বরিশালে খ্রিষ্টান চার্চের সম্পত্তি বেদখল! by সাইফুর রহমান

বরিশাল নগরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত খ্রিষ্টান চার্চের দুই একর ৫৩ শতাংশ সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে গতকাল সোমবার খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কয়েক শ নারী-পুরুষ মানববন্ধন করেছেন। সকাল ১০টায় নগরের অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে বরিশাল ব্যাপ্টিস্ট চার্চের ব্যানারে ওই কর্সূচি পালন করা হয়।


পরে জেলা প্রশাসকের কাছে সঞ্চারকলিপি দেওয়া হয়। মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয়, চার্চের দুই একর ৫৩ শতাংশ সম্পত্তি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে খান সন্স গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গত শনিবার চার-পাঁচটি ট্রাকে করে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ওই সম্পত্তিতে বসবাসরত ৩৫টি খ্রিষ্টান পরিবারকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালায়। পরে তারা সেখানে একটি কাঁচাঘর নির্মাণ করে এবং ওই গ্রুপের মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড টাঙায়।
জানা গেছে, নগরের বগুরা-আলোকান্দা মৌজায় ব্যাপ্টিস্ট মতাবলম্বী খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রায় ২২ একর সম্পত্তি রয়েছে। ওই সম্পত্তির মধ্যে চার্চ, একটি বালিকা ও একটি বালক মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বাকি সম্পত্তি খ্রিষ্টান নাগরিকেরা ব্যবহার করেন। ১৯৬৯ সালে ব্রিটিশ নাগরিক গর্ডন সডি সব সম্পত্তি একটি ট্রাস্টি দলিল সম্পাদনা করে বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ অ্যাসোসিয়েশনকে ট্রাস্টি নিযুক্ত করেন। ট্রাস্টি দলিলে উল্লেখ করা হয়, এই সম্পত্তি খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে এবং কারও কাছে বেচাকেনা করা যাবে না।
কিন্তু ২০০৯ সালে ট্রাস্টি সম্পত্তির দুই একর ৫৩ শতাংশ সম্পত্তি কিনে নেওয়ার দাবি করে খান সন্স গ্রুপ। এরপর বরিশাল ব্যাপ্টিস্ট মিশন চার্চের সাধারণ সম্পাদক পরেশ বৈরাগী ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের পক্ষে পল প্রভাকর সাহা, বিভু রঞ্জন বালা, মেরী জনসন বাদী হয়ে জমির ক্রেতা ও বিক্রেতার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন।
২০১০ সালের ৩ মার্চ আদালত ওই জমির ওপর স্থগিতাদেশ দেন। এরপর ২০১২ সালে ওই সম্পত্তি যাতে কেউ দখল করতে না পারে তার জন্য নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বরিশাল প্রথম যুগ্ম জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। আদালত গত ২৩ আগস্ট ওই সম্পত্তি দখল ও হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যা এখন পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে।
মানববন্ধনে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা অভিযোগ করেন, ওই গ্রুপটি তিন শতাধিক লোক নিয়ে আদালতের নির্দেশ উপক্ষো করে শনিবার বিকেলে কলোনির বাসিন্দাদের উচ্ছেদের চেষ্টা চালায় এবং সম্পত্তির একটি অংশ দখল করে একটি কাঁচাঘর নির্মাণ ও গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়।
জানতে চাইলে খান সন্স গ্রুপের স্বত্বাধিকারী মজিবর রহমান খান দাবি করেন, তাঁরা ব্যাপ্টিস্ট মিশন সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রেভারেন্ট অসীম বাড়ৈর কাছ থেকে ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ওই সম্পত্তি আট কোটি টাকায় কিনেছেন।
খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, চার্চের পক্ষে দায়ের করা মামলায় স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও গায়ের জোরে ক্ষমতা দেখিয়ে ওই জমি দখল করা হয়েছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিদুজ্জামান বলেন, ওই সম্পত্তি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। গত শনিবার রাতে দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.