চাঁদাবাজির প্রতিবাদে তিতাস বাস বন্ধ রেখে মহাসড়ক অবরোধ

অব্যাহত চাঁদাবাজির প্রতিবাদে তিতাস পরিবহনের শ্রমিকেরা গত মঙ্গলবার বাস বন্ধ রেখে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তাঁরা অবরোধ তুলে নিলেও চাঁদা আদায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
শ্রমিকদের অভিযোগ, প্রতিদিন তাঁদের কাছ থেকে মোট প্রায় এক লাখ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। ওই পরিমাণ চাঁদা দেওয়ার পর তাঁদের বাসপ্রতি ইজারার আড়াই হাজার টাকা জমা দিয়ে তেমন পারিশ্রমিক থাকে না। এ কারণেই তাঁরা আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকেরা সাভার থানা বাসস্ট্যান্ডে বাস রেখে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর সাভার থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে দুপুর ১২টার দিকে শ্রমিকেরা অবরোধ তুলে নেন।
সাভার থানার পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুরের ১২ নম্বর থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের চন্দ্রার মধ্যে প্রতিদিন তিতাস পরিবহনের ৬০টি বাস চলাচল করে। এসব বাস থেকে শ্রমিক ইউনিয়নের নামে নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়কের চন্দ্রায় প্রতিদিন ১২০ টাকা, আশুলিয়ার জিরানীতে ৩০ টাকা, বাইপাইলে ৫০ টাকা, নবীনগরে ১২০ টাকা, সাভার বাসস্ট্যান্ডে ১৭০ টাকা, রাজধানীর গাবতলীতে ১১০ টাকা, মিরপুর ১ নম্বরে ২৫ টাকা, মিরপুর ১০ নম্বরে ৪০ টাকা, মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বরে ২০ টাকা, মিরপুর ১২ নম্বরে ৮৫০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হয়। এই হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন ৬০টি বাস থেকে ৯২ হাজার ১০০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। মাসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।
তিতাস পরিবহনের চালক আলাউদ্দিন, হেমায়েত উদ্দিনসহ আরও অনেকে জানান, মালিকদের কাছ থেকে গাড়িপ্রতি প্রতিদিন আড়াই হাজার টাকা ইজারায় তাঁরা গাড়ি চালাচ্ছেন। ইজারার টাকা পরিশোধ করার পরেও তাঁদের কাছ থেকে জোর করে প্রতিদিন আরও এক হাজার ৫৩৫ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। ইজারার টাকা, চাঁদা ও গ্যাস বিল দিয়ে তাঁদের কোনো দিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা উদ্বৃত্ত থাকে। আবার কোনো দিন পকেট থেকে কর্মীদের বেতন দিতে হয়।
তিতাস পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাভার কার্যালয়ের যুগ্ম সম্পাদক বাবুল হোসেন অভিযোগ করেন, শ্রমিকেরা ইজারার ভিত্তিতে গাড়ি চালালেও তাঁদের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এতে মালিকেরা লাভবান হলেও ইজারাদারেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মালিকদের কাছে বারবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
তিতাস পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বকুল হোসেন চাঁদা আদায় করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অফিস, কর্মী ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য এই চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
সাভার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল বাছেদ জানান, প্রতিটি বাস থেকে প্রতিদিন এক হাজার ৫৩৫ টাকা চাঁদা নেওয়ার প্রতিবাদে শ্রমিকেরা মঙ্গলবার সড়ক অবরোধ করেন। পরে অভিযোগ দেওয়া হলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকেরা অবরোধ তুলে নেন।

No comments

Powered by Blogger.