রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও আলোচনা-একসঙ্গে ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের চার মন্ত্রী by মেহেদী হাসান

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং এ নিয়ে আলোচনার জন্য চলতি সপ্তাহে একসঙ্গে ঢাকা সফরে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের চার উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁরা হলেন- যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ব্যুরোর মুখ্য উপসহকারীমন্ত্রী জোসেফ উন; জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন ব্যুরোর উপসহকারীমন্ত্রী কেলি ক্লিমেন্টস; দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া ব্যুরোর উপসহকারীমন্ত্রী আলিসা আয়ার্স এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম ব্যুরোর উপসহকারীমন্ত্রী ড্যানিয়েল বায়ের।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক গতকাল শনিবার সকালে কালের কণ্ঠকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের চার উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে দুজন ঢাকায় আলোচনা শেষে বাংলাদেশ ছাড়বেন। অন্য দুজনের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে সেখান থেকে মিয়ানমারে যাওয়ার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট অন্য এক সূত্র জানিয়েছে, আগামীকাল সোমবার রাতে বা মঙ্গলবার সকালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চার উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকায় পৌঁছার কথা রয়েছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করে এমন মন্ত্রণালয়গুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁরা মঙ্গলবার থেকে বৈঠক শুরু করবেন।
এ সফরের সঙ্গে ঢাকায় জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) কার্যালয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে- এই তথ্যের ভিত্তিতে যোগাযোগ করা হলে ঢাকায় ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র জিং সং কালের কণ্ঠকে জানান, আগামী সপ্তাহগুলোতে ইউএনএইচসিআরের উচ্চপর্যায়ের কোনো প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল সফর সম্পর্কেও তিনি কিছু জানাননি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সফরে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় কোন কোন বিষয় গুরুত্ব পাবে- এ প্রশ্নের উত্তরে সূত্রগুলো জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যে রোহিঙ্গা সমস্যাকে মিয়ানমারের সমস্যা মনে করে সেটি বাংলাদেশের কাছে আবারও তুলে ধরা হতে পারে। তবে ওই সমস্যা সমাধানের আগে বাংলাদেশ যাতে এ দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত না পাঠায় এবং মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য যাতে সীমান্ত খুলে দেওয়া হয় সে জন্য সরকারকে অনুরোধ জানানো হতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার সমপ্রতি রোহিঙ্গা-সংশ্লিষ্ট তিনটি বেসরকারি সংস্থাকে (এনজিও) কাজ বন্ধের যে নির্দেশ দিয়েছে, সে ব্যাপারেও আলোচনা হতে পারে।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের উসকে দেওয়া ও অনুমতি ছাড়া কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে বাংলাদেশ সরকার দুই মাস আগে ডক্টরস উইদাউট বর্ডার, মুসলিম এইড, অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার নামে তিনটি এনজিওকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়। এরপর ইউএনএইচসিআর, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশ সরকারকে ওই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানায়। এ ছাড়া গত মে মাসের শেষ দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউএনএইচসিআরসহ প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলো আশ্রয়প্রার্থী মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানায়। তবে বাংলাদেশ জোর দিয়ে জানায়, নতুন করে শরণার্থী নেওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশে ২৯ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর পাশাপাশি প্রায় পাঁচ লাখ অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা অবস্থান করছে বলে ধারণা করা হয়।
সমপ্রতি মিয়ানমার থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া না হলেও সীমান্তে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়নি। খাবার, চিকিৎসাসেবা ও জ্বালানি তেল দিয়ে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ঢাকায় ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র জিং সং গত শুক্রবার দুপুরে কালের কণ্ঠকে জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়নি। সেখানে নিরাপদ আশ্রয়সহ আরো অনেক বিষয়ের ঘাটতি রয়েছে।
জিং সং বলেন, 'রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের প্রবেশের জন্য সীমান্ত খুলে দিতে ইউএনএইচসিআর অব্যাহতভাবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে।'
ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গাদের নিয়ে বর্তমানে কী কাজ করছে জানতে চাইলে জিং সং বলেন, শরণার্থী শিবিরগুলোতে ইউএনএইচসিআরের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে।

No comments

Powered by Blogger.