আরইবির মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবে গোঁজামিল, দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই

 পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে গোঁজামিল ধরা পড়েছে। পরিচালন ব্যয় থেকে রাজস্ব আদায় বেশি হওয়ার আবারও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কোন অবকাশ নেই বলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি মতামত দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার কমিশনের কার্যালয়ে আরইবির দাম বৃদ্ধির ওপর অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে মূল্যায়ন কমিটি বলছে সেপ্টেম্বরে দাম বৃদ্ধির পর আরইবি এখন লাভ করছে।গত সেপ্টেম্বরে দাম বৃদ্ধির পরও লোকসান হচ্ছে উল্লেখ করে আরইবি গড়ে নয় শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করে কমিশনে। কমিশনের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে আরইবির রাজস্ব চাহিদার পরিমাণ ৮৬ হাজার ১৬১ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন টাকা। চলতি অর্থবছরের পরিচালন রাজস্বর পরিমাণ ৮৭ হাজার ৩৩৭ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন টাকা। কাজেই আরইবির পরিচালন ব্যয় থেকে রাজস্ব আদায় ১১৭৬ দশমিক ১৯ মিলিয়ন টাকা বেশি। না লাভ না ক্ষতি এই নীতিতে পরিচালিত হয় দেশের সবচেয়ে বড় এ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান। কাজেই কমিশনের ট্যারিফ প্রবিধানমালা অনুযায়ী পবিসেবার বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধির কোন অবকাশ নেই।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১-১২ অর্থবছরে আরইবি সুদ বাবদ মোট আয় করেছে দুই হাজার ৭৮৮ দশমিক ০৭ মিলিয়ন টাকা। আরইবি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে সুদ বাবাদ প্রাপ্ত টাকা বিবেচনায় নেয়নি। যা বিধিসঙ্গত নয়। এছাড়া কমিশন সাড়ে ১২ শতাংশ সিস্টেমলস (বিতরণ ক্ষতি) বিবেচনা করলেও আরইবি বলছে সিস্টেমলস হচ্ছে সাড়ে ১৩ শতাংশ। কমিশনের মূল্যায়ন কমিটি বলছে, ইতোপূর্বে দাম বৃদ্ধির সময় সাড়ে ১২ শতাংশ সিস্টেমলস ধরে দেয়া হয়েছিল। এখন সিস্টেমলস না কমাতে পারার দায় গ্রাহকের ওপর চাপিয়ে দেয়া সম্ভব নয়।
কমিশন সূত্র জানায়, গত সেপ্টেম্বরে কমিশন উভয় ধরনের বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পর বিতরণকারী কোম্পানিগুলো তাদের লোকসান হচ্ছে বলে কমিশনকে জানিয়ে আসছিল। কিন্তু কমিশনের তরফ থেকে তাদের বলা হচ্ছিল হিসাব করেই খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এখানে ক্ষতি হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। বিতরণকারী কোম্পানিগুলো তাদের বক্তব্যে অনড় থাকলে কমিশন তাদের প্রস্তাব জমা দিতে বলে। কমিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিতরণকারী কোম্পানিগুলো তাদের কিছু আয় প্রদর্শন না করে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবগুলো কমিটির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি যাচাই করতে গিয়ে বিষয়গুলো ধরা পড়েছে। আরইবির মতোই অন্য কোম্পানিগুলোও লাভে থাকার পরও দাম বৃদ্ধির আবেদন করেছে বলে ওই কর্মকর্তা বলেন।
আরইবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন শুনানিতে বলেন, সুদ বাবদ আয়কে অন্তর্ভুক্ত না করাটা একটি ভুল ছাড়া আর কিছু নয়। এ আয় যোগ করলেও আরইবি লোকসান করবে। বছরে যার পরিমাণ ৬৪৫ কোটি টাকা। দেশের সব থেকে বড় এই বিতরণকারী সংস্থাকে বাঁচাতে হলে দাম বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। তিনি দাম বৃদ্ধি করার জন্য কমিশনকে অনুরোধ জানান। শুনানিতে আরইবির পক্ষ থেকে বলা হয়, ঘাটতি মোকাবেলায় আরইবিকে ২২০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার জন্য রেগুলেটরি কমিশন সরকারকে নির্দেশ দিলেও সরকার এখনও সেই টাকা দেয়নি। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছে ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে বলা হয়, বিইআরসির কাছে আরইবির নিবেদন থাকবে, লাভ নয় লোকসান নয় ভিত্তিতে আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া হোক।
গণশুনানিতে কনজ্যুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলোদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলমও দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবটি অযৌক্তিক হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষের আয় কম হলেও ক্ষেত্রবিশেষ শহরের মানুষের চেয়ে তার বেশি দামে আরইবির কাছ থেকে বিদ্যুত নেয়। গত পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে দাম বৃদ্ধি কার্যকর করার সময় বলা হয়েছিল আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি না পেলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হবে না। এর পরও আরইবির আর্থিক সঙ্কট দেখা দিলে তাদের সরাসরি সরকারী ভর্তুকি দেয়ার দাবি জানান তিনি।
কমিশনের চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক শুনানিতে বলেন, যে সমস্ত কাগজপত্রের ঘাটতি রয়েছে তা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আরইবিকে জমা দিতে হবে। এরপর মূল্যায়ন করে কমিশন আদেশ দেবে।
শুনানিতে কমিশনের অপর দুই সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ এবং দেলোয়ার হোসেন ছাড়াও ভোক্তা প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.