আধুনিক জাপান ও শিবুসাওয়া এইইচি- প্রবীর বিকাশ সরকার

 ৯১ বছরের জীবনে একজন মানুষ কি কি কাজ করতে পারে? সাধারণত যা করার কথা নয় এক জীবনে শিবুসাওয়া এইইচি তা সাধন করেছেন। সম্ভবত বিশ্বে এরকম দ্বিতীয় কেউ এখনো নেই।
এত বিপুল কাজ তিনি করে গেছেন বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়! জীবদ্দশায় ৪৭০টি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন, অনেক ছিল তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠান যে কারণে বলা হতো শিবুসাওয়া জাইবাৎসু বা ঋরহধহপরধষ মৎড়ঁঢ় যার বেশকিছু এখনো আছে এবং অনেক নাম ও মালিকানা বদল হয়েছে।
‘জাপানি পুঁজিবাদের জনক’ বলে স্বীকৃত শিবুসাওয়াই প্রথম ব্যক্তি যিনি জাপানে ১৮৭৩ সালে প্রথম ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে তার প্রেসিডেন্ট হন। সেই ব্যাংকের নাম ‘দাইইচি কোকুরিৎসু গিনকো’, এখন তা অন্য নামে পরিচিত হলেও প্রভূত প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান। আধুনিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতীক যে শেয়ার মার্কেট তিনি তাও প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ কোম্পানি নামে পরিচিত। শুধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই নয়, সমাজকল্যাণ, সেবা, শিক্ষা এবং আন্তর্জাতিক আরও ৬০০ প্রতিষ্ঠান গঠনে তিনি শক্তি নিয়োগ করেন, অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেন অকাতরে। জাপানের প্রথম আধুনিক প্রশাসন মেইজি সরকারের অধীন অর্থ মন্ত্রণালয়েরও বিশিষ্ট কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক সংস্কারও সাধন করেন।
বিশিষ্ট লেখক, সমালোচক এবং সরকারের অর্থবিষয়ক পরিকল্পনা সংস্থার প্রাক্তন প্রধান সাকাইয়া তাইচি ‘নিহোন অৎসুকুত্তা জুওনি নিন’ বা ‘জাপানের ১২জন নির্মাতা’ গ্রন্থে যে ১২ জন ব্যক্তির কথা বলেছেন, তাঁরা হলেন শোতোকু তাইশি, হিকারু গেনজি, মিনামোতো নো য়োরিমোতো, ওদা নোবুনাগা, ইশিদা মিৎসুনারি, তোকুগাওয়া ইয়েয়াসু, ইশিদা বাইগান, ওওকুবো তোশিমিচি, শিবুসাওয়া এইইচি, ডগলাস ম্যাকআর্থার, ইকেদা হায়াতো এবং মাৎসুশিতা কোনোসুকে। আধুনিক যুগের শেষ চার জনের মধ্যে শিবুসাওয়াও অন্তর্ভুক্ত আছেন, বাকিরা হলেন ওওকুবো তোশিমিচি, ইকেদা হায়াতো ও মাৎসুশিতা কোনোসুকে। প্রকৃতপক্ষে মেইজি যুগে (১৮৬৮-১৯১২) জাপানকে আধুনিক করেছেন এমন আরও অনেক মেধাবী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন যেমন ইতো হিরোফুমি জাপানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, ওওকুমা শিগেনোবু প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষাবিদ, মিৎসুবিশি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ইওয়াসাকি ইয়াতারোও, চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদ ফুকুজাওয়া ইউকিচি, শিক্ষাবিদ ড. নারুসেই জিনজো, আধুনিক সমর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা মাসুজিরো ওমুরা, রাষ্ট্রনায়ক