তারা তিনজন by হ মীর সামী

ভাদ্র মাসের কাঠফাটা রোদ আর প্রচণ্ড গরমে গুলশানের অ্যামাজান ক্লাবে লু হাওয়া বয়ে গেল। টেনিস কোর্টের পাশেই বসে কথা হচ্ছিল এবারের লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার সেরা তিন প্রতিযোগী সামিয়া, প্রসূন ও সামিহার সঙ্গে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন সামিয়া।
অন্য দু'জন চ্যানেল আইয়ের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ফিরছেন। হঠাৎ আকাশ কালো করে নামল ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি নামতেই দুই হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানিতে হাত ভেজাতে ভেজাতে সামিয়া বললেন, 'বৃষ্টি আমার খুব ভালো লাগে। ঝুম বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে আমার কী যে ভালো লাগে তা বলে বোঝাতে পারব না! বৃষ্টিতে ভেজার কারণে বাবা-মায়ের হাতে কত যে বকুনি খেয়েছি তার হিসাব নেই। ক্যাম্পের শেষ দিন আজ। অনেক দিন পর বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকব। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা হবে_ এসব ভাবতেই ভালো লাগছে।' বৃষ্টি কমতেই হাজির হলেন প্রসূন ও সামিহা। এসেই বললেন, 'ভয়ঙ্কর ট্রাফিক জ্যামের কারণে আসতে একটু দেরি হলো আমাদের।' পাশের চেয়ার টেনে নিয়ে বসলেন তারাও। শুরু হলো আমাদের কথোপকথন। প্রতিযোগিতায় কীভাবে এলেন? যেহেতু সামিয়া এবারের প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন, সেহেতু তাকে দিয়েই শুরু করি। 'প্রতি বছরে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার' টেলিভিশনে দেখতাম। অনেক ভালো লাগত। প্রতিযোগিতাটি দেখার সময় মনে হতো, যদি এমন একটি প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে বিনোদন ভূবনে আসতে পারতাম! এরপর আবার সেটা ভুলে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি নিজের মাঝে। হঠাৎ একটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে ঢাকা থেকে অনলাইনে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য নাম লেখাই। এরপর নানা ধাপ পেরিয়ে যখন প্রতিযোগিতার সেরা ২৫-এর মধ্যে এসেছি, তখন একটু একটু করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। যার শেষ হয় সুপারস্টারের মুকুটটা পরার মধ্য দিয়ে। আমি এখনও মাঝে মধ্যে বিশ্বাস করতে পারি না, আমি সবার সেরা। মনে হয় যেন আমি স্বপ্ন দেখছি।' অন্যদিকে ময়মনসিংহের মেয়ে প্রসুন বলেন, 'সামিয়ার মতোই আগে থেকেই এ অনুষ্ঠানটি দেখি। দারুণ লাগে। অনেকটা শখের বসে এতে নাম লেখাই। মনে মনে ভেবেছিলাম যে, প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে নিজে অনেক কিছু শিখতে পারব। আর সে কারণেই অনলাইনে নাম নিবন্ধন করি।' অন্যদিকে সামিহাও তাদের মতোই বিজ্ঞাপন দেখেই রেজিস্ট্রেশন করেছেন। টমবয় স্বভাবের মেয়ে সামিয়া ছোটবেলায় একটু-আধটু গান করলেও প্রতিযোগিতায় এসে নাচের তালিমটা বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করেছেন। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পর প্রায় ছয় মাস ক্যাম্পে থাকতে হয়েছে তাদের। ক্যাম্পের প্রসঙ্গ আসতেই প্রসুন বলেন, 'আমাদের যখন গ্রুমিং শুরু হয় তখন প্রথম দিন কীভাবে কী হবে, কী রকম করব. এসব ভেবে ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু যারা আমাদের এসব গ্রুমিং করাতেন তারা সবাই তখন আমাদের প্রশংসা করেছেন। আমাদের নানা বিষয় ভালোভাবে শেখানোর জন্য চেষ্টা করেছেন। তাকে থামিয়ে দিয়ে প্রসূন উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলেন, 'যখন আমরা সেরা দশে এসেছি, তখন দুটি ঘরে আমাদের থাকতে হতো। কিন্তু তাতে কী হবে, আমরা অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিতাম। অনেক মজা করেছি।' সামিহা বলেন, 'একটি করে পর্বে একজন করে কমতে শুরু করলে আমাদের মনটা খারাপ হতো। কারণ টানা অনেক দিন একত্রে থাকার ফলে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়েছিল। তাদের এখন অনেক মিস করি।' তবে প্রসূন বললেন, 'আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বটা থাকবে আজীবন।
যা ভোলার নয়
প্রথম দিন ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনজন একসঙ্গে বলে উঠেন_ 'আমাদের ভয়ে হাত-পা একেবারেই ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। ঘেমে যাচ্ছিলাম।' সামিয়া বললেন, 'তখন কথা বলার সময় একটি কথা আমি ২০বার করে বলেছি।' এবার সামিহা জানান, 'ক্যাম্পে আমরা সামিয়াকে বেবি বানিয়েছিলাম। কারণ আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিল ও।'
স্বপ্নের দুয়ারের হাতছানি
এ তিনজন সুন্দরী স্বপ্ন দেখেন_ তারা একদিন জয় করবেন এদেশের হাজারো দর্শকের মন। সামিয়ার সঙ্কল্প, 'আমার প্রতি দর্শকদের ভালোবাসাকে সম্মান করতে চাই। নিজেকে একজন আন্তর্জাতিক মানের মডেলদের কাতারে নিয়ে যেতে চাই।' প্রসুন বলেন, 'নিজেকে একজন অভিনেত্রী হিসেবে দেখতে চাই।' ইতিমধ্যে অন্য দু'জনের চেয়ে অনেক বেশি নাটকে অভিনয় করার প্রস্তাবও পেয়েছেন তিনি। আর সামিহা জানালেন, 'প্রথমে একজন ভালো মানুষ এবং পাশাপাশি তারিন ও জয়া আহসানের মতো অভিনেত্রী হতে চাই।' হ

No comments

Powered by Blogger.