হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা চলতে দেওয়া যায় না- চিকিৎসক লাঞ্ছিত, পরিণামে ধর্মঘট

দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায়ই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সামান্য ঘটনার জেরে কোনো রোগীর আত্মীয়স্বজন ক্ষিপ্ত হয়ে চিকিৎসকদের মারপিট করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় হাসপাতালে শুরু হয় চিকিৎসক ধর্মঘট। অবশ্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে রোগীর সহচরেরা লাঞ্ছিতের পর যে ধর্মঘট


শুরু হয়, তাতে কারও মৃত্যু হয়নি। তবে হাসপাতালের রোগীদের ১০-১২ ঘণ্টা চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় আতঙ্কে থাকতে হয়েছে।
হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা হয়। সেখানে রোগীর অনুরাগীরা কেন জোর করে ঢুকে চিকিৎসায় বাধার সৃষ্টি করবে? চিকিৎসকেরা তা মেনে নিতে পারেন না। হাসপাতালে তাঁদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বের কোনো দেশেই হাসপাতালে কেউ গোলযোগ করতে পারে না। নির্দিষ্ট সময়ের পর রোগীর স্বজনদের বিশেষ অনুমতি ছাড়া ভেতরে থাকতে দেওয়া হয় না। আমাদের দেশেও একই নিয়ম। শুধু তা-ই নয়, হাসপাতালের বাইরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে লেখা থাকে, ‘গাড়ির ভেঁপু বাজানো নিষেধ, সামনে হাসপাতাল’। এ রকম বিজ্ঞপ্তির তাৎপর্য না বোঝার কারণ নেই।
চট্টগ্রাম মেডিকেলে শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার ও শাস্তি হতে হবে। একই সঙ্গে এটাও স্বীকার করতে হবে, চিকিৎসকেরা কোনো অবস্থাতেই ধর্মঘট করতে পারেন না। চিকিৎসকের ওপর রোগীর বাঁচা-মরা নির্ভর করে। চট্টগ্রাম মেডিকেলে ওই দিন জরুরি বিভাগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এটা বড় ধরনের অন্যায়।
গতকাল সকাল থেকে চিকিৎসকেরা কাজে যোগ দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রেখেও লাঞ্ছনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া যেত। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বিচক্ষণ হলে ঘটনা এত দূর গড়াত না। তাও মন্দের ভালো যে ধর্মঘটের জন্য রোগীদের চরম মূল্য দিতে হয়নি।
সরকার ও কর্তৃপক্ষের একটি নৈতিক অবস্থান নেওয়া উচিত। কোনো হাসপাতালে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা বা এর পরিণামে এক মুহূর্তও ধর্মঘট চলতে দেওয়া হবে না—এ রকম একটি জাতীয় সমঝোতা স্মারকপত্র গৃহীত হওয়া দরকার। ওই পত্রে স্বাক্ষর করবেন চিকিৎসক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। রোগীদের প্রতি সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ও চিকিৎসকদের একটি অঙ্গীকার থাকা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.