নিউইয়র্ক টাইমসের- এ সপ্তাহের সেরা বই

টু গ্রেভস স্পেশাল এজেন্ট পেন্ডারগাস্টের চোখের সামনেই তার স্ত্রী হেলেনকে কিডন্যাপাররা অপহরণ করে নিয়ে যায়। এদের ধাওয়া করতে করতে মেক্সিকোতে প্রবেশ করা হয়।
কিন্তু অপহরণকারীদের নাগাল পাওয়া যায় না। তার সকল চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ব্যর্থ মনোরথে পেন্ডারগাস্ট ফিরে আসে তার নিউইয়র্কের অ্যাপার্টমেন্টে। বহির্বিশ্বের সকলের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিঃসঙ্গতাকে সাথী করে দিন কাটাতে থাকে পেন্ডারগাস্ট। কিন্তু হঠাৎ করেই ম্যানহাটনের হোটেলগুলোতে একের পর এক খুন হতে থাকে। ঘাতক মানসিক প্রতিবন্ধী এক বালক। একে ধরার জন্য এনওয়াইপিডি লেফটেন্যান্ট ডি অগাস্টা তার বন্ধু পেন্ডারগাস্টের শরণাপন্ন হয়। প্রথমে পেন্ডারগাস্ট এই কাজে আগ্রহী না হলেও খুব দ্রুত বুঝতে পারল এই হত্যাকা-গুলোর মধ্যেই তার স্ত্রীর অপহরণকারীদের ধরার সংকেত রয়েছে। তাই সে সংকেত অনুসরণ করে তার স্ত্রীর অপহরণকারীদের খুঁজে বের করতে বদ্ধপরিকর হয়। সংকেত অনুযায়ী সে চলে যায় দক্ষিণ আমেরিকার গভীর অরণ্যের মাঝে। মুখোমুখি হয় ভয়ানক হিংস্র শত্রুর। প্রতিশোধের আগুনে দাউদাউ করে জ্বালানোর জন্য পেন্ডারগাস্ট শুরু করে শত্রুর মোকাবেলা। কনফুসিয়াস বলেছিল, “তুমি যদি প্রতিশোধ নিতে যাও তবে প্রথমেই দুটি কবর খুঁড়ে রাখ” প্রতিশোধ নিতে গিয়ে পেন্ডারগাস্ট এই সত্য হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিল। বারো বছর ধরে পেন্ডারগাস্ট ধরেই নিয়েছিল যে তার প্রিয়তমা স্ত্রী হেলেন মৃত। কিন্তু তার স্ত্রীকে সে জীবিত অবস্থায় দেখতে পেয়েছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয়, তাদের মিলন ছিল ক্ষণস্থায়ী, তার চোখের সামনেই তার স্ত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আর পেন্ডারগাস্ট তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে হন্য হয়ে ফিরছিল। এখন পেন্ডারগাস্ট মুখোমুখি হলো অপ্রতিরোধ্য ভয়ংকর এক সিরিয়াল কিলারের। ডগলাস প্রেস্টন এবং লিংকন চাইল্ডের এই বইটি সত্যিই অসাধারণ একটি থ্রিলার বই।