সাইগো তাকামোরি, নৌবাহিনীর প্রকৌশলী কাৎসু কাইশু, ব্যবসায়ী ইয়াসুদা জেনজিরো, চিকিৎসক-আমলা-রাজনীতিবিদ গোতোও শিনপেই, ব্যবসায়ী মিৎসুই সাবুরোসুকে প্রমুখ তবে শিবুসাওয়া ব্যতিক্রম এই কারণে যে অর্থনীতি, বাণিজ্য, সামাজিক ও শিক্ষাগত উন্নয়নে তাঁর অবদান একথায় তুলনারহিত। দুঃখের বিষয় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তাঁদের নাম বিস্মৃতপ্রায়। এর কারণ হচ্ছে তাঁরা সকলেই ছিলেন খাঁটি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং প্যান-এশিয়ানিজম বা প্রাচ্যভ্রাতৃত্ববোধে বিশ্বাসী। এই চিন্তাবাদের উদগাদা বিশিষ্ট প-িত ও শিল্পাচার্য ওকাকুরা তেনশিন। তেনশিনসহ উপরোক্ত ব্যক্তিদের ইতিহাস পড়ালে যদি জাপান আবার সাম্রাজ্যবাদী হয়ে ওঠে এই শঙ্কায় তাঁদেরকে মুছে ফেলা হয়েছে শিক্ষা-বিষয় থেকে। তাঁদের জীবন ও কর্মকা- কোনো প্রতিষ্ঠানেই পাঠ্য হিসেবে পড়ানো হয় না। এটা অবশ্যই স্বীকার্য যে শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেম থেকেই তাঁরা গ্রামীণ জাপানকে অতিদ্রুত আমেরিকা ও ইউরোপের সমকক্ষ করতে পেরেছিলেন। জাপান হয়ে উঠেছিল ঊনবিংশ-বিংশ শতকে এশিয়ার মহাশক্তি ‘দাইনিপ্পন তেইকোকু’ বা ‘এম্প্যায়ার অব জাপান’। উনবিংশ-বিংশ শতকে পৃথিবীব্যাপীই জাতীয়তাবাদ জেগে উঠেছিল চরমভাবে মূলত শ্বেতাঙ্গ সাম্রাজ্যবাদীদের কারণেই। জাপানও তার ব্যতিক্রম ছিল না। সেই যুগে শিবুসাওয়াদের গড়া আধুনিক জাপান এশিয়ার প্রথম শিল্পোন্নত রাষ্ট্র এবং উন্নয়নের পথিকৃৎ। এশিয়ার একমাত্র স্বাধীন দেশ।
১৮৪০ সালে সাইতামা জেলায় জন্ম শিবুসাওয়া তরুণকালে স¤্রাটভক্ত এবং বিদেশী-বিদ্বেষী ছিলেন। কিন্তু ২৭ বছর বয়সে ১৮৬৭ সালে প্যারিস আন্তর্জাতিক মেলায় জাপানি প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে দেড় বছর ইউরোপ ঘুরে পাশ্চাত্য সমাজব্যবস্থা ও অন্যান্য দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দেখে তাঁর ধ্যানধারণার আমূল পরিবর্তন ঘটে। ফিরে এসে সেই অভিজ্ঞতাকে আধুনিক জাপান গড়ে তোলার কাজে লাগান। তারই ফলশ্রুতি শত শত প্রতিষ্ঠান স্থাপন যেগুলোর কয়েকটি এখনো বহাল তবিয়তে অস্তিত্বমান যেমন মিজুহো ব্যাংক (প্রাক্তন দাইইচি কোকুরিৎসু গিনকো), টোকিও মেরিন অ্যান্ড নিচিদোও ফায়ার ইন্স্যুরেন্স, ইম্পেরিয়াল হোটেল, টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ, টোকিও গ্যাস, তোয়োবো কর্পোরেশন, কেইহান ইলেক্ট্রিক রেলওয়ে, তাইহেইয়োও সিমেন্ট, ওওজি পেপার মিল, সাপ্পোরো বিয়ার, এনওয়াইকে শিপিং, শিমিজু কন্সট্রাকশন, নিহোন কেইজাই শিম্বুন পত্রিকা, কাওয়াসাকি হ্যাভি ইন্ডাস্ট্রি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। টোকিওর হিতোৎসুবাশি বিশ্ববিদ্যালয়, কেইজাই বিশ্ববিদ্যালয়, প্রথম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
