এক শর্তে আটকে আছে বিশ্বব্যাংককে চিঠি পাঠানো- মসিউরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই, প্রভাব মুক্ত রাখতেই বিশ্বব্যাংক শর্ত দিয়েছে by হামিদ-উজ-জামান মামুন

পদ্মা সেতুতে দাতাদের অর্থায়নে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতাই কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের শর্তপূরণ করলেই সব কিছুই আবার আগের মতে হবে এমনটিই জানিয়েছে সংস্থাটির বাংলাদেশ অফিসের একাধিক সূত্র। বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের পদত্যাগ নয় তাকে ছুটিতে পাঠালেও টাকা দিতে রাজি রয়েছে


বিশ্বব্যাংক। তিনি তাঁর পদ থেকে সরে না যাওয়ায় গত সপ্তাহের মতো চলতি সপ্তাহেও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের সমঝোতার বিষয়ে ফলাফল শূন্য হতে পারে। এমনটিই আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও চীন সফরে যাওয়ার আগে সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা দিতে পারেননি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে। পাশাপাশি পূর্বের কথামতো সাংবাদিকদেরও পরিষ্কার করে কোন কিছুই বলতে পারেননি। শুধু বলেছেন আগামী ২১ তারিখ পর্যন্ত জাইকা ও এডিবি লাইফ লাইন দিয়েছে। আমি আশাবাদী পদ্মা সেতুর বিষয়ে একটি সুষ্ঠু সমাধান হবে। তখন এ বিষয়ে বলব। এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন বিশ্বব্যাংক কারও পদত্যাগ চায়নি। চেয়েছিল তারা যাতে এ প্রকল্পে সম্পৃক্ত না থাকে। সেজন্য ছুটির শর্ত দিয়েছিল, পদত্যাগ নয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ড. মসিউর রহমানের বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির কোন অভিযোগ দাখিল করেনি বিশ্বব্যাংক। কিন্তু যেহেতু প্রকল্পের শুরুতেই দুর্নীতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে তাই প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন এবং প্রভাবমুক্ত তদন্তের স্বার্থেই তাকে ছুটিতে পাঠনোর শর্ত দিয়েছিল সর্বোচ্চ ঋণদাতা এ সংস্থাটি। অন্যসব শর্ত পূরণ করা হলেও এই একটি মাত্র শর্ত পূরণে গড়িমসি করছে সরকার। তাছাড়া শুরু থেকেই সঠিক সময়ে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতায় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব ও ভুল বোঝাবুঝি বাড়ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পদত্যাগ বিষয়ে শুরু থেকেই মসিউর রহমান যে কথা বলে আসছে এমনকি ভারত সফর শেষে ফিরে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়। তার সর্বশেষ বক্তব্য হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ দিতে পারলে পদত্যাগ করব। আগেও বলেছি পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক টাকা দিলে আমি একবার নয় দশবার পদত্যাগ করতে পারি। গত শুক্রবার ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গহওর রিজভী ওয়াশিংটন সফর করেন। এ সময় বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে তাকে নিশ্চিত করা হয়েছে শর্ত পূরণ হলেই বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে রাজি রয়েছে। সেক্ষেত্রে অর্থ উপদেষ্টার এ বক্তব্যের সঙ্গে মিলছে না। তাছাড়া জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশ লবিং করেছিল তাদের কাছ থেকেও সরকার এমনই সিগন্যাল পেয়েছে।
ড. মসিউর রহমানের ছুটিতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্বব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠানোর পুরো প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এখন চলছে শুধু অপেক্ষার পালা।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় এ সেতুতে অর্থায়নকারী অপর দুই দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নও নতুন করে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। কেননা জাইকার চতুর্থবারের মতো বর্ধিত ঋণ কার্যকারিতার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর। এক্ষেত্রে সরকারের হাতে আর সময় রয়েছে জাইকার ক্ষেত্রে মাত্র ১১ দিন। পাশাপাশি এডিবির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩০ সেপ্টেম্বর। সেক্ষেত্রে সময় রয়েছে মাত্র ২০ দিন। এর মধ্যেই যে কোন একটি সিদ্ধান্তে আসতে না পারলে আশার আলো একবারেই নিভে যেতে পারে বলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
এদিকে রবিবার রাতে দশ দিনের সফরে বিদেশে গেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। চীনের তিয়ানজিনে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিকসভায় যোগ দেবেন তিনি। ১১ থেকে ১৩ সেপ্টম্বর পর্যন্ত এ সভা চলবে। বৈঠকে অংশ নেয়ার পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী পদ্মা সেতুর বিষয়টি নিয়েও বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। ওই সভায় বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশ নেবেন। সুযোগমতো অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিনিধির সঙ্গে পদ্মা সেতু নিয়ে বৈঠক করতে পারেন।
গত বছরের সেপ্টেম্ব^রে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর চারটি শর্ত সরকারকে দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। তা পালন হয়নি বলে অভিযোগ জানিয়ে গত ২৯ জুন পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বাতিল করে দেয়। এর ফলে দেশের সবচেয়ে বড় নির্মাণ প্রকল্প পদ্মা সেতুতে দাতাদের অর্থায়ন অনিশ্চিত হয়ে যায়। এরপর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলেও অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের চারটি শর্তের মধ্যে শেষ শর্ত পূরণের আর একটি মাত্র ধাপ বাকি রয়েছে। আর তা হচ্ছে মসিউর রহমানের ছুটিতে যাওয়া। এ বিষয়ে মসিউর রহমান পদত্যাগ করছেন এমন কথা জোরেশোরেই শোনা গেলেও ভারত সফর থেকে ফিরে তাঁর বক্তব্যে সে ধরনের কোন আভাস না থাকায় শেষপর্যন্ত দাতাদের অর্থায়নের বিষয়টি আবারও নতুন করে অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

No comments

Powered by Blogger.