ফিফটি শেডস অব গ্রে
এ্যানাসটেশিয়া, বাইশ বছরের তরুণী যার ডাক নাম এ্যানা। সে তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ক্যাথরিন ক্যাভানাগের সাথেই থাকে। ক্যাথরিন কলেজের স্টুডেন্ট পেপারে লিখছে। কিন্তু অসুস্থতার জন্য সে এ্যানাকে ২৭ বছর বয়সী ধনী তরুণ ব্যবসায়ী ক্রিস্টিয়ান গ্রের ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য পাঠায়। এ্যানার তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিস্টিয়ানকে ভাল লেগে যায়। কিন্তু সে ভয় পায়। ক্রিস্টিয়ানার অফিস ত্যাগ করার সময় তার মনে হতে থাকে ইন্টারভিউ নেয়াটা ভাল হয়নি। এই কারণে এ্যানা মনে মনে চায় আর যেন কখনও ক্রিস্টিয়ানের সাথে তার দেখা সাক্ষাৎ না হয়। কিন্তু একদিন এ্যানা যে হার্ডওয়ার স্টোরে কাজ করে সেখানে ক্রিস্টিয়ানের হাজির হওয়া দেখে অবাক হয়ে যায়। ক্রিস্টিয়ান যখন তার দোকান থেকে নানা জিনিস কিনছে তখন এ্যানা ক্রিস্টিয়ানাকে বলে যে, ক্যাথরিনের লেখার জন্য তার কতগুলো ফটোগ্রাফের প্রয়োজন। তখন ক্রিস্টিয়ানা এ্যানাকে তার ফোন নম্বর দেয়। ক্যাথরিন ক্রিস্টিয়ানাকে ফোন করার জন্য এ্যানাকে পীড়াপীড়ি করে এবং তাদের ফটোগ্রাফার বন্ধু জোশে রোডরিকুইজকে সঙ্গে নিয়ে একটি ফটোশূট নিতে বলে। পরের দিন এ্যানা জোশেকে নিয়ে ক্রিস্টিয়ানার হোটেলে যায়। ক্রিস্টিয়ানা এ্যানা কারও সাথে ডেটিং করেছে কিনা তা জিজ্ঞেস করে। এ্যানা না বোধক অভিব্যক্তি প্রকাশ করলে ক্রিস্টিয়ানা তার পরিবার সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করে। এ্যানা জানতে পারে ক্রিস্টিয়ানা এখনও একা। কিন্তু তার কাছে মনে হতে থাকে ক্রিস্টিয়ানার কাছে সে যথেষ্ট আকর্ষণীয় নয়। কিন্তু তারপরও তাদের দেখা-সাক্ষাৎ চলতে থাকে। এ্যানার পরীক্ষা শেষে ক্রিস্টিয়ানা তার জন্য টেস অব দ্য ডিআরবারবাইলস বই উপহার দেয়। কিন্তু পরের রাতে এ্যানা যখন তার বন্ধুদের সাথে ড্রিংক করতে যায় তখন জোশে তাকে জোর করে চুমো খায়। আর সেই সময়ে ক্রিস্টিয়ানা উপস্থিত হয়ে পড়ে। ফলে তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। অন্যদিকে ক্রিস্টিয়ানার ভাই এলিয়টের সাথে ক্যাথরিনের প্রেম আছেÑযা পরবর্তীতে এ্যানা বুঝতে পারে। এ্যানা আর ক্রিস্টিয়ানার সম্পর্ক এক সময় জোড়া লেগে যায় এবং তারা যৌন মিলন করে। একবার ক্রিস্টিয়ানা তার হেলিকপ্টারে করে এ্যানাকে তার এ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যায় এবং তারা এতদিন যা করেছে তা প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে জোর করে এ্যানাকে দিয়ে পেপার সাইন করায়। আরেকটি চুক্তি করে যেখানে বলা হয়, তাদের মধ্যে কোন রোমান্টিক সম্পর্ক থাকবে না, থাকবে শুধু যৌনতা। আর থাকবে কর্তৃত্ব পরায়ণতা ও অধীনতা। এই চুক্তি অনুযায়ী তারা উদ্যম যৌন লীলায় মত্ত হয়ে পড়ে। এ্যানা ক্রিস্টিয়ানার কাছ থেকে অনেক দামী উপহার পেতে থাকে। কিন্তু এ্যানা যখন উপলব্ধি করে যে, আসলে তাদের মাঝে যৌন সম্পর্ক ছাড়া অন্য কোন সম্পর্ক নেই। তখন সে ক্রিস্টিয়ানা থেকে দূরে চলে যায়। আবার তারা একত্রিত হয়। আবার সেই চুক্তি নিয়ে তাদের মাঝে জটিলতা দেখা যায়। ফলে এ্যানা চিরতরে ক্রিস্টিয়ানাকে ছেড়ে আবার তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ক্যাথরিনের কাছেই ফিরে আসে। এভাবেই এই বইটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। ব্রিটিশ লেখক ইএল জেমসের এই বইটিতে যৌনতার ছড়াছড়ি থাকলেও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কিছু কঠিন বাস্তবতা। বন্ডেজ, ডমিনেন্স, সাবমিশন এবং মেসোফিজম জীবনে কিরূপ প্রভাব ফেলে তাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বইটিতে।

দ্য প্যারিস ওয়াইফ
দ্য প্যারিস ওয়াইফের মূল চরিত্র হ্যাডলে রিচার্ডসন। আর্নেস্ট হ্যামিং ওয়ের স্ত্রী হ্যাডলে রিচার্ডসনের জীবনের দর্পণই এই বইটি। স্মৃতি জাগানিয়া এই বইটিতে একদিকে তুলে ধরা হয়েছে উচ্চাশা, বিশ্বাসঘাতকতা আর অন্যদিকে ফুটিয়ে তোলাহ হয়েছে, দু’জন চিরস্মরণীয় ব্যক্তির ভালবাসা। আটাশ বছর বয়সী হ্যাডলের জীবন আমূলে পরিবর্তিত হয়ে যায় আর্নেস্ট হ্যামির ওয়েকে বিয়ে করার মধ্য দিয়ে। এই দম্পতির বিয়ে হওয়ার পর তারা প্যারিসের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। প্রথম দিকে তারা সুখী দম্পতি হিসেবে বিবেচিত হলেও ক্রমে আর্নেস্ট হ্যামিংওয়ের জীবনে ও রুচিতে পরিবর্তন হতে থাকে। সে অতিরিক্ত মদ্যপান শুরু করে।
নানা রকম পার্টিতে অংশগ্রহণ করে সুন্দরী মহিলাদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে থাকাটাকে স্বাচ্ছন্দ্যময় মনে করতে থাকে। একদিকে প্রচুর অর্থ হ্যামিংওয়ে উপার্জন করছে আর অন্যদিকে দেদার সে টাকার অপব্যয় করছে। হ্যামিংওয়ের এই পরিবর্তন হ্যাডলির জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। একটা সময় তারা উভয়েই উপলব্ধি করে যে, তাদের দাম্পত্য জীবন সঙ্কটে পরিপূর্ণ। হ্যাডলে হ্যামিংওয়ের প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বস্ত থাকলেও হ্যামংওয়ের ওই জঘন্য আচরণগুলো তাকে কষ্ট দিত। একটা সময় তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। এই বইটিতেহ হ্যাডলে রিচার্ডস ও আর্নেস্ট হ্যার্মিংওয়ের দাম্পত্য জীবনের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। একজন মহিলার আত্মত্যাগ, দুঃখবোধ ও মানসিক যন্ত্রণাকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পওলা ম্যাকলেইন এই বইটির মধ্য দিয়ে হ্যাডলে রিচার্ডসের জীবনের সত্যিকার ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো পাঠকের সামনে নিপুণভাবে তুলে ধরে।

