সোনালী ব্যাংকে নিজস্ব বিধানও লঙ্ঘিত-পর্ষদে সর্বনিম্ন সদস্যসংখ্যা নেই by শেখ শাফায়াত হোসেন

সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এ মুহূর্তে সর্বনিম্ন সদস্যসংখ্যাও নেই। ব্যাংকটির সংঘস্মারক (মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন) অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বাদে কমপক্ষে সাতজন সদস্য থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছেন এমডিসহ ছয়জন।


গত শনিবার একসঙ্গে পাঁচ সদস্যের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বর্তমানে ব্যাংকটির পর্ষদ সদস্যের সংখ্যা সংঘস্মারকে উল্লেখিত সর্বনিম্ন সংখ্যারও নিচে নেমে গেছে। ফলে এই পরিচালনা পর্ষদ কোনো সভা করতে পারবে কি না বা তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কি না; নিলেও সেটা বৈধ হবে কি না- সেসব প্রশ্ন উঠেছে। তবে এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যাংক বিশেষজ্ঞরা পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারেননি।
লিমিটেড কম্পানিতে রূপান্তরের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের যে সংঘস্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, তার ৯৫ ধারা অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদে এমডি ছাড়াই সর্বনিম্ন সাতজন এবং সর্বোচ্চ ১৩ জন্য সদস্য নিয়োগের বিধান রয়েছে। কিন্তু গত ৮ সেপ্টেম্বর শনিবার একসঙ্গে ব্যাংকটির ১১ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের পাঁচজন সদস্যের মেয়াদ শেষ হওয়ায় শূন্যতা তৈরি হয়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সোনালী ব্যাংক পর্ষদের চেয়ারম্যান ও একজন পরিচালককে পুনর্নিয়োগ দিলেও সংঘস্মারকের শর্ত পূরণ হয়নি। আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও দেশে না থাকায় সহসা এই শূন্যতা পূরণের কোনো সুযোগও নেই বলে জানা গেছে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির যে পাঁচ পরিচালকের মেয়াদ শেষ হয়েছে তাঁরা হলেন : কে এম জামান রোমেল, কাশেম হুমায়ুন, সাইমুম সরওয়ার কমল, সত্যেন্দ্রনাথ ভক্ত ও জান্নাত আরা হেনরী। পর্ষদের বাকি ছয় সদস্য হলেন : চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত (পদাধিকারবলে), সুভাষ চন্দ্র সিংহ রায়, মো. সহিদ উল্লা মিয়া, এ এস এম নাঈম ও মো. আনোয়ার শহীদ। এই ছয়জনের মধ্যে আবার সুভাষ সিংহ রায়ের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগের ভার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওপর ন্যস্ত। সূত্রে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত রবিবার চীনে গেছেন। তিনি দেশে ফিরবেন ১৯ সেপ্টেম্বর। ওই বিভাগের সচিব মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারীও এখন লন্ডনে রয়েছেন। তাঁর দেশে ফেরার কথা ১২ সেপ্টেম্বর। জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী দেশে আসার পর সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পুনর্নিয়োগ বা নিয়োগ দুটিরই সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন যুগ্ম সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সংঘস্মারকে এমডি বাদে যে সর্বনিম্ন সাতজন সদস্যের কথা বলা আছে, সে বিষয়টি আমাদের নজরেও এসেছে। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যাংক কম্পানি আইনের বিধান অগ্রাধিকার পাবে। এ আইনে পরিচালনা পর্ষদের সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা সম্পর্কে কিছুই বলা নেই। তাই সোনালী ব্যাংকের বর্তমান অসম্পূর্ণ পরিচালনা পর্ষদ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধা থাকছেই। তবে অর্থমন্ত্রী দেশে ফেরার পর পূর্ণাঙ্গ পর্ষদ গঠন করা হবে।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পর্ষদের পাঁচজন সদস্যের মেয়াদ একবারে শেষ হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। শিগগিরই হয়তো প্রয়োজনীয়সংখ্যক সদস্য নিয়োগ দেবে সরকার।'

No comments

Powered by Blogger.