আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা জোয়ার-ভাটার সঙ্গে মিলিয়ে ঠিক করেন দিনের কার্যক্রম -জীবন চলে জোয়ার-ভাটা মেনে by মিঠুন চৌধুরী

কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চলে নয়, তাঁরা চট্টগ্রাম শহরেই থাকেন। অথচ জীবনযাপন করেন জোয়ার-ভাটা হিসাব করে। অমাবস্যা-পূর্ণিমায় জোয়ার এলে ডুবে যায় পুরো এলাকা। তাই সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে জেনে নেন জোয়ারের সময়।


জোয়ার-ভাটার সঙ্গে মিলিয়ে ঠিক করেন দিনের কার্যক্রম। জোয়ারের পানি নামলে তবেই বাসায় ফেরেন বাসিন্দারা।
নগরের আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার প্রায় ৫০ হাজার অধিবাসী এভাবেই এক দশক ধরে জীবনযাপন করছেন। প্রায় অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ময়লা পানি ডিঙিয়ে চলাচল করে। জোয়ারের পানি আসতে শুরু করলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার বেশ কিছু ভবনের নিচতলায় কোনো ভাড়াটে থাকেন না। এখানকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও হয়ে পড়েন পানিবন্দী।
আগ্রাবাদ এলাকার সামাজিক সংগঠন সোসিও কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের (আরাসকা) সদস্যরা জানান, তাঁরা বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেননি। এই সংকট থেকেও মুক্তি মেলেনি। তবে সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) মহেশখালে স্লুইস গেট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী ঈদুল আজহার পর শুরু হতে পারে কাঙ্ক্ষিত স্লুইস গেট নির্মাণের কাজ।
আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা চিকিৎসক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ছয় বছর ধরে এখানে আছি। অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে জোয়ারের সময় জেনে নিতে হয়। এই এলাকায় অতিথিরা আসতে চান না। পানি ঢুকে গাড়ি নষ্ট হওয়া নিত্যদিনের ঘটনা। ছোটখাটো দুর্ঘটনা তো প্রতিদিনই ঘটে।’
আগ্রাবাদ মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সামসুন্নেছা প্রথম আলোকে বলেন, পানি উঠছে বুঝতে পারলে ঘণ্টা খানেক আগেই কলেজ ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। কোনো কোনো দিন মধ্যরাতে কলেজে পানি ঢুকে পড়ে। পরদিন পানি পরিষ্কার করতেই সময় চলে যায়। ক্লাস আর হয় না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আবাসিক এলাকাসংলগ্ন মহেশখাল থেকেই এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। অমাবস্যা-পূর্ণিমার আগে-পরে তিন থেকে পাঁচ দিন জোয়ারের পানি ওঠে সবচেয়ে বেশি। তুলনামূলকভাবে নিচু এলাকা হওয়ায় ঢুকে পড়া পানি সহজে বের হয় না। জোয়ারের পানি নিয়ন্ত্রণে মহেশখালের ঈশান মিস্ত্রীর হাট বা নিমতলা অংশে স্লুইস গেট নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানাচ্ছেন।
আরাসকার সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, সিডিএ আবাসিক এলাকার ১ থেকে ৩৬ নম্বর সড়কের সবগুলোতেই পানি ওঠে। এখানে দুটি কলেজ, ১০টি উচ্চবিদ্যালয়, ২৪টি প্রাথমিক ও কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয় এবং অর্ধশত সরকারি-বেসরকারি অফিস আছে। নগরের প্রথম এই আবাসিক এলাকার প্রায় ৬০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দী জীবনযাপন করেন।
স্থানীয় দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ সেকান্দর বলেন, ‘ভাই আমি নিজেও পানিবন্দী থাকি।
আবিদারপাড়ায় আমার বাসার নিচতলাও জোয়ারের সময় ডুবে যায়। সঠিকভাবে খাল খনন, মহেশখালে স্লুইস গেট নির্মাণ ও নালা সংস্কার না হলে এ সংকট থেকে মুক্তি মিলবে না।’
চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, মেয়র বলেছেন অর্থ বরাদ্দ পাওয়া না গেলেও চসিকের অর্থায়নে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হবে। আগামী ঈদুল আজহার আগে নকশা তৈরির কাজ শেষ হবে। নিমতলা সেতুসংলগ্ন এলাকায় ঈদের পর স্লুইস গেট নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

No comments

Powered by Blogger.