বৃত্ত আর্ট ট্রাস্টের কর্মশালা ও প্রদর্শনী- সবুজ পৃথিবীর জন্য by মোবাশ্বির আলম মজুমদার

বৃত্ত আর্ট ট্রাস্ট এ বছরের ২৯ জুলাই বাংলাদেশের ১৫ জন শিল্পী ও নেদারল্যান্ডের দুজন শিল্পকে নিয়ে শিল্পকর্মের কর্মশালা শুরু করে। চার দিনের এ কর্মশালায় আলোচনা, মতবিনিময় ও সুন্দরবন বিষয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন প্রকৃতিপ্রেমী আলোকচিত্র শিল্পী ইনাম আল হক।


এ কর্মশালা ও প্রদর্শনীতে শিল্পীরা তৈরি করেছেন বিভিন্ন মাধ্যমে গাছ, গাছের বন্দিদশা, প্লাস্টিক ও পরিত্যক্ত কৃত্রিম শিল্পকর্ম। এগুলো প্রদর্শিত হয় পদ্মা নদীর তীরঘেঁষা সবুজ অঞ্চল ঢাকার দোহারের শাইনপুকুর এলাকায়। ৫ আগস্ট প্রদর্শনীটি শুরু হয়েছে ঢাকার ‘বৃত্ত আর্ট হাবে’তে, অর্থাৎ বৃত্ত আর্ট ট্রাস্টের প্রদর্শনী কক্ষে। প্রদর্শনী ও কর্মশালা প্রসঙ্গে বৃত্তের অন্যতম ট্রাস্টি তৈয়বা বেগম বলেন, ‘শিল্পীদের করা শিল্পকর্মগুলো প্রতীকী, কিন্তু সবুজ গাছের জন্যই আমাদের এ সৃষ্টি। তাই প্রথমে শিল্পকর্মগুলো সবুজ প্রকৃতিতেই প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে চেয়েছি। এমন একটা গ্রামে আমরা যেতে চেয়েছিলাম, যেখানে প্রকৃতি আছে। শাইনপুকুর ঢাকার দোহারে। এখানে রয়েছে সবুজ মাঠ এবং এর পাশেই নদী। ১৭ জন শিল্পীর শিল্পকর্মগুলো নদীর পাড়ে, নৌকায় ও সবুজ মাঠে প্রদর্শিত হয়।’
পৃথিবীর ছয়টি দেশে এ রকম কর্মশালা ও স্থাপনাশিল্প সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষকে পরিবেশ বিষয়ে সচেতন করে বৃত্ত আর্ট ট্রাস্ট এবং সহযোগী সংগঠন আর্টস কোলাবোরেটরি ও মন্দ্রিয়ান ফাউন্ডেশন। প্রত্যেক শিল্পীর শিল্পকর্মে গাছের আকৃতি গড়েছেন; তার সঙ্গে গাছের চারা ও গাছের কৃত্রিম পাতায় কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ, রঙিন খেলনা গাড়িসহ নানা মাধ্যম যুক্ত করে এর বিপর্যয়কে তুলে ধরেছেন।
শিল্পী ইয়াসমিন জাহান একটি গাছের আকৃতি গড়েছেন পোড়া কাঠের কয়লা দিয়ে। কয়লার আকৃতি বিভিন্ন মাপের। একটি কয়লার ওপর আড়াআড়ি আরেকটি জোড়া দিয়ে তৈরি প্রতীকী গাছ আমাদের বলে দেয়, এভাবেই গাছ পুড়ে কয়লা হয় আর পুড়ছে আমাদের সবুজ। অসীম হালদার কম্পিউটারের বাতিল যন্ত্রপাতি জোড়া দিয়ে গাছের আকৃতি তৈরি করেছেন। সাদা চৌকোনা বেসের ওপর স্থাপন করা যন্ত্রবৃক্ষটি আমাদের ভবিষ্যৎ বলে দেয়। সুলেখা চৌধুরী প্লাস্টিকের রঙিন খেলনা গাড়ি একটির সঙ্গে আরেকটি জুড়ে দিয়ে গাছের আকৃতি তৈরি করেছেন। প্লাস্টিকের সামগ্রীগুলো পরিবেশ দূষণ করছে। মাটি উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলছে অপচনশীল দ্রব্যের কারণে। আমরা প্রকৃতিকে রুক্ষ করে তুলছি এভাবেই। ইমরান হোসেন ভিডিও আর্টের মাধ্যমে দেখাচ্ছেন গাছের আকৃতির ভেতর অনেক মানুষ দৌড়াচ্ছে। একবার সামনের দিকে এক মিনিট, এরপর উল্টো দিকে। এটি প্রতীকী ছুটে চলা। সবুজ নেই, আছে শুধু মানুষ। সবুজহীন রুক্ষ প্রকৃতিতে ছুটছে মানুষ। শ্যামল চন্দ্র সরকার গাছ তৈরি করেছেন পিতলের চামচ, কলসি ও থালা জুড়ে দিয়ে। পিতলের রঙে কালচে আস্তর পড়েছে। ডাচ শিল্পী মারিয়া ৩০ সেকেন্ডের ভিডিওচিত্র নির্মাণ করেছেন বাংলাদেশে এসে। মাটি ও পানির সঙ্গে ছবিতে দেখা যাচ্ছে বৃক্ষহীন ভূমি।
এ কর্মশালার আরেকজন বলিভিয়ান শিল্পী ফ্রাংক ব্রাগম্যান এখানে এসে অবাক হয়েছেন। এ শহরে কোনো সবুজ নেই। উল্লেখ করার মতো সবুজের প্রয়োজন আছে, এখানে যে পরিমাণ মানুষ বাস করে। জাতিসংঘ ধারণা করছে, ২০২৫ সালে ঢাকায় বসবাস করবে ২০ কোটি মানুষ। মেক্সিকো শহর, বেইজিং ও সাংহাই শহরের চেয়েও বেশি মানুষের শহর হবে এটি।
ঢাকা শহরে দ্রুত সবুজায়ন প্রয়োজন। স্যাটেলাইট সিটির ক্ষেত্রে যেখানে ২০ শতাংশ সবুজ গাছের উপস্থিতি প্রয়োজন, সেখানে সেটি ক্রমশ কমে গিয়ে ৭ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছেছে। ফ্রাংক তাঁর শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন শুকনো ডাল ও পাতা সুতায় ঝুলিয়ে। শিরোনাম সিংগেল ট্রি। ফ্রাংক ব্রাগম্যান এ আশা ব্যক্ত করেন বলেন, ‘যদি এর মাধ্যমে এগিয়ে যাও, ভালোভাবে বাঁচো, তাতে তোমাদের সঙ্গে আমিও ভালো থাকব।’
গ্রিন রোডের গ্রিন মার্ট ভবনের বৃত্ত আর্ট হাবেতে অনুষ্ঠিত এ প্রদর্শনী শেষ হবে ১১ আগস্ট।

No comments

Powered by Blogger.