পবিত্র কোরআনের আলো-পাপের পরিণতিতেই ইহুদিরা বিতাড়িত হয়েছিল

৯২. ওয়ালাক্বাদ জা-আকুম মুসা বিল বাইয়্যিনা-তি ছুম্মাত তাখায্তুমুল ই'জলা মিম বা'দিহি ওয়া আনতুম জালিমু-ন।
৯৩. ওয়া ইয আখাযনা- মি-ছা-ক্বাকুম ওয়া রাফা'না- ফাওক্বাকুমুত্ তু-রা; খুযু- মা- আ-তাইনা-কুম বিক্বুয়্যাতিওঁ ওয়াছমাউ'; ক্বা-লু ছামি'না- ওয়া আ'ছাইনা-; ওয়া উশরিবু- ফি ক্বুলু-বিহিমুল ই'জলা বিকুফরিহিম; ক্বুল বি'ছামা- ইয়া'মুরুকুম বিহি- ঈমা-নুকুম ইন কুনতুম মু'মিনীন।

৯৪. ক্বুল ইন কা-নাত লাকুমুদ দ্বা-রুল আ-খিরাতু ই'নদাল্লা-হি খা-লিছাতাম্ মিন দু-নিন্না-ছি ফাতামান্নাউল মাওতা ইন কুনতুম সাদিকি্ব-ন।
৯৫. ওয়া লাইঁয়্যা তামান্নাওহু আবাদাম বিমা- ক্বাদ্দামাত আইদি-হিম ওয়াল্লা-হু আ'লি-মুম বিজ্বা-লিমি-না। (সুরা বাকারা : আয়াত ৯২-৯৫)

অনুবাদ : ৯২. তোমাদের কাছে তো নবী মুসা এসেছিলেন সুস্পষ্ট নিদর্শন সহকারে। অতঃপর তার (কয়েক দিনের অনুপস্থিতিতে) তোমরা একটি গরুর বাচ্চাকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিলে। কত জালেম ছিলে তোমরা!
৯৩. যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করে ছিলাম তুর পাহাড়কে তোমাদের মাথার ওপর তুলে ধরে। (আমি বলেছিলাম) যা কিছু বিধিবিধান আমি তোমাদের দিয়েছি, তা শক্ত করে আঁকড়ে ধরো এবং আমার বিধান শোনো। তারা বলল, হ্যাঁ, আমরা তোমার কথা শুনেছি, কিন্তু বাস্তব জীবনে তারা তা অমান্য করল। তাদের কুফরির কারণে তাদের অন্তঃকরণে মিশে গিয়েছিল সেই গরুর বাচ্চা। আপনি বলুন যদি তোমরা সত্যিই মুমিন হও, তবে বলতে পারো এটা কত খারাপ ইমান!
৯৪. হে নবী! আপনি বলুন, যদি তোমরা মনে করো পরকালের নিবাস শুধু তোমাদের জন্য অন্য কারো জন্য নয়, তবে তোমরা মৃত্যু কামনা করো তো দেখি, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।
৯৫. এরা নিজেরা যা অর্জন করেছে তার পরিণাম জানার পর তারা কখনোই তা করবে না, আল্লাহ জালেমদের ভালো করেই জানেন।

ব্যাখ্যা : মদিনাচুক্তি ভঙ্গ করে মক্কার মুশরিক কোরাইশদের সঙ্গে বনি ইসরাইলদের গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়া এবং গোপনে মদিনা আক্রমণ করে মুসলমানদের ধ্বংস করে ফেলার ষড়যন্ত্র যখন ফাঁস হয়ে যায় তখন তাদের সঙ্গে চুক্তি ভেঙে যায় এবং বিচারে ইহুদিদের কঠিন শাস্তি হয়। বনি কোরায়জা গোত্রের নেতৃস্থানীয় অনেক ইহুদিকে বিচার করে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং বনি নজির গোত্রের ইহুদিদের দেশান্তরিত করা হয়। এ রকম চুক্তিভঙ্গ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়া এবং এর শাস্তিদানের প্রেক্ষাপটেই এ আয়াতগুলো নাজিল হয়েছে। গুরুর বাচ্চা বা বাছুরের মূর্তি পূজার ঘটনাটি এখানে তৃতীয় বারের মতো পুনরুল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনাটি একেক জায়গায় উল্লেখের প্রসঙ্গ ভিন্ন। সংগত কারণেই এ পুনরুল্লেখ। ইহুদি জাতি দীর্ঘস্থায়ীভাবে মূর্তি পূজারি নয়। তাদের বিভ্রান্তি, ঔদ্ধত্যপনা ও কুফরির ধরন ভিন্ন; তবে মদিনায় আল্লাহর রাসুলের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের মূল কারণ ছিল মক্কার মূর্তি পূজারি কোরাইশদের সঙ্গে ইহুদিদের নতুন সখ্য ও তাদের পক্ষ হয়ে রাসুলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এ পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তারা বাছুর পূজা করে যে ঔদ্ধত্যের পরিচয় দিয়েছিল সে কথা এখানে আবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ইহুদিদের আরেকটা বড় ঔদ্ধত্য হলো, তারা বিশ্বাস করে তারাই একমাত্র আল্লাহর প্রিয় বান্দা। আল্লাহ তাদের বংশেই সর্বাধিক নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন এবং পরকালের সুখশান্তি তাদের জন্যই। তাদের এসব বিশ্বাস যে ভ্রান্ত, এ কথা জানিয়ে দিয়েই আল্লাহ তায়ালা উপরোক্ত আয়াতে তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। ইহুদিদের মিথ্যা অহমিকা দূর করে সত্যের পথে আসার পথ উন্মুক্ত করার জন্য এ আয়াতগুলো নাজিল করা হয়েছে। উপরোক্ত আয়াতে ইহুদিদের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে মৃত্যু কামনার কথা বলা হয়েছে। আসলে মৃত্যু কামনার কথা বলা এখানে লক্ষ্য নয়, আল্লাহ মৃত্যু কামনা পছন্দ করেন না। এখানে লক্ষ্য ইহজাগতিক লালসাকে চ্যালেঞ্জ করা। ইহুদিরা মুখে মুখে পরকালের কথা বললেও ইহজাগতিক জীবনের লালসা তাদের প্রকট।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.