গ্যাজপ্রম তিতাসের চার উন্নয়ন কূপ খনন শুরু করবে আগামী মাসে by রশিদ মামুন

 রাশিয়ান গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রম জানুয়ারিতে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির তিতাস গ্যাস ক্ষেত্রে চারটি উন্নয়ন কূপ খনন শুরু করবে। গ্যাজপ্রমের রিগ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে গ্যাজপ্রম ড্রিলিং প্যাডসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করেছে।
আশা করা হচ্ছে এর ফলে তিতাস থেকে প্রতিদিন আরও ৮০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রীডে যোগ হবে।
বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, গ্যাজপ্রমের রিগ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। এখন রিগ দাঁড় করাতে যে ক’দিন সময় লাগে। এরপরই খনন কাজ শুরু হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, জানুয়ারির শেষ দিকে কূপ খনন কাজ শুরু হবে।
তিতাস সূত্র জানায়, দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস ক্ষেত্র তিতাসে গ্যাজপ্রম মোট চারটি কূপ খনন করবে। সব কূপই তিতাসের প্রধান ভূগঠনে খনন করা হবে। কূপগুলো হচ্ছে ১৯, ২০, ২১ ২২। তিতাসের ভূখ-ে ফাটলের কারণে এখানে গ্যাস উদগীরণ হচ্ছে। একারণে কূপ খনন করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তবে গ্যাজপ্রমের মতো অভিজ্ঞ কোম্পানিকে দিয়ে খনন করলে ঝুকি অনেক কম হবে বলে তিতাসের কর্মকর্তারা মনে করছেন। এছাড়া চুক্তির আগে তিতাস এলাকা পরিদর্শন শেষে রুশ কোম্পানিটি বলেছে তারা তিতাসে কূপ খনন করতে পারবে।
তিতাস এখন দেশীয় কোম্পানির মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বেশি গ্যাস উৎপাদন করছে। এখন ১৫ টি কূপের মাধ্যমে দৈনিক ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে তিতাসই সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র বলে ধারণা করা হয়। তবে বিবিয়ানা থেকে বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন আরও বেশি গ্যাস উত্তোলন করে। তারা এককভাবে দেশের সবচেয়ে বেশি দৈনিক ৭৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করছে। তিতাসের কর্মকর্তারা বলছেন, উদগীরণের জন্য কূপ খনন না করায় খনিটির উৎপাদন দীর্ঘদিনেও আশানুরূপ বাড়েনি।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জ্বালানির ইতিহাসে গ্যাজপ্রম যুক্তহবে। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্যর কোম্পানি আরও আগে থেকে প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্টের (পিএসসি) অধীনে বাংলাদেশে কাজ করলেও এই প্রথম রাশিয়ার সরকারী কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করছে। তবে রাশিয়ার জাতীয় কোম্পানি বাংলাদেশে গ্যাসকূপ খননের কন্ট্রাকটর বা ঠিকাদার হিসেবে কাজ করবে। কূপ খননের পর এখান থেকে দেশীয় কোম্পানি গ্যাস উত্তোলন করবে। অর্থাৎ কূপ খননের জন্য গ্যাজপ্রমকে অর্থ দিতে হলেও গ্যাসের হিস্যা দিতে হবে না।
পেট্রোবাংলা জানায় এছাড়াও রাশিয়ান কোম্পানি বাংলাদেশে আরও ছয়টি কূপ খনন করবে। এগুলো হচ্ছে সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির রশিদপুরে একটি, বাপেক্সের সেমুতাং, শ্রীকাইল এবং বেগমগঞ্জে একটি করে এবং শাহবাজপুরে দুটি। ১০টি কূপের মাধ্যমে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে।
গত এপ্রিলে সরকারের এইসব গ্যাস কূপ খননের জন্য রাশিয়ার কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে বলা হয় এলসি খোলার ২০ মাসের মধ্যে কূপ খনন কাজ শেষ করবে গ্যাজপ্রম। একসঙ্গে দুটি রিগ দিয়ে কাজ করায় দ্রুত কূপ খনন শেষ হবে। চুক্তি অনুযায়ী খনন কাজের জন্য ১৯ কোটি ৩৫ লাখ ডলার গ্যাজপ্রমকে দিতে হবে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানায়, তিতাস ক্ষেত্রের কোন সমস্যা হলে তা মোকাবেলা করতে বিশেষ বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ছাড়াও পেট্রোবাংলার নিজস্ব তহবিল থেকে গ্যাজপ্রমের অর্থ প্রদান করা হবে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে দ্রুত গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য সরকার তিতাসে চারটি এবং রশিদপুরে একটি মোট পাঁচটি গ্যাস কূপ খননের জন্য ফাস্ট ট্রাক প্রকল্প গ্রহন করে। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে বিদেশী প্রতিষ্ঠান দিয়ে কাজ করানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সময় ২৫টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব যাচাই বাছাই করে পোলান্ডের ক্রাকোকে কাজ দেয়া হয়। ক্রাকো প্রায় এক বছর ঘুরানোর পর গত বছর ১১ ফেব্রুয়ারি তিতাতের গ্যাস লিকেজের কথা উল্লেখ করে জানায়, ক্ষেত্রটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তাদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী রাশিয়া সফরের সময় দেশের জ্বালানি খাতে সহায়তার আহ্বান জানান। এরপরই রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি খাতে সহায়তা বৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ-রাশিয়া আলোচনা শুরু হয়। রাশিয়া বাংলাদেশের গ্যাসক্ষেত্র ছাড়াও পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য একটি চুক্তি করেছে।

No comments

Powered by Blogger.