হুমকি আন্দোলনে সরকার উৎখাত হবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

 প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে ভোট চুরি করে ক্ষমতা দখলের কারণে জনগণ খালেদা জিয়াকে উৎখাত করেছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসেনি।
তাই হুমকি কিংবা আন্দোলন করে সরকারকে উৎখাত করা যাবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। যতই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হোক না কেন, এ বিচার সম্পন্ন হবেই এবং রায়ও কার্যকর হবে।
জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের বিষধর সাপের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী জনগণকে নয়, বিষধর সাপকে বিশ্বাস করেন। কিন্তু ওঝাও তো সাপের বিষে মারা যায়। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য বিষধর সাপের ঝাঁপি মাথায় নিয়ে চলা খালেদা জিয়ার কি হয় সেটাই দেখার বিষয়। উনি (খালেদা জিয়া) সাপের সঙ্গে থাকুক, আর আমরা জনগণের সঙ্গে আছি।
বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদের শেষ বৈঠকে সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা জনগণের ক্ষমতায়ন ও সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি। স্বচ্ছ হয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়া। এ কারণে বর্তমান সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত প্রায় সাড়ে ৬ হাজার বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনের সবগুলোই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শুরু হওয়া কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন দফতর সম্পাদক গৃহায়ন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। বৈঠকে আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠেয় দলের কেন্দ্রীয় ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল এবং মহানগর কমিটি গঠনসহ সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। একই সঙ্গে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংশোধিত ঘোষণাপত্র নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। রাত সাড়ে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠকটি চলছিল।
সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। সম্প্রতি জনগণের ক্ষমতায়ন, কালচার অব পিস ও অটিজম বিষয়ক তিনটি প্রস্তাব জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে। ১৯৩টি দেশ এ প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা সমুদ্র বিজয় করেছি। সার্বিক দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদার আসনে চলে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ভোট চুরি করা বিরোধীদলীয় নেত্রীর অন্যতম চরিত্র। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করে বঙ্গবন্ধুর খুনী রশিদ-হুদাকে সংসদ সদস্য বানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ভোট চুরি করার কারণে জনগণ তাঁকে উৎখাত করে।
জনশক্তি রফতানি হুমকির মুখে পড়েছে মর্মে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের ৪ বছরে ১৯ লাখ মানুষ বিদেশে যেতে পেরেছে। ২ লাখ ৬৮ হাজার মানুষ মালয়েশিয়া অবৈধ ছিল। আমরা তাদের বৈধ করেছি। আর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের চার বছরে বিদেশে গিয়েছিল মাত্র ৬/৭ লাখ মানুষ। তিনি বলেন, এখন রেমিট্যান্স আসছে। দুর্নীতি দমন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে পেরেছি বলেই বিনিয়োগ বাড়ছে।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসছে তখনই কিছু না কিছু সমস্যা সৃষ্টি করে রাখে। তাদের সময় হাওয়া ভবনের পাওনা না বুঝিয়ে দিয়ে কেউ ব্যবসা করতে পারত না। তারা ক্ষমতায় আসে শুধু নিতে, জনগণকে কিছু দিতে নয়। অথচ এখন ব্যবসায়ীরা স্বাধীনভাবে ব্যবসা করছে। তিনি বলেন, আমরা ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি। ভোটের অধিকার না থাকলে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকে না।
দেশের সকল অর্জন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার মানে জনগণের সেবক-পঁচাত্তরের পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে এটা জনগণ প্রথম উপলব্ধি করে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখন জনগণ কিছু না কিছু পায়। আর অন্যরা ক্ষমতায় আসে নিজেদের আখের গোছাতে।

No comments

Powered by Blogger.