সংলাপ নিয়ে তৎপর বিদেশি কূটনীতিকরা by মেহেদী হাসান

আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা হওয়ার বা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে দেশে যাতে কোনো রকম সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সে চেষ্টায় দূতিয়ালি করে যাচ্ছেন ঢাকায় কূটনৈতিক মিশনগুলোর দূতরা। বিশেষ করে সংঘাতময় বা মুখোমুখি অবস্থানের মতো কর্মসূচি না দিতে প্রধান বিরোধী দলসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ জানাচ্ছেন তাঁরা।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিদেশি কূটনীতিক কালের কণ্ঠকে জানান, সম্প্রতি ঢাকার প্রভাবশালী দূতাবাসগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের দেশের সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই আলোচনাগুলোর মূল বার্তা ছিল একটিই, আর তা হলো সংঘাতময় কোনো কর্মসূচি না দেওয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে 'এক-এগারো' সৃষ্টি হয়েছিল এবং এক-এগারোর কুশীলবরা তাঁদের পদক্ষেপকে যৌক্তিক প্রমাণ করতে যে পরিস্থিতির উদাহরণ টানেন, তা যেন আর না আসে, সে জন্যই রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কর্মসূচি ঘোষণার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের কর্মসূচি ঘোষণার আগেই কূটনীতিকদের ওই পরামর্শ শীর্ষ নেতাদের কাছে পৌঁছেছে। সম্প্রতি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তা কঠোর নয় বলে আলোচিত হচ্ছে।
এদিকে আগামী নির্বাচনের ফর্মুলা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের ব্যাপারেও কূটনৈতিক প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শীর্ষ পর্যায়ের কূটনীতিক চলমান অবস্থার সঙ্গে কয়েক বছর আগে ঢাকায় তাঁর দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতার তুলনা করতে গিয়ে বলেন, 'পরিস্থিতি বদলায়নি। এ দেশের নেতারা আগেও পরস্পরের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতেন না, এখনো বলেন না। অথচ পরস্পরের মধ্যে কথাবার্তা হলে ব্যবধান কমে আসতে বাধ্য। এতে জনগণও স্বস্তি পাবে।'
আগামী নির্বাচন কার অধীনে হবে, তা নিয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো কোনো ঐকমত্যে না পৌঁছানোর কারণে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর উদ্বেগ রয়েছে। গত ২৮ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থবিরতায় উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার, বিশেষ করে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ খুঁজে বের করার জন্য এ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সংলাপে অংশ নিতে উৎসাহিত করছে।
এ উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা চাইছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেছিলেন, 'এ ধারণা করতেই পারেন যে, ঢাকায় আমাদের দূতাবাস এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে। তবে এ ব্যাপারে বলার মতো বিস্তারিত কিছু আমার কাছে নেই।'
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে আসছেন। গত সোমবার ঢাকার বারিধারায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ডেইলি সান ও বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালেও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, 'আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হবেই।'
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, প্রভাবশালী বন্ধু রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতাকে উৎসাহিত করছে। আর এটি যাতে বিফলে না যায়, সে জন্যই সংঘাতময় বা মুখোমুখি অবস্থানের মতো কোনো কর্মসূচি না দিতে অনুরোধ জানাচ্ছে।
সূত্রগুলো আরো জানায়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ দেশের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর হলে তাঁরা এ দেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। কিন্তু এ অনিশ্চয়তার মধ্যেই যদি রাজনৈতিক দলগুলো সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে বা ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দেয়, তা নিঃসন্দেহে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দেবে। গত ৯ মে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপীয় দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা হরতালসহ ধ্বংসাত্মক রাজনীতি, দুর্নীতি, হত্যাকাণ্ড, নিখোঁজের মতো ঘটনার কারণে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি-সংকটে পড়ার কথা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। বন্ধু রাষ্ট্রগুলো চায়, বাংলাদেশ বিশেষ করে রাজনৈতিক সংকটের কারণে বিশ্বে তার নেতিবাচক ভাবমূর্তি কাটিয়ে উঠুক।

No comments

Powered by Blogger.