জনগণের সেবায় আরও সচেষ্ট হোন, অন্যায় করলে রেহাই নেই- সারদায় পুলিশ একাডেমীতে প্রধানমন্ত্রী

পুলিশ বাহিনীকে জনগণের সেবায় আরও সচেষ্ট ও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিভাগীয় শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যায় করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। পদমর্যাদা উন্নীতকরণের সঙ্গে সঙ্গে জনগণও যাতে উন্নত সেবা পায়,


সেদিকে পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্যকে আরো সচেষ্ট থাকতে হবে।’ দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আজ সুদৃঢ় হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আইনের শাসন।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর আমরা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে পুনর্প্রতিষ্ঠা করেছি। দেশ থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূল করেছি। দেশে আজ কোন বাংলা ভাই নেই। জনগণ নির্বিঘেœ ধর্মীয় উৎসবসহ সব ধরনের আনন্দ উৎসব উদযাপন করতে পারছে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারই মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর অবিস্মরণীয় অবদানের স্বীকৃতিসরূপ বাংলাদেশ পুলিশকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করেছে।
প্রধানমন্ত্রী রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীতে ২৯তম ব্যাচের শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপারদের মৌলিক প্রশিক্ষণের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীর পিতার হত্যাকা-ের রায় কার্যকরসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থাও এগিয়ে চলেছে। একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাতে বীর যোদ্ধাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া শহীদ পুলিশ সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওই রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পুলিশ সদস্যরা হানাদারদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।
তিনি পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন গণমুখী কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে বলেন, জনগণের সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর সম্পৃক্ততা জোরদার করার লক্ষ্যে কমিউনিটি পুলিশিং, ওপেন হাউস ডে, লিগ্যাল সার্ভিস ডেলিভারি সিস্টেম, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, ব্লাড ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ডেক্সসহ বিভিন্ন গণমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
পুলিশ বিভাগে এসআই ও সার্জেন্ট পদকে ৩য় শ্রেণীর পদ হতে দ্বিতীয় শ্রেণীতে এবং ইন্সপেক্টর পদকে দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডার পদে উন্নিত করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, পুলিশ বাহিনীকে জনগণের সেবায় আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। অন্যায় করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। বিভাগীয় শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতিগ্রহণ করা হয়েছে।
পুলিশের ঔপনিবেশিক আমলের আইন, বিধি ও কাঠামোর ব্যাপক সংস্কারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পুলিশ ফোর্সকে একটি সার্ভিসেস ফোর্সে রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের মাধ্যমে এ বাহিনী সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে অগ্রণী ভুমিকা পালন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
নতুন পুলিশ অফিসারদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আজ যে শপথ নিলেন, আশা করি আপনারা আপনাদের কর্মজীবনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে শপথের মর্যাদা রাখবেন। নারী ও শিশুর প্রতি সর্বোচ্চ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে জনগণের সেবায় নিজেদের উৎস্বর্গ করবে। জনগণের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করার আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, পুলিশের আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার বিপিএম পিপিএম এনডিসি, পুলিশ একাডেমীর প্রিন্সিপাল নাইম আহম্মেদ বিপিএম ও স্থানীয় সাংসদ শাহরিয়ার আলম।
অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী প্রশিক্ষণার্থী সহকারী পুলিশ সুপার শাকিল আহম্মেদকে বেস্ট-ইন হর্সম্যানশিপ এবং শেখ আব্দুল্লাহ বিন কালামকে বেস্ট-ইন একাডেমিক ও বেস্টম্যান পুরস্কারে ভূষিত করেন। পরে তিনি একাডেমী চত্বরে বৃক্ষরোপণ করেন।

অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর দেখা পেলেন মমেজান
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার এক মুক্তিযোদ্ধার জননী মমেজান। এখন তাঁর বয়স ১১০ বছর। তাঁর আজন্ম ইচ্ছে ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সরাসরি দেখার। সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি তাঁর। ঘাতকের দল সেই মহামানবকে হত্যা করে। এরপর থেকে তাঁর মনের মধ্যে বাসনা জন্মে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে সরাসরি দেখবেন তিনি। অবশেষে বয়সের ভারে ন্যুব্জ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখা পেলেন তিনি। কথাও বললেন সরাসরি।
রবিবার সকালে সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীতে ৩৭তম শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপারদের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে বৃদ্ধা মমেজান বঙ্গবন্ধুর কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করে মনের অতৃপ্ত বাসনা পূর্ণ করেন। প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য মমেজান রোজাও রেখেছিলেন এদিন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে দেখেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীও তাকে আঁকড়ে ধরেন। এ সময় বৃদ্ধা মমেজান প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর এক নাতির জন্য চাকরির আবদার জানান। এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন স্থানীয় সাংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম ও বাঘা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা খাতুন লতা।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত শেষে প্রতিক্রিয়া জানাতে সাংবাদিকরা মমেজানের বাড়িতে গেলে তিনি জানান, ‘আমি দীর্ঘ ৩৫-৩৭ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কারও না কারও সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। আজ সেই অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে আমার একমাত্র নাতনির জন্য একটি চাকরির কথা বলেছি।’ মমেজান বাঘার চাঁদপুর গ্রামের প্রয়াত মজিবুর রহমানের স্ত্রী। তাঁর চার ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে সাজদার রহমান বীর মুক্তিযোদ্ধা।

No comments

Powered by Blogger.