বিশ্লেষণ- শিগগিরই ইরানে হামলা চালাতে চায় ইসরায়েল!

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সহায়তা ছাড়াই ইসরায়েল ঘোর-শত্রু ইরানে আক্রমণ চালাতে পারে বলে অনেক দিন ধরেই জল্পনা-কল্পনা চলছে। তবে গত সপ্তাহে গণমাধ্যমে একটি তথ্য ফাঁস হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইরান নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক বাতিল করেন। ওই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, হামলা করে ইরানকে কি চমকে দিতে সক্ষম ইসরায়েল?
এর উত্তর সম্ভবত ‘না’। আক্রমণ চালানো হবে কি না, হলেও তার সময় নির্ধারণ নিয়ে ইসরায়েলের বছরের পর বছর সময়ক্ষেপণের সুযোগে ইরান নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে। তেহরান পারমাণবিক প্রকল্পগুলো সুরক্ষিত করার এবং ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলার জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে যথেষ্ট সময় পেয়েছে। তার ওপর রয়েছে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দূরত্ব নিয়ে মাথাব্যথা। ইসরায়েলের জঙ্গিবিমানকে ইরানে পৌঁছাতে এবং হামলা শেষে ফিরে আসতে বেশ বেগ পেতে হবে। এ ছাড়া বিমানগুলোর বোমা বহনে সীমাবদ্ধ ক্ষমতাসহ বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়াই ইরানে হামলা করলে তার পরিণতি নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে।
এর পরও ইরানে ইসরায়েলের একতরফা হামলার আশঙ্কা এখনই উড়িয়ে দিতে নারাজ বিশ্লেষকেরা। অনেকের বিশ্বাস, এত সব জটিলতা সত্ত্বেও হামলা চালিয়ে ইরানকে সামান্য হলেও চমকে দেওয়ার সক্ষমতা ইসরায়েলের রয়েছে। ইরান সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকলেও স্টিলথ প্রযুক্তিসহ যেসব অপরীক্ষিত অস্ত্র ইসরায়েলের রয়েছে, তা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সাফল্যের ব্যাপারে জেরুজালেমকে আশান্বিত করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ওয়াল্টার বোয়েন বলেন, ‘চমক দেখানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে আমি মনে করি, প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেদ করার ক্ষেত্রে ইসরায়েলিরা তাদের প্রযুক্তিগত সামর্থ্যের সুফল ভোগ করতে পারবে।’ তাঁর অনুমান, ইসরায়েলিরা বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল ও নৌ-ইউনিট থেকেও আক্রমণ চালাতে সক্ষম। এই তথ্যের সঙ্গে একমত যুক্তরাজ্যের রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি সানঢার্স্ট-এর ওয়ার স্টাডিস বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক লিনেট নুসবাচারও। তিনি ইঙ্গিত দেন, আক্রমণ শুরুর পর সাইবার হামলা চালিয়ে ইরানকে অন্ধ বানিয়ে রাখতে পারে ইসরায়েল। দীর্ঘ প্রস্তুতির সুযোগ পাওয়ার কারণে ইরানের পক্ষে আঘাতটা দীর্ঘমেয়াদি হবে না—এমন ভাবার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ইসরায়েল প্রয়োজনবোধে কৌশলগত পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে তেহরানের দাবি, তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। এটা কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসাকাজে ব্যবহারের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এখনো আলোচনার মাধ্যমে ইরান সমস্যা সমাধানের পক্ষে। তবে নেতানিয়াহুসহ অন্য ইসরায়েলি নেতারা পরিষ্কার করে দিয়েছেন, শিগগিরই তাঁরা শক্তি প্রয়োগ করতে পারেন।
ইরানে হামলার জন্য নেতানিয়াহুকে তাঁর নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিতে হবে। গত সপ্তাহে একটি পত্রিকার খবরে বলা হয়, ইরান সম্পর্কে এই মন্ত্রিসভার সদস্যদের কাছে সাংঘর্ষিক কিছু গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমে বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় নেতানিয়াহু ক্ষুব্ধ হন। রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.