পাত্তা পাওয়ার অনেক উপায়

পুরো আড়াই দিন কেটে গেল, তবু অয়নের সঙ্গে ঝামেলা মোটেই মিটছে না শায়লার। এমন গোঁয়ার ছেলে, সকালে ‘গুড মর্নিং’ মেসেজটা পর্যন্ত পাঠাচ্ছে না। প্রথম দুদিন মোটেই আমল দেয়নি শায়লা। এবার আর তো সহে না বিরহ। বিশ্ববিদ্যালয়ে অয়নের ক্লাস টাইম হিসাব করে ডিপার্টমেন্টের সামনে বেশ সেজেগুজে দাঁড়িয়েছিল আজ সে। ঠিক হিসাব মতো পাখির দেখাও মিলল।

অন্যমনস্কতার ভান করে যেই না মোবাইলে চোখ দিয়েছে শায়লা, অমনি বেল্লিক ছেলে একেবারে পাশ দিয়ে না দেখার ফিকির দেখিয়ে চলে গেল। এই না হলে পুরুষ? শায়লার দিক থেকে প্রেমে সায় আসার আগে এই অয়ন দিনে কুড়ি দফা মেসেজ আর সন্ধ্যে কাটানোর জন্য লেজ তুলে পিছনে কতই না ঘুরেছে। নাহ! শায়লাও এবার দেখবে কার দেমাক বেশি।
তবু অবুঝ মনে কতক্ষণই বা থাকে এই অভিমান? রাতে ফেসবুকে সবুজ আলো নিয়েও অয়ন যখন শায়লাকে আমল না দিয়ে দেওয়াল ভরাতে লাগল, তখনই ফারজানাকে ফোন লাগায় শায়লা। কলেজ জীবনের লাভগুরু রূপসাই আইডিয়া দিল, “বেশি পাত্তা দিয়ে ফেলেছিস বুঝলি তো, এবার তোর পাত্তা পাওয়ার পালা। একদম বিন্দাস থাক আর এখনই ফেসবুকে সুন্দর ছবি আর স্টেটাস আপলোড করে ফেল। ছেলেদের লম্বা কমেন্ট পড়লেই দেখবি পাখি সুড়সুড় করে খাঁচায় ধরা দেবে।”

শায়লার পুরোন ফাটাফাটি ছবিতে ৪৫টি কমেন্ট আর লাইকের বন্যার পর রাতে অয়নের ফোন এসেছিল বলে শোনা যায়।

অন্য ভুক্তভুগীরা জানাচ্ছেন, এখানে পাত্তার মাধ্যম ফেসবুক যেমন, তেমনই আরও নানান ছলছুতো আছে বইকি। কিন্তু জীবনে অক্সিজেনের মতো প্রেম নিয়ে বাঁচার সঙ্গেই পাত্তা নামক ইচ্ছের সুড়সুড়িও প্রবল। আর তার উপায়ও কম কিছু নেই।

নারী-পুরুষের আজন্মলালিত দ্বন্দ্ব তো আর মিটবে না কিছুতে। এখানেও তাই ঝামেলা বেঁধেছে। পুরুষদের দাবি, মেয়েরাই পাত্তা পাওয়ার জন্য লাফালাফি করে থাকে। অন্যদিকে মেয়েদের দাবি হলো, পুরুষাই জিভ বের করে থাকে মেয়েদের পাত্তা দেওয়ার জন্য। মোট কথা, ফ্রয়েড সাহেব সাফ জানিয়েছেন, অন্যের কাছে নিজের গুরুত্ব স্থাপনের দাবি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার। সেক্ষেত্রে কোচিং ক্লাসে স্যারের কাছে বেশি পাত্তা বা ক্যান্টিনের আড্ডায় বন্ধুদের মধ্যমণি হয়ে পাত্তা পাওয়ার ইচ্ছে অল্প-বিস্তর সবার মনেই থাকে।

আর তা বজায় রাখতেই নানা পথাবলম্বন আর কী! এমনকী, বাড়ির পোষা কুকুর-বেড়াল পর্যন্ত মনিবের নজরে থাকার পাত্তা পেতে মনজোগান হাবভাব করে থাকে বলে জানাচ্ছেন পশুবিশেষজ্ঞরা। চারপেয়েদের কথা থাক। আপাত বিন্দাস ডোন্ট-কেয়ার ইয়ং বং কিন্তু দিতে না চাক, পাত্তা পেতে একেবারে এক পা বাড়িয়েই থাকে।

এ নিয়ে হাসতে হাসতে এক বন্ধু জানাচ্ছিল, “এটা বেশ ইন্টারেস্টিং। আমরা পাশের লোকটাকে বিন্দুমাত্র স্পেস দিই না। ভাব দেখাই যেন তোমাকে ছাড়াই আমার বেশ চলবে। অথচ সে এরকম কিছু প্রকাশ করলেই আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। পাত্তা বেসিক্যালি অন্যের কাছে নিজের ইমপর্ট্যান্স। আমরা সবাই অ্যাটেনশন সিকার। তাই সেটা একটু টাল খেলেই আমরা হাঁউমাঁউ করি। মেয়ে হিসেবে স্কুল-কলেজ-কোচিং-অফিসে চিরকাল পুরুষের কাছে পাত্তা পেয়ে এসেছি। এনজয়ও করেছি।” কিন্তু  সমস্যা বাঁধে মাঝপথে আটকে গেলে। মনে রাখবেন পাত্তার লিস্ট থেকে সরে যাওয়াকে ইগনোর করা মানেই কিন্তু আস্তে আস্তে নিজেকে সেই মানুষের কাছে বিলুপ্তির পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।

আসলে সময় পাল্টেছে। নিজেরটা নিজেকে খুঁটে খেতে হবে। পাত্তা না দিলে নিজেকেই আদায় করে নিতে হবে। আর মাধ্যম তো হাতের নাগালে। চোখে পড়ার ফিকির হিসেবে ফেসবুকের ফোটো-দেওয়াল লিখন তো আছেই। আর আছে নিজেকে খানিক মাজাঘষার প্রয়াস। প্রতিদিন রদ্দি জিনস আর টপের ফ্যাশন ছেড়ে হঠাৎ হালকা কাজল আর কুর্তির কম্বো দেখে বয়ফ্রেন্ড পাত্তা দিতে বাধ্য। আর হ্যাঁ, আপনারাও বাসি দাড়ি ছেঁটে খানিক মানুষ সাজলে প্রেমিকার বাবারও মন গলবে ফর আ চেঞ্জ।

পাশাপাশি পাত্তা পাওয়ার আর এক উপায় হলো পাত্তা না দেওয়া। আপনার ডোন্ট কেয়ার অন্য লোককেও একই রকম বিছুটির ছেঁকা দিয়ে মন টানবে বইকি। তবে হ্যাঁ, পাত্তা পেতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না। আর যেসব পুরুষ এখনও দাঁত বের করে আছেন তাদের বলি, প্রেমের নামে পাত্তা দিতে বা পেতে চাঁদ এনে দেয়ার দেয়ার প্রমিস করবেন না প্লিজ। সূত্র: ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.