ভারতের টাটা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা জামশেঠজি নুসেরওয়ানজি টাটার সঙ্গে ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠতা। টাটার সঙ্গে হাত মেলান ১৮৯৩ সালে যখন টাটা আমেরিকার শিকাগোতে বিশ্বধর্ম সম্মেলনে যাওয়ার সময় মাঝপথে জাপানে বিরতি নিয়েছিলেন শিবুসাওয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য। তাঁরা একমত হন ভারত মহাসাগরে জাহাজ পরিবহন ব্যবসায় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য দমনে। সামুদ্রিক পরিবহন ও সিল্ক ব্যবসায় টাটা ও শিবুসাওয়ার নিপ্পন ইউছেন কাইশার মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয়। তিনি ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত জাপান-ভারত অ্যাসোসিয়েশনের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁর উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাপান ভ্রমণ করেন ১৯১৬ সালে। সবুজসমৃদ্ধ তাঁর গ্রীষ্মাবাস টোকিওর আসুকায়ামা বাগানবাড়িতে রবীন্দ্রনাথকে এক জমকালো সংবর্ধনা প্রদান করেন। ১৯২৪ ও ১৯২৯ সালেও তাঁকে তাঁর বাসভবনে আমন্ত্রণ জানান। ১৯২৪ সালের ১১ জুন তাঁর সম্মানে এক জাঁকজমকপূর্ণ নৈশভোজের আয়োজন করেন টোকিওর বিখ্যাত ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্লাবে। অনেক জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন সেদিন। সেই অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ যে দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়েছিলেন সেটা ‘ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন’ নামে বিশ্বভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের জন্য মোটা অঙ্কের চাঁদাও শিবুসাওয়া রবীন্দ্রনাথের হাতে প্রদান করেছিলেন। মনেপ্রাণে ব্যবসায়ী হলেও শিবুসাওয়া ছিলেন গভীর প্রকৃতিপ্রেমিক। শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশের পথিকৃৎ। উপনিষদ প্রভাবিত রবীন্দ্রনাথের অরণ্যাশ্রয়ী শিক্ষাদর্শনকে তিনি খুব আগ্রহসহকারে উপলদ্ধি করেছিলেন বলে তাঁর শান্তিনিকেতন প্রকল্পে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। যদিও সারাজীবন তিনি চীনা মহাপুরুষ দার্শনিক কনফুশিয়াস দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলেন, ঞযব অহধষবপঃং ড়ভ ঈড়হভঁপরঁং গ্রন্থটি ছিল তাঁর কাছে বাইবেল-স্বরূপ। চীনা হিসাবযন্ত্র ‘অ্যাবাকাস’ ছিল তাঁর অনুপ্রেরণার উৎস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আমৃত্যু উৎসাহী ছিলেন।
কীভাবে সেই একজন ব্যক্তি এতগুলো প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সফল হয়েছিলেন ভেবে অবাক হতেই হয়! তিনি প্রতিটি কাজে সফল হয়েছিলেন মূলত সাধারণ মানুষের কল্যাণকে জীবনের লক্ষ্য পূরণের প্রধান ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন বলে। মানুষের সেবা করাই ছিল তাঁর স্বপ্ন। সাধারণ মানুষও যাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে এই জন্য একাধিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি অর্থনৈতিক বা ব্যবসা ক্ষেত্রে যে বিষয়টি জাপানে চালু করেছিলেন সেটা হলো, গাপ্পন