লকট অন
মার্ক গ্রেনির সহায়তায় টম ক্লেন্সির লকট অন বইটি একটি থ্রিলারধর্মী বই। জ্যাক রায়ানকে একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সে আমেরিকাকে বিপদসঙ্কুল সময় থেকে উদ্ধার করার জন্য এবং প্রেসিডেন্টকে শান্তিপূর্ণভাবে অবসর নেয়ার জন্য কাজ শুরু করে। কিন্তু তার পরিকল্পনা সুসংহত ছিল না। তার প্রতিদ্বন্দ্বী তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু জন ক্লার্কের ওপর আক্রমণ চালায়। জন ক্লার্ক আন্তর্জাতিক ম্যানহান্টের বিষয়ে পরিণত হয়। ক্লার্কও তিনটি মহাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। তাকে শুরু করতে হয় কঠিন সংগ্রাম। সারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তার ভ্রমণ শুরু হয়ে যায় শত্রুর খোঁজে, যে কিনা তাকে একটি অপরাধের জন্য দায়ী করছেÑযা সে কখনও করেইনি। ইতোমধ্যে অত্যন্ত গোপনীয় ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি ক্যাম্পাস এক অপ্রতিরোধ্য শত্রুর মুখোমুখি হয়। একজন পাকিস্তানী জেনারেল সন্ত্রাসবাদ পরিচালনার পরিকল্পনা করছে। এই পরিস্থিতিতে জ্যাক রায়ান, ডিং শ্যাভেজ এবং ডমিনিক কারসো জন ক্লার্ককে খুঁজে বের করার জন্য এবং সন্ত্রাসবাদকে প্রতিহত করার অভিযানে নেমে পড়ে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অন্যতম থ্রিলার বই হচ্ছে এই লকট অন বইটি।

দ্য ইজ্্ অব নেভার
বিশ বছরের তরুণী ক্যামরায়েন বেনেট সব সময় জীবনে বৈচিত্র্য খুঁজে বেড়ায়। সে চায় না তার জীবনে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটুক। নানা বৈচিত্র্যময় কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে সে তার জীবন অতিবাহিত করে এবং তার কাছে মনে হয় তার জীবন সঠিকভাবেই চলছে। ক্যামরায়েন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে বসবাস শুরু করে এবং সেই সাথে শুরু করে নতুন একটি চাকরি। কিন্তু এক রাতে নর্থ ক্যারোলিনার একটি ক্লাবে ঘটে যাওয়া ঘটনা তার জীবনকে ওলটপালট করে দেয়। সে তার জীবনকে পুরোপুরি পাল্টে ফেলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। একটি পার্স, মোবাইল ফোন ও ছোট ব্যাগ নিয়ে সে উদ্দেশ্যহীনভাবে গ্রেহাউন্ড বাসে উঠে পড়ে। যাত্রা শুরু করে নিজেকে খুঁজে পাবার। তার সাথে পরিচয় হয় এন্ড্রু প্যারিসের। অন্য সবার মতোই সাধারণ হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমÑ যা ক্যামরায়েনের হৃদয়ে নাড়া দিলেও সে প্রতিজ্ঞা করে, কখন প্রেমে পড়বে না। কিন্তু এন্ড্রু তাকে দেখায় জীবনের স্বরূপ। তার প্রতিজ্ঞার দেয়াল ভেঙে পড়ে। এন্ড্রুর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে ক্যামরায়েন। জিএ রেডমার্কসকির এই বইটি রোমান্টিক ও জীবনধর্মী একটি বই।
মোঃ আরিফুর রহ

No comments

Powered by Blogger.