ব দ লে যা ও ব দ লে দা ও মি ছি ল- বাড়িভাড়া: চাই কার্যকর আইন ও জনসচেতনতা by ফারিহা তাবাসসুম

‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’ ব্লগে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও নির্বাচিত সাতটি ইস্যু নিয়ে অব্যাহত আলোচনা হচ্ছে। আজ বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ চাই ইস্যুতে একটি বিশ্লেষণাত্মক অভিমতসহ আরও দুজন লেখকের নির্বাচিত মন্তব্য ছাপা হলো।


কার্যকর রাজনৈতিক পরিকল্পনার অভাব এবং রাষ্ট্রীয় নানা অব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশের মানুষের শহরমুখিতা দ্রুত বেড়ে চলেছে। চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সুচিকিৎসা, উচ্চতর পড়াশোনাসহ জীবন-জীবিকার যাবতীয় সুযোগসুবিধা মফস্বলের তুলনায় শহরে অনেক বেশি থাকায় মানুষ একরকম বাধ্য হয়েই ভাগ্যান্বেষণে শহরে ছুটে আসছে। কিন্তু শহরে জনসংখ্যার অনুপাতে পর্যাপ্ত আবাসনসুবিধা বিদ্যমান নেই। জীবিকার তাগিদে শহরে আসা এই মানুষগুলো ভয়াবহ আবাসনসংকটে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। কোনোরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই জোগাড় করতেই তাদের আয়ের সিংহভাগ পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
সাধারণ মানুষের এই অসহায়ত্বের সুযোগে শহরের অধিকাংশ বাড়িওয়ালা কোনো আইনকানুন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যখন-তখন বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছেন। বাড়িভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে দ্বন্দ্ব এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। সময়োপযোগী এবং কার্যকর আইনের অভাবে গুরুতর নাগরিক সমস্যাটি দিন দিন আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। মূলত বাড়িভাড়া-সংক্রান্ত আইন আমাদের দেশে কখনোই যথোপযুক্ত করে তৈরি হয়নি। বর্তমানে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১ নামে একটি আইন থাকলেও এর কোনো কার্যকারিতা নেই। আইন সংশোধন ও বাস্তবায়নের জন্য আদালতে রিট করা হয়েছে। চূড়ান্ত রায় এখনো হয়নি।
বর্তমান আইন অনুযায়ী বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক সিটি করপোরেশনের রেন্ট কন্ট্রোলাররা। তারা মূলত বাণিজ্যিক চুক্তির বিরোধ নিষ্পত্তিই করে থাকেন। আবাসিক বাড়িমালিক ও ভাড়াটেরা মিলে মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ করবেন এ কথা আইনে বলা হয়েছে। কিন্তু এ জন্য কতগুলো মান ঠিক করে দেওয়া আছে, যেগুলো বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। বাড়িওয়ালা কর্তৃক প্রতি মাসে পাকা রসিদ দেওয়ার বিধান এ আইনে বলা আছে। বাড়িভাড়ার আগে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটে লিখিত চুক্তি করবেন এবং চুক্তিতে কখন, কীভাবে ভাড়া বাড়ানো হবে, তা বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। যখন-তখন ভাড়াটেকে বাসা খালি করার নোটিশ দেওয়ার এখতিয়ার বাড়িওয়ালার নেই। দুই মাসের বেশি ভাড়া অগ্রিম নেওয়া যাবে না। বাড়িভাড়ার জন্য বিদ্যুতের আলাদা মিটার বসানো এবং প্রতি মাসে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিলের কপি ভাড়াটেকে সরবরাহ করার কথাও এ আইনে বলা হয়েছে।
প্রচলিত আইনটির কিছু দুর্বলতা আছে ঠিক কিন্তু আইনটি সম্পর্কে নাগরিকেরা জানেন না, জানতে চেষ্টাও করেন না। সব ভাড়াটেকে এই আইনটি জানতে হবে। যা আছে সেটাকেই ব্যবহার করতে হবে। প্রথম দায়িত্ব হলো চুক্তি করা। আমরা সেটাই করি না। নানা সমস্যার উদ্ভব ওখান থেকেই শুরু হয়। ফলে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে দ্বন্দ্বের অবসান হচ্ছে না।
বাড়িওয়ালারা অভিযোগ করেন, ভাড়াটে মাস শেষে বাড়িভাড়া দিতে গড়িমসি করেন। পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদির অপচয় করেন। বেশি রাত করে বাড়ি ফেরেন, গেট বন্ধ পেয়ে ধাক্কাধাক্কি করে অন্যদের ঘুম হারাম করেন। স্থাপনার কোনো যত্ন-আত্তি করেন না। অবহেলা করে দেয়াল, গ্লাস, ফ্লোর, বেসিন, শাওয়ার, কমোড ইত্যাদি ভেঙে নষ্ট করেন। ভাড়া নেওয়ার সময় ভাড়াটে তথ্য গোপন করেন। বাসায় অত্যধিক মেহমান তথা অযাচিত আগন্তুকের আনাগোনা ইত্যাদি।
