‘জলবায়ু পরিবর্তন নগরের দরিদ্রদের জীবন দুঃসহ করে তুলছে’

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চট্টগ্রাম নগরের দরিদ্র লোকদের অবস্থা তুলে ধরতে ব্র্যাক ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ৯ সেপ্টেম্বর রোববার হোটেল সেন্টমার্টিনে একটি অংশগ্রহণমূলক সংলাপের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ১০ জন প্রতিনিধিসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংগঠন থেকে ১৮ জন, স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পেশাজীবী সমপ্রদায়ের ১২ জন এবং নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর ১০ জন প্রতিনিধি সংলাপে মতবিনিময় করেন।


সংলাপের শুরুতে ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে বলা হয়, ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির ব্রুকস ওয়ার্ল্ড পোভার্টি ইনস্টিটিউট এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ব্র্যাক ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন নগর বস্তিবাসীর জীবনকে আরও কঠিন ও দুঃসহ করে তুলছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন বস্তিতে বসবাসরত ১৫ লাখেরও বেশি বস্তিবাসীকে প্রায়শই পরিষ্কার পানি ও পয়োনিষ্কাশনের অব্যবস্থাজনিত সমস্যা এবং বন্যা ও জলাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সামনের বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি শহুরে জনগোষ্ঠীর জীবনে আরও ব্যাপকতর প্রভাব ফেলবে।
আলোচনায় বস্তিবাসী আমেনা বলেন, ‘আমরা আপনাদের ভোট এবং অবস্থান (ক্ষমতা) দিয়েছি। এখন আমরা আপনাদের কাছে ভিক্ষা চাইব না। আপনারা আমাদের অবস্থা দেখেছেন।
কাজেই আপনাদের নিজেদের সচেতনতা থেকেই আমাদের সাহায্য করার বিষয়টি ভাবতে হবে।’ কর্মশালার প্রধান অতিথি, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি বিশেষজ্ঞ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলা করতে বৈশ্বিক পরিকল্পনা এবং এ সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণভাবে তথা দেশের ভিতরের স্বল্প আয়ের লোকবসতিগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে আমরা উপেক্ষা করে গেছি।’
ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এবং এই গবেষণার মূল গবেষক ডেভিড হিউম বলেন, বাংলাদেশের নীতিমালা এবং কর্মকৌশলগুলো খাদ্য নিরাপত্তা এবং গ্রামীণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার বিষয়গুলোকেই আলোকপাত করে। কিন্তু শহুরে এলাকায় বিশেষ করে স্বল্প আয়ের লোকবসতিগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া সংক্রান্ত গবেষণা, নীতিমালা এবং বিভিন্ন কর্মকৌশলগুলো উপেক্ষিত।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানারস চিটাগাং চ্যাপটারের চেয়ারপার্সন প্রকৌশলী আলী আশরাফ চট্টগ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার বিষয়টিকে উল্লেখ করে বলেন, ‘শহুরে দরিদ্র নাগরিক শ্রেণীকে বাদ দিয়ে আমরা কোনো শহরের কথা চিন্তা করতে পারি না, কেননা তাঁরা আমাদের পরোক্ষ অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’
ওয়াটার এইডের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. খাইরুল ইসলাম বিষয়টির সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন জটিলতা এবং ইতিমধ্যে কোন ধরনের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হয়েছে তা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা ভালো অগ্রগতি অর্জন করেছি, কিন্তু আমাদের কাজ আরও দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।’
এই সংলাপের সভাপতি ও সঞ্চালক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ এম হাশেমী।

No comments

Powered by Blogger.