চুয়াডাঙ্গায় ৬.৮ ডিগ্রী- কুয়াশার চাদরে মোড়া রাজধানী ॥ মৃত আরও ৪

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম সূর্যের মুখ দেখা যায়। সকাল থেকেই কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকা নগরবাসীর ঠা-ায় কাঁপতে কাঁপতে ঘুম ভাঙ্গে। দোকানপাট খুলতে দেরি হলেও চায়ের দোকানগুলোতে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
বর্তমানে জেকে থাকা শীতে যখন এই অবস্থা তখন আবহাওয়া অধিদফতর জানালো আরও খারাপ খবর। তারা জানায়, সামনে শীত পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। বর্তমানে অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহ আরও দু’ তিন দিন চলবে। এর পরই শীত পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের এক কর্মকর্তা।
এদিকে সময় যত যাচ্ছে দিনের তাপমাত্রা ততই কমে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার এ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে দিনের তাপমাত্রা কমে যাওয়া কারণে দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধানও কমে আসছে। ফলে শীত কমার পরিবর্তে তা আরও বেড়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। টেকনাফে এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
এদিকে তীব্র শীতের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে একজন ১ দিনের, দুজন নয় মাসের শিশু অন্যজন ৮০ বছরের বৃদ্ধ। এ ছাড়া শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। ঘন কুয়াশার কারণে বিভিন্ন নৌরুটে ফেরি চলাচলে বিঘœ ঘটছে। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল বলে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার জানিয়েছেন।
বর্তমানে ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহের কারণে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই জেঁকে বসেছে শীত। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাতের তাপমাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। তবে প্রথমদিকের ঘন কুয়াশা শৈত্যপ্রবাহের কারণে অনেকটাই কেটে গেছে। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘনকুয়াশা পড়ছে। দুপুরের দিকে তা অনেকটাই কমে আসছে। তবে ঘন কুয়াশা কিছুটা কমে এলেও নদী অববাহিকায় ঘন কুয়াশা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
সাতক্ষীরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, শীতের তীব্রতায় জেলায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী গত চার বছরে এটাই সাতক্ষীরার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ঘন কুয়াশার কারণে সকাল থেকে রোদের দেখা মেলেনি। প্রচ- শীতের মধ্যে সরকারী স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা শিশু ও তাদের অভিভাবকদের পড়তে হয় বাড়তি সমস্যায়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে শহরে লোক সমাগম ছিল কম।
মুন্সীগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে ঘন কুয়াশার কারণে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৫টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকে। এ সময় চারটি ফেরি মাঝ পদ্মায় আটকা পড়ে। কনকনে শীতে সহস্রাধিক যাত্রী চরম বিড়ম্বনায় শিকার হয়। গত ৯ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ১১৭ ঘণ্টা ফেরি সার্ভিস সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় যাতায়াতকারী পণ্য পরিবহনকারী যানবাহন এবং বাস ও নৈশকোচের যাত্রীরা প্রায় প্রতিদিনই পড়ছে চরম ভোগান্তিতে। এ ছাড়া তীব্র শীতে এ অঞ্চলের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত ব্যাহত হওয়া ছাড়াও ব্যবসা বাণিজ্যসহ এখানকার অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
কুড়িগ্রাম থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ঘন কুয়াশা আর ঠা-া বাতাস মানুষের দুর্গতি ও শীতের কষ্টের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জেলায় ২ লাখ গরিব পরিবারের একেবারেই অর্থসাধ্য নেই শীতবস্ত্র কেনার। ধরলা বহ্মপুত্রপারের মানুষদের শীত চরম দুরবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
গাইবান্ধা থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, উত্তরের কনকনে হিমেল হাওয়া এবং ঘন কুয়াশার কারণে জেলায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত দু’সপ্তাহ ধরে জেলার কোথাও সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। তীব্র শীতের কারণে জেলা ও উপজেলা শহরের রাস্তায় বিকেলের পর থেকেই লোক চলাচল কমতে শুরু করে। ক্রেতা না থাকায় ব্যবসায়ীরাও দোকানপাট সন্ধ্যার পরপরই বন্ধ করে দিচ্ছেন। শ্রমজীবী মানুষের হাতে কাজ না থাকায় তারা বিপাকে পড়েছে। কৃষি শ্রমিকরা মাঠে নামতে পারছে না। গাইবান্ধা আধুনিক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অসুস্থতাজনিত কারণে যেসব শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে তাদের বেশির ভাগই শীতজনিত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এ ছাড়া বয়স্করা শ্বাসকষ্ট ও শীতজনিত অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়ক, আঞ্চলিক ও অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে বেলা ১২টা পর্যন্ত যানবাহনগুলো হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। শীতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণ করা হলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল।গৌরনদী থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, গত এক সপ্তাহের হাড় কাঁপানো শীতে বরিশালের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যে দুপুরের পরে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও তার স্থায়িত্ব হচ্ছে খুবই কম। শীতের কারণে গরম কাপড়ের দোকানে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের লোকজনের ভিড় বেড়েছে লক্ষণীয়ভাবে। লোকজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছে। তীব্র শীতের কারণে দরিদ্র কৃষকেরা জমিতে কাজ করতে না পারায় তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। প্রচ- শীতে বৃহস্পতিবার সকালে জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার পূর্ব সুজনকাঠি গ্রামে জেন্নাত আলী মোল্লা (৮০) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছে।আমতলী থেকে সংবাদদাতা জানান, বুধবার দিবাগত রাতে আমতলীতে শৈত্যপ্রবাহে আফিদ জামান নামের নয় মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এলাকায় শৈত্যপ্রবাহে জন-জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত ৫ দিনে আমতলী হাসপাতালে শীতজনিত রোগ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৭ শিশু ভর্তি হয়েছে। ঠা-াজনিত রোগ সর্দি, কাশি জ্বর ও নিউমোনিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।

No comments

Powered by Blogger.