হতে হতে হলো না

খেলা শেষ হয়েছে মিনিট ১৫। কী আশ্চর্য, তখনো জানেন না কয়টা ছক্কা মেরেছেন! সংখ্যাটা ১৫—এটা জেনেও ভাবলেশহীন মুখ।
যেন প্রতিদিনই মাঠে নামেন আর এতগুলো ছক্কা মারেন! মাত্র একটি ছক্কার জন্য ফসকে গেছে বিশ্ব রেকর্ড—এই তথ্যটাও তাঁকে বিন্দুমাত্র আন্দোলিত করল না। না, জিয়াউর রহমান ছেলেটা একটু অন্য রকমই!
শেষ সতীর্থ মুরাদ আউট না হলে ছক্কার বিশ্ব রেকর্ডটা হয়েই যেত। অথচ সতীর্থের প্রতি রাগ-অভিমান তো নেই-ই, আক্ষেপ-আফসোসও নাকি নেই! জিয়াউরের তো এমনই দাবি, ‘কোনো আফসোস নেই। একটা বাজে বলে মুরাদ (শেষ ব্যাটসম্যান) আউট হয়ে গেছে। কিন্তু ওরা (লোয়ার-অর্ডার) সমর্থন না দিলে আমি তো এই পর্যন্ত আসতেই পারতাম না! না, আফসোস নেই।’
বিশ্ব রেকর্ডটা হাতের মুঠো থেকে ফসকে যাওয়া, সেটিও নিজের দোষে নয়—এর পরও কোনো হতাশা থাকবে না? জিয়ার মুখের কথাটা তাঁর মনের কথা বলে বিশ্বাস করা কঠিন। যেমন অবিশ্বাস্য বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের ইনিংসে ১৫টি ছক্কা মারার কীর্তি। তবে কালকের আগেও যদি প্রশ্ন হতো, কার পক্ষে এটি সম্ভব, জিয়াউরের নামটিই বোধ হয় বেশি উচ্চারিত হতো। বেশ কিছুদিন থেকেই যে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্বীকৃত ‘বিগ হিটার!’ বলতে গেলে একমাত্র ‘টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্টও।’ ছক্কা মারার সামর্থ্যের কারণেই তো সেই ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছিলেন।
বড় ছক্কার পাশাপাশি থাকে ‘জোর’, ‘শক্তি’ জাতীয় শব্দগুলো। উচ্চতা-গড়নে গড়পড়তা বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের চেয়ে জিয়া আলাদাও। তবে তাঁর নিজের কাছে কিন্তু ছক্কা মারার মূল মন্ত্র আত্মবিশ্বাস, ‘আমি নিজেকে বাড়তি শক্তিশালী মনে করি না। জোর যেটা আছে, সেটা জন্মগত। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিশ্বাস। নিজের ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস আছে আমার। আমার একটা “জোন” আছে, ওই জোনে পেলেই মারি। বাউন্ডারিতে ফিল্ডার থাকলেও মারি। নিজের ওপর আমার এই বিশ্বাসটা আছে, মারলে বাইরে যাবেই। আর যখন মারি, পুরোটা দিয়েই মারি। মাঝামাঝি বলে কিছু থাকে না।’
শুধু আত্মবিশ্বাসের জোরেই এতগুলো ছক্কা? এবারের জাতীয় লিগে ৬ ম্যাচে মেরেছেন ১৫টি ছক্কা, কাল এক ইনিংসেই তো এর সমান! প্রশ্নকর্তার সংশয়ের দৃষ্টি দেখে জিয়া একটা ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যাও দিলেন, ‘উইকেট খুব ভালো ছিল। আর আমাদের লিগে সাধারণ পাকিস্তানি বলে খেলা হয়, যেটা পরে একটু নরম হয়ে যায়। এবার কোকাবুরা বলে খেলা হচ্ছে। এটা শক্ত থাকে বলে ভালোমতো ব্যাটে এসেছে।’ টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ তকমাটাও খুব একটা পছন্দ নয় তাঁর, ‘যেকোনো ক্রিকেটারের স্বপ্ন টেস্ট খেলা। অন্যরা আমাকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার ভাবতে পারে, আমি নিজেকে সব ধরনের ক্রিকেটের জন্যই উপযুক্ত বলে মনে করি।’
একসময় পরিচিতি ছিল বোলিং অলরাউন্ডার। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে উইকেটও আছে ১৪৪টি। তবে গোড়ালির চোট বোলিংয়ের ধার কেড়ে নেওয়ার পর মনোযোগী হয়েছেন ব্যাটিংয়ে। সেটাই যেন হয়েছে শাপেবর। তাঁর নিজের জন্য, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যও!

No comments

Powered by Blogger.