কাদেরের যুদ্ধ প্রস্তুতি!- ০ যোগাযোগমন্ত্রীর তিন ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক- ০ চাঁদাবাজি নেই বলায় তোপের মুখে পুলিশ কর্মকর্তা- ০ ডিসিসি দক্ষিণের প্রশাসক বৈঠকে না আসায় মন্ত্রীর ক্ষোভ প্রকাশ

ঈদ উপলক্ষে সড়কপথে যাতায়াত নির্বিঘœ করতে সরকারের নেয়া পদক্ষেপকে যুদ্ধপ্রস্তুতির সঙ্গে তুলনা করেছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৃহস্পতিবার রেলভবনে এক সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যেভাবে একটি যুদ্ধপরিস্থিতি মোকাবেলা করা হয়, ঠিক সেভাবে আসন্ন ঈদে যাত্রী পরিবহন নির্বিঘœ করতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


খারাপ সড়ক নিয়মিত মেরামত করা হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী। অবশ্য ঈদ উপলক্ষে মন্ত্রীর নেয়া নানা পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সবাই। মূলত ঈদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে বৈঠকটি আহ্বান করা হয়েছিল। প্রায় তিন ঘণ্টা চলে রুদ্ধদ্বার আলোচনা। এতে তিন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা, পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিআরটিএসহ পরিবহন মালিক শ্রমিক সেক্টরের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। মহাসড়কে চাঁদাবাজি, যানজট নিরসন, ভিজিলেন্স টিম গঠন, যাত্রী নিরাপত্তা, বেহাল রাস্তা সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কের যানজট ও দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে রেকার রাখার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ঈদ নিয়ে সড়ক-মহাসড়েকে পরিবহন চাঁদাবাজি নিয়ে তুমুল বাগ্্বিত-া হয়।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে কোথাও কোন চাঁদাবাজির ঘটনা নেই। একথা বলার পর পরই পুলিশ কর্মকর্তা তোপের মুখে পড়েন। চাঁদাবাজির প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন অনেকে। পরে পুলিশের মহাপরিদর্শকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এদিকে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে বৈঠকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোঃ জিল্লার রহমানকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি না এসে প্রতিনিধি পাঠানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেন যোগাযোগমন্ত্রী। বৈঠক থেকেই বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে জানানো হয়।
সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী এলাকার রাস্তা আজ সরেজমিন দেখতে যাবেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। এদিকে গার্মেন্টস শ্রমিকদের একাধিক দিনে ছুটি দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পরিবহন নেতৃবৃন্দ।
বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তানের হানিফ ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় যানজট হচ্ছে। তাই সিটি কর্পোরেশনকে এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সিএনজিচালিত যানে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ঈদ উপলক্ষে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো ১৫ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে সুপারিশ করা হয়েছে বলেও মন্ত্রী জানান।
দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন সড়ক থেকে দ্রুত সরানোর জন্য পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বৈঠকে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে রেকার আনার দাবি জানান। এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে তাদের আশ্বাস দেন মন্ত্রী। ওবায়দুল কাদের বলেন, অনরবরত স্বপ্নের কথা শোনাব না, যাত্রীরা যাতে ভোগান্তি ছাড়া যেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগামী ঈদে যাত্রী সাধারণকে স্বস্তি দিতে পারব।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সুষ্ঠু ঈদ ব্যবস্থাপনার জন্য রাজধানীতে তিনটি ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হবে। এর মধ্যে পুলিশ, র‌্যাবসহ পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন, বিআরটিএ’র সমন্বয়ে আরেকটি টিম গঠন করা হবে। বাস, লঞ্চ ও রেলস্টেশনে এসব টিম কাজ করবে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, অপরাধীদের অপতৎপরতা রোধ, ছাদে যাত্রী পরিবহন না করা, টিকেট কালোবাজারি রোধ ইত্যাদি সার্বিক বিষয়ে দেখভাল করবে ভিজিলেন্স টিম। মহাসড়কে থাকবে মোবাইল কোর্ট। সিটি সার্ভিসগুলো মহাসড়কে যাত্রী পরিবহন করলে ব্যবস্থা নেবে মোবাইল কোর্ট। সকল সড়ক-মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটি বন্ধ করতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া টোল প্লাজার সকল বুথ সর্বক্ষণিক খোলা রাখা, বিভিন্ন ঘাটে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো, পরিবহন চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
খারাপ সড়ক প্রতিনিয়ত ঠিক করা হচ্ছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ঈদে মহাসড়কগুলোতে গাড়ি চলাচলে সমস্যা হবে না। তিনি জানান, স্থানীয়ভাবে যাতায়াত ব্যবস্থা নির্বিঘœ করতে ঢাকার আশপাশের সব জেলার প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা জানিয়েছেন, কোথাও সড়কে কোন সমস্যা নেই।
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, সমালোচনা করুন, অপপ্রচার করবেন না। সামনে কঠিন পরীক্ষা, আপনাদের সহযোগিতায় পাস করতে চাই। নৌমন্ত্রী শাজাহান খান জানান, যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘœ করতে সভায় তিনটি ‘ভিজিলেন্স টিম’ গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতুর স্থানে যানজট নিরসনে ব্যবস্থা নেয়া, সেতুতে রেকার রাখা, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করার বিষয়েও সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। সভা শেষে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামছুল হক টুকু বলেন, যাত্রীদের যাতায়াত নিরাপদ করতে সভার সিদ্ধান্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান মোঃ আইয়ুবুর রহমান খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহসহ রেল, যোগাযোগ, নৌপরিবহনের শীর্ষ কর্মকর্তা ও পরিবহন সেক্টরের নেতৃবৃন্দ বৈঠকে যোগ দেন।
সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলে। এ সময়ে সাংবাদিকদের ভেতরে ঢুকতে দেযা হয়নি। পর্যালোচনা সভা শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আজকে আমরা মূলত আত্মসমালোচনা করেছি, আত্মবিশ্লেষণ করেছি। আমাদের নিজেদের মধ্যে কোথায় ভুল-ত্রুটি আছে তা পর্যালোচনা করেছি।

No comments

Powered by Blogger.