ সোহরাব হোসেনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
চলচ্চিত্রমের উৎসবের সমাপ্তি

বৃহস্পতিবার শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে শেষ হলো চলচ্চিত্রম ফিল্ম সোসাইটির ‘স্বর্ণযুগের ছবি’ শীর্ষক ছয় দিনব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসব। উৎসবের সমাপনী সন্ধ্যায় গতকাল প্রদর্শিত হয় শিবলী সাদিক পরিচালিত ‘নোলক’ ও রুহুল আমিন পরিচালিত ‘ গাংচিল’।

অরবিন্দের নৃত্যনাট্য কলুষ নাশিনী
স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া থেকে জানান, বিশ্বের ভূপ্রকৃতি ও বিপন্ন পরিবেশ রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বগুড়া শহীদ টিটু মিলনায়তনে গত সোমবার ও বুধবার ‘কলুষ নাশিনী’ নৃত্যনাট্য পরিবেশন করেছে ভারতের কলকাতার অরবিন্দ মিউজিক কলেজ। পৌরণিক উপাখ্যানে রূপক ও প্রতীকী চরিত্রের সমন্ময় ঘটিয়ে বক্তব্য প্রধান এই নৃত্যনাট্যের রচয়িতা ডা. জগন্ময় বন্দোপাধ্যায়। নাটকে গঙ্গা নদীর প্রতীকী ভূমিকায় ড. রোমী দাসগুপ্তার অভিনয় ছিল মর্মস্পর্শী। কপিল মুনির ভূমিকায় ডা. জগন্ময়, সগর রাজের ভূমিকায় ড. মনোজ রায়, মহীতোষের ভূমিকায় ডা. মহবুব হাসান, ভগিরথের ভূমিকায় বিদ্যাপতি চক্রবর্ত্তী অন্যান্য ভূমিকায় ছিলেন শেখ মহাতাব হোসেন, রণজয় ব্যানার্জি, রাজীব রায়, সুপ্রিয়া দে জয়শ্রী গুহ, স্বর্নেন্দু ম-ল এবং নৃত্যে ছিলেন অনুশ্রী মিত্র, তনুশ্রী মিত্র ও তানিয়া চট্টরাজ।

No comments

Powered by Blogger.