ট্রেন-ট্রাক সংঘর্ষ, ৮ ঘণ্টা রেল চলাচল বন্ধ

আউটার সিগন্যালে ট্রেন-ট্রাকের সংঘর্ষে বগি লাইনচ্যুত হয়ে ট্রেনচালকসহ ২ জন গুরুতর আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টায় উপজেলার ফৌজদারহাট সিডিএ স্টেশন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনাপরবর্তীতে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারাদেশের ৮ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে দুপুর ১টায় সময় রেল চলাচল সচল হয়।


জানা গেছে, ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য ছেড়ে আসা নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি উপজেলার ফৌজদারহাট সিডিএ স্টেশন এলাকার কাছে একটি লেভেল ক্রসিংয়ে পৌঁছলে মালবাহী ট্রাকের সঙ্গে মারাত্মক সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনায় ট্রেনটির ইঞ্জিন ও দুটি বগি লাইনচ্যুত হলে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা, সিলেটসহ সারাদেশের সব রুটে ৮ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দূর্ঘটনায় রেলক্রসিংয়ে আটকাপড়া মালবাহী ট্রাকটি ট্রেনের ধাক্কায় স্টেশন থেকে ১শ’ হাত দূরে ছিটকে পড়ে। দুর্ঘটনায় ট্রাক ড্রাইভার, হেল্পার পালিয়ে গেলেও গুরুতরভাবে আহত হন ট্রেনচালক (এলএল) সামছুদ্দিন (৫০) ও সহকারী বেলাল (৩২)। দুর্ঘটনায় আহত ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে লাইনচ্যুত ইঞ্জিন ও ট্রেনের বগি উদ্ধার করতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ইঞ্জিনিয়ার সুকুমার ভৌমিকের নেতৃত্বে উদ্ধারকারী দুটি ট্রেন দিয়ে উদ্ধার কাজ চালানো হয়।
ট্রেন ও ট্রাকের সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে ডিভিশনাল ট্রাফিক অফিসার জাকির হোসেনকে প্রধান করে বিভাগীয় সঙ্কেত প্রকৌশলী (ডিএসটিই) সুশীল কুমার হালদার, বিভাগীয় প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আরিফ ও বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোকো) নুর মোহাম্মদ আগামী ৫ কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দ্রুতগামী ট্রাকটি ননস্টপেজ ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে ধাক্কা লাগার সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে ট্রাকটি দ্বিখ-িত হয়ে পড়ে। এদিকে, জার্মানীর তৈরি (মডেল ২৩০১) ইঞ্জিনটি ট্রাকের ধাক্কায় লাইনচ্যুত হয়ে কাত হয়ে পড়ে ডাউন লাইন ও আপ লাইন বন্ধ হয়ে যায়। ইঞ্জিনের সঙ্গে থাকা পরপর দুটি বগিও লাইনচ্যুত হয়ে দুটি লাইনের ওপর পড়ে। ট্রেনে যাত্রীর সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে ট্রাকের ধাক্কার কারণে লোকোমোটিভ মাস্টার শামসুদ্দিন মজুমদার ও সহকারী লোকোমোটিভ মাস্টার বেলাল হোসেন গুরুতর আহত হন।
ঘটনার খবর শুনে রেল কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পাহাড়তলী থেকে এ ক্লাস রিলিফ ট্রেন সকাল সোয়া ৭টায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে ট্রাকটির অংশবিশেষ সরিয়ে নেয়। সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে লাকসাম থেকে আসা রিলিফ ট্রেনটি পড়ে যাওয়া দুটি কোচ ও ইঞ্জিনকে ডাউন লাইন থেকে সরিয়ে নিলে ট্রেন চলাচলের উপযোগী হয়। কিন্তু আপ লাইনটি দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকে। বেলা ১২টা ৩৫ মিনিটে রেল কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ডাউন লাইনকে আপ লাইনের দুর্ঘটনাস্থলে ট্রেনের ৫ কিলোমিটার গতির নির্দেশনা দিলে চট্টগ্রাম-ঢাকা, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা পর রেল চলাচল স্বাভাবিক হলেও সিডিউল বিপর্যয়ের কবলে পড়ে চট্টগ্রাম-ঢাকা, চট্টগ্রাম-সিলেট ও চট্টগ্রাম-চাঁদপুরসহ তিনটি রুটের ট্রেনগুলো।

No comments

Powered by Blogger.