শুগি নীতি অর্থাৎ একাধিক ব্যক্তির পুঁজি একত্রিত করে কাবুশিকি কাইশা বা অংশীদারিত্বভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা। তিনি তাই করেছিলেন যা পরে অন্যান্য ব্যবসায়ীরা এই পথ অনুসরণ করেন। এতে করে দায়িত্ব ভাগ করে নেবার প্রবণতা সৃষ্টি হোক এটাই শিবুসাওয়া চেয়েছিলেন। অর্থনীতি যেমন তেমনি শিক্ষা-সামাজিক ক্ষেত্রে এই নীতির দ্বারা জনগণের সেবা না করলে দেশ ও জাতির উন্নতি হবে না এটা তিনি উপলদ্ধি করেছিলেন ফরাসী দার্শনিক সেইন্ট সিমনের দর্শন থেকে যা গ্রহণ করেছিলেন তৃতীয় নেপোলিয়ন। এই অংশীদারিত্বের ভিত্তিতেই শিবুসাওয়া ১৯২৩ সালের মহাকানতোও ভূমিকম্পের পর রাজধানী টোকিওকে পুনর্নিমাণে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে সফল হয়েছিলেন। কাজেই একুশ শতকে এসে এখন আর সাহায্য-সহযোগিতা নয়, প্রয়োজন যে কোনো সমস্যা সমাধান ও নতুন কিছু করার জন্য অংশীদারিত্ব এবং তা উদ্যোক্তার সামর্থ্য অনুযায়ী, তাহলে দায়িত্ববোধ জন্মাবে। উন্নতির চাবিকাঠি একমাত্র দায়িত্বজ্ঞানের মধ্যেই নিহিত। শুধুমাত্র সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান কোনো দেশ বা জাতিকে এগিয়ে নিতে পারে না তা বাংলাদেশের বিগত ৪০ বছরের উন্নয়ন চিত্রের দিকে তাকালে একেবারেই সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়ে।
তাঁর অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনা এবং পুঁজির যথার্থ ব্যবহার, নীতি ও কৌশল সম্পর্কে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের ব্যবসায়ীরা গবেষণা করলে অনেক কিছু শিখতে পারবে বলে মনে করেন বিশ্বের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা। জগৎখ্যাত অর্থনীতিবিদ পিটার ড্রুকার শিবুসাওয়া সম্পর্কে উচ্চধারণা পোষণ করে তাঁর গ্রন্থ ম্যানেজমেন্টের ভূমিকায় মন্তব্য করেছেন, ‘ঐব যধফ ধহ রহংরমযঃ বধৎষরবৎ ঃযধহ ধহু ড়ঃযবৎ রহ ঃযব ড়িৎষফ ঃযধঃ ঃযব বংংবহঃরধষ হধঃঁৎব ড়ভ নঁংরহবংং ধফসরহরংঃৎধঃরড়হ রং হড়ঃযরহম ড়ঃযবৎ ঃযধহ ৎবংঢ়ড়হংরনরষরঃু.’ (তৎকালীন বিশ্বে সবার চেয়ে তিনি প্রথম উপলদ্ধি করেছিলেন যে, প্রচলিত ব্যবসা প্রশাসনের প্রয়োজন নেই যা দরকার দায়িত্ববোধ।) ২০১১ সালে শিবুসাওয়ার আশিতম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে অতিথি ছিলেন আমেরিকার আধুনিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক গবেষক ডেভিড জেমস ব্রুনার, তিনি আজকের বিশ্বে শিবুসাওয়ার গুরুত্ব অনুধাবন করে বলেন, ‘বিস্মৃত পুঁজিবাদের ঈশ্বর একুশ শতকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাবেন।’
শিবুসাওয়া এইইচির মতো এমন উন্নয়নমস্ক উদ্যোগী মানুষ এখন জাপানেও খুব দুর্লভ। কিন্তু তাঁর চিন্তাদর্শন বর্তমানে কতখানি প্রয়োজ্য তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে উপলদ্ধি করা যায়। বাংলাদেশের উদীয়মান তরুণ ব্যবসায়ীরা তাঁর কাছ থেকে অনেক পথ ও নির্দেশ খুঁজে নিতে চেষ্টা করলে লাভবান হবেন।

No comments

Powered by Blogger.