ভাড়াটেরা অভিযোগ করেন, বাড়িওয়ালা সব সময় বাড়িভাড়া বাড়ানোর পাঁয়তারা করেন। কথায় কথায় বাসা ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন। অকারণে খারাপ ব্যবহার করেন, স্থানীয় মাস্তানদের ভয় দেখান। তাঁদের সেবার মানসিকতার পরিবর্তে অহংবোধ কাজ করে। ভাড়াটের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে চান না। পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলের মূল কপি না দিয়ে হাতে লেখা ভুতুড়ে বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। ইচ্ছা করে পানির প্রবাহ ধীরগতি করে রাখা হয়। ছাদে যাওয়া ও কাপড় শুকানোর সুযোগ দেওয়া হয় না। মন চাইলেও শেষ বিকেলে ছাদের মুক্ত হাওয়া খাওয়ার শখ ভাড়াটের অপূর্ণই থেকে যায়। ব্যাচেলরদের বাড়িভাড়া দিতে চান না। তাই সামর্থ্য থাকলেও অনেককে মেসের জীবন বেছে নিতে হয়। বাড়িওয়ালা নানা রকম নিয়মকানুনের বেড়াজালে ভাড়াটেকে জড়িয়ে ফেলেন। অনন্যোপায় হয়ে বাড়িওয়ালার অনেক অন্যায় আবদার মেনে নিতে বাধ্য হন।
এই যুদ্ধ কতকাল চলতে থাকবে? আমরা নাগরিকেরাও তো নানা উদ্যোগ নিতে পারি। আশার কথা, শহরে এখন বাড়িমালিক কল্যাণ সমিতির পাশাপাশি ভাড়াটে কল্যাণ সমিতিও গঠিত হচ্ছে। প্রয়োজন এলাকাভিত্তিক কল্যাণ সমিতি করে নিজেদের সংগঠিত করা। দুই পক্ষের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় সাধন করা গেলে সমস্যার অনেকটা গ্রহণযোগ্য সমাধান অবশ্যই করা সম্ভব।
ঢাকা শহরসহ সারা দেশে প্রায় দুই কোটি ভাড়াটে রয়েছে। সংখ্যায় তারা একেবারে নগণ্য নয়। মূলত স্থায়ী সমাধানে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। এটিকে রাজনৈতিক স্বার্থে বিবেচনা করা উচিত নয়। বাড়িভাড়া-সংক্রান্ত বর্তমান আইন, ১৯৯১-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনপূর্বক একটি যুগোপযোগী এবং কার্যকর আইন প্রণয়ন করতে হবে, যাতে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটে—উভয়েরই স্বার্থ রক্ষা হয়।
এতেও সমাধান না হলে সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক মীমাংসার চেষ্টা করবেন। তাতেও কাজ না হলে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার বিধান থাকতে হবে। এর জন্য পৃথক বাড়িভাড়া আদালত গঠন করা যেতে পারে। বাড়িভাড়ার আগে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটে উভয়েই স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তি করবেন। চুক্তিতে বিস্তারিত শর্তাবলি উল্লেখ থাকবে, যাতে পরবর্তী সময়ে কোনো জটিলতার সৃষ্টি না হয়।
বাড়িভাড়া-সংক্রান্ত নাগরিক সমস্যা সমাধানে সরকার, বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটে—সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনগণের সচেতনতা। বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে সম্পর্ককে বর্তমানে যে দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়, তার ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কই করতে পারে এই নাগরিক সমস্যার একটি সুন্দর সমাধান।
 ফারিহা তাবাসসুম: বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের নিয়মিত লেখক।
frh_200769@yahoo.com
ই-মেইল: bjbd@prothom-alo.infofacebook.com/bjbdmichhil

জনমত জরিপের ফলাফল
বদলে যাও বদলে দাও মিছিলের ওয়েবসাইটে নতুন তিনটি জনমত শুরু হয়েছে চলতি সপ্তাহে। আপনিও অংশ নিন জরিপে।
ভেজালমুক্ত খাদ্যের নিশ্চয়তায় প্রতিটি জেলায় খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
 হ্যাঁ ৮৫%  না ৮%
 মন্তব্য নেই ৭%
১২ সেপ্টেম্বর, ২০১২ পর্যন্ত
আপনি কি মনে করেন, বাড়িভাড়া নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণে একটি স্বতন্ত্র কমিশন গঠন অপরিহার্য?
 হ্যাঁ ৮৭%  না ৮%
 মন্তব্য নেই ৫%
১২ সেপ্টেম্বর, ২০১২ পর্যন্ত
আপনি কি মনে করেন, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে এখনই সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন জরুরি?
 হ্যাঁ ৮৪%  না ১২%
 মন্তব্য নেই ৪%
১২ সেপ্টেম্বর, ২০১২ পর্যন্ত
www.bodlejaobodledao.com

No comments

Powered by